বি এম রাকিব হাসান, খুলনা ব্যুরো: উন্নয়নের স্বর্ণ ছোয়ায় মংলা বন্দর। আর মংলা বন্দরের উন্নয়নের মধ্য দিয়ে পিছিয়ে পড়া খুলনাঞ্চলের শিল্পায়নকে উজ্জীবীত করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভূটানের বানিজ্য মিশন সম্প্রসারণে শিগগিরি মুক্ত বানিজ্য চুক্তি হতে যাচ্ছে। আর ভূটান আমদানী রপ্তানীর ক্ষেত্রে মংলা বন্দর ব্যবহার করবে। এছাড়া শিল্প সম্ভাবনাময় খুলনা ও বাগেরহাট জেলার সমন্বয়ে অর্থনৈতিক করিডোর গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বটিয়াঘাটা ও তেরখাদাকে অর্থনৈতিক জোন হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। সব মিলিয়ে বানিজ্য প্রসারের রোডম্যাপে বৃহত্তর খুলনাঞ্চল।
সূত্রমতে, ভুটান ও বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। আর মংলা বন্দর হবে দু’দেশের আমদানি রপ্তানির সূতিকাগার। মুক্ত বানিজ্য চুক্তির আওতায় উভয় দেশ দ্বিপাক্ষিক পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্ক কমিয়ে আনবে। পাশাপামি দূরিভূত হবে অন্যান্য সমস্যাও।
এছাড়া দেশটি ট্রানজিটের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের চট্টগ্রামবন্দরও ব্যবহার হবে। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত এক বৈঠকে ১১ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য সচিব শুভাশীস বসু। অন্যদিকে ভুটান প্রতিনিধিদলের পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব দাশো ইয়েশি ওয়াংডি। ভুটান বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত কিছু সুবিধা পেলেও নতুন করে তারা আরো ১৬টি পণ্যে এ সুবিধা চেয়েছে। ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৪ কোটি মার্কিন ডলারের মত। এর বেশিরভাগই ভুটানের পক্ষে। দেশটি থেকে বাংলাদেশের বার্ষিক আমদানি সাড়ে তিন কোটি ডলারেরও বেশি। আর বাংলাদেশ রপ্তানি করে ৪০ থেকে ৫০ লাখ ডলারের পণ্য। ভুটান থেকে আমদানির পণ্যের তালিকায় বোল্ডার ও চুনা পাথর, ফেরো সিলিকন ও কমলা অন্যতম। অন্যদিকে বাংলাদেশ স্বল্প পরিমাণে কিছু তৈরি পোশাক রপ্তানি করে থাকে। চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভুটান সফরকালে ট্রানজিটের বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। এক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। এ কার্যক্রমকে দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার বিষয়েও উভয় পক্ষ একমত হয়েছে। এ লক্ষ্যে ভুটান ইতিমধ্যে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করেছে। ওই কমিটি শিগগিরই বৈঠক করবে।
অপরদিকে, শিল্প সম্ভাবনাময় খুলনা বাগেরহাট সহ ছয়টি জেলার সমন্বয়ে অর্থনৈতিক করিডোর গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এসব জেলা হবে শিল্পপণ্য উৎপাদনের কেন্দ্র। এ লক্ষ্যে প্রাথমিক জরিপকাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, করিডোরটি হলে ওই অঞ্চলের উৎপাদনশীলতা ২০৫০ সালে ১৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে পৌঁছবে, যা বর্তমানের চেয়ে তিন গুণ বেশি হবে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এ সংক্রান্ত প্রাথমিক প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে সার্বিকভাবে এ অঞ্চলে প্রায় সাড়ে তিন কোটি লোকের কর্মসংস’ান হবে, যা ওই অঞ্চলের বর্তমানের কর্মসংস’ানের চেয়ে তিন গুণের বেশি। এই অর্থনৈতিক করিডোর তৈরি করতে সড়ক, রেল, বিমানবন্দর, নৌপথসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নে আগামী ৩০ বছরে ১৪ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে হবে বলে জরিপে উঠে এসেছে।
এদিকে, পদ্মাসেতু এখন সূর্যের মত বঞ্চিত এই জনপদকে আলোকবর্তিকা ছড়ানোর অপেক্ষায় যেন অপেক্ষমান। খুলনায় দুইটি সংযোগ সড়ক (নিরালা এভিনিউ ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এভিনিউ) নির্মাণ প্রকল্পে ১২৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকার প্রকল্পটি সম্প্রতি একনেকে অনুমোদন দেয়া হয়। আর উন্নয়নের পূর্ব শর্ত মংলা বন্দর ফুলে ফলে সুশোভিত হবে এমন প্রায়সই চলছে। নেপাল ও ভুট্রান মংলা বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে রেলযোগে পন্য আমদানী ও রপ্তানী করতে পারবে। সে লক্ষ্যে শিগগিরি ভারত বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগে খুলনা-মংলা রেল লাইন নির্মান কাজ দ্রুত চলছে। অন্যদিকে দ্রুত গতিতে চলছে পদ্মা সেতুর নির্মান কাজ। খুলনার বটিয়াঘাটা ও তেরখাদার দু’টি এলাকাকে অর্থনৈতিক জোন হিসেবে ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। সে লক্ষ্যে কাজও চলছে দ্রুত। এছাড়া শেষ পর্যায়ে খুলনার আধুনিক রেলষ্টেশনের নির্মান কাজ। সমপ্রতি খুলনায় সফরকালে শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতলকে দ্রুত পূর্নতা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন স্বাস’্য মন্ত্রী। সাথে সাথে এগিয়ে চলছে ওয়াসার আড়াই হাজার কোটি টাকার কাজ। যার ফলে খুলনাঞ্চলের মানুষের ঘরে ঘরে পৌছে যাবে পানি। আর পাইপ লাইনে গ্যাস সংযোগ এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। সকল প্রস’তি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সবমিলিয়ে খুলনার ভঙ্গুর অর্থনীতি পুনর্জীবীত হচ্ছে।
এছাড়া, খুলনার বাগেরহাটে রামপাল উপজেলার ফয়লাহাটে নির্মাণাধীন খানজাহান আলী বিমান বন্দরের উন্নয়ন কাজ শেষ হলে দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মংলার উন্নয়নের পাশাপাশি ঘুরে দাঁড়াবে দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের অর্থনীতির চাকা। মংলা বন্দরসহ সারা বছরই গোটা সুন্দরবনও থাকবে দেশি বিদেশী পর্যটকে মুখরিত । পর্যটন খাতে প্রতিবছর প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে জানান এখাতের সাথে সংশ্লিষ্টরা ।