স্টাফ রিপোর্টার ও রংপুর প্রতিনিধি : রংপুরের ঠাকুরপাড়ায় হিন্দু বাড়িঘরে হামলা ও অগি্নসংযোগ বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন ও সরকার কোনো কার্যকরী ভূমিকা রাখেনি বলে অভিযোগ তুলেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। মঠ, মন্দির, প্রতিমা, বাড়িঘর ভাঙচুর এবং তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগি্নসংযোগকারীদের চিহ্নিত ও গ্রেফতার করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বাংলাদেশের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ শেষে পথসভায় সংগঠনের নেতারা এসব কথা বলেন।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদকে (সা.) কটূক্তি করার অভিযোগে রংপুরে হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন দেয়ার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। তারা হলেন- রংপুর সদর উপজেলার মমিনপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জয়নাল আবেদিন ও ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ফজলুল হক।
রংপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আহমেদ জানান, কুরশা বলরামপুর গ্রাম থেকে জয়নালকে ও মহেশপুর গ্রাম থেকে ফজলুলকে আটক করা হয়। হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা ও আগুন দেয়ার ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে এ মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হবে বলে ওসি জানান।
এদিকে রংপুরের তারাগঞ্জের ঠাকুরপাড়া গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, অগি্নসংযোগ ও টিটু রায়কে গ্রেফতার-রিমান্ডের প্রতিবাদে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের আয়োজনে মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে কালো ব্যাজ ধারণ করেন। এ সময় তারা এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তির জন্য জড়িত ব্যক্তিদের তীব্র নিন্দা জানান। মানববন্ধন শেষে তারা জাতীয় প্রেসক্লাব ও পল্টন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
বিক্ষোভ শেষে প্রতিবাদ সমাবেশে হিন্দু নেতারা বলেন, ফেসবুকে তথাকথিত ধর্ম অবমাননার অজুহাতে চট্টগ্রামের হাটহাজারী, কঙ্বাজারের রামু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরসহ সারা দেশে বিভিন্ন স্থানে হিন্দুদের ওপর আক্রমণ, অগি্নসংযোগ ও তাদের সম্পদ লুটপাট হয়েছে। এরই মধ্যে পুনরায় রংপুরের ঠাকুরপাড়ায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো। অথচ সরকার এসব নিরসনে কোনো কার্যকরী ভূমিকা রাখেনি।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বাংলাদেশের সভাপতি মনোজ কুমার ম-লের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কপিল কৃষ্ণ ম-ল, সিনিয়র সহ-সভাপতি সোমনাথ দে, সাংগঠনিক সম্পাদক লিটন কৃষ্ণ দাশ ও অ্যাডভোকেট প্রতুল কুমার ম-ল (তাপস), আন্তর্জাতিক সম্পাদক বাদল কৃষ্ণ সাহা, যুগ্ম সম্পাদক সাধন কুমার দাস ও প্রদীপ কুমার হালদার, ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক উজ্জ্বল জয়ধর (শ্রাবণ) প্রমুখ।
তারা অভিযোগ করেন, সরকার মঠ, মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর, বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগি্নসংযোগকারীদের চিহ্নিত এবং গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয়েছে। হিন্দু নির্যাতনের অপরাধীদের আজ পর্যন্ত কারো কোনো শাস্তি হয়নি। ফলে অপরাধীরা অপরাধ করতে আরও উৎসাহিত হচ্ছে। যার কারণেই বারবার একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটছে। সে কারণে হিন্দু সম্প্রদায় এখনও আতঙ্কগ্রস্ত। প্রতিদিনই নীরবে আতঙ্কিত হিন্দু সম্প্রদায় দেশ ত্যাগ করছে। মানববন্ধনে উপস্থিত বক্তাগণ মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দির-প্রতিমা ভাঙচুর, জোরপূর্বক জমি দখল-বাড়িঘরে অগি্নসংযোগ, লুটপাট, শ্লীলতাহানি ও হিন্দু নির্যাতনকে দেশ থেকে হিন্দু জনগোষ্ঠী উৎখাত করে দেশকে হিন্দুশূন্য করার কূট-কৌশল বলেও মন্তব্য করেন। মানববন্ধন ও পথসভা থেকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতারা সরকারের কাছে তিন দফা দাবিও রাখেন। দাবিগুলো হচ্ছে- ১. চট্টগ্রামের হাটহাজারী, কঙ্বাজারের রামু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর ও রংপুরের ঠাকুরপাড়ায় হামলাকারী ও অগি্নসংযোগকারীদের মানবতা বিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার করতে হবে।
২. হিন্দু নির্যাতনের হাতিয়ার তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বাতিল করতে হবে।
৩. সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদে ৬০টি সংরক্ষিত আসন ও ১টি সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। প্রসঙ্গত, ফেসবুকে ‘ধর্ম অবমাননার’ অভিযোগে তথ্য প্রযুক্তি আইনের এক মামলায় গত মঙ্গলবার নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার গোলনা ইউনিয়নের চিড়াভিজা গোলনা থেকে টিটু রায়কে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত বুধবার রংপুরের গঙ্গাচড়া আমলি আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দিবাংশু কুমার সরকার ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।