নাটোর প্রতিনিধি : আড়াইমাস আগে বিয়ে হয় সতের বছর বয়সী তানিয়া আক্তারের। বাল্য বিয়ে হওয়া এই তানিয়ার হাতের মেহেদীর রং না শুকাতেই ভুল চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়। শুক্রবার রাত আটটার দিকে নাটোরের গুরুদাসপরের নাজিরপুর বাজারস্থ আনোয়ার হোসেন ক্লিনিকে ঐ ঘটনা ঘটে। জানা যায়, অস্ত্রোপচারের সময় চিকিৎসক আমিনুল ইসলাম সোহেলের ভাই আমিরুল ইসলাম সাগর ব্যাথা উপশমসহ তিনটি ইনজেকশন দেয়ার পর পরই তানিয়া মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। রাতেই পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নাটোর পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় প্রভাবশালীদের চাপে থানা পুলিশের সহায়তায় একলাখ টাকায় আপোষ করেছে নিহতের পরিবার। নিহত তানিয়া উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামে তারাজুল ইসলামের মেয়ে। আড়াইমাস আগে উপজেলার মশিন্দা গ্রামের শাহিনের সাথে তানিয়ার বিয়ে হয়। নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার তানিয়ার পেটে ব্যথা অনুভব করছিল। চিকিৎসার জন্য ওই দিনই নাজিরপুরের আনোয়ার হোসেন ক্লিনিকে ভর্তি করানো হয়। পরীক্ষা-নীরীক্ষার একপর্যায়ে তানিয়ার পেটে এ্যাপেনডিঙ্ চিহ্নিত হয়। পরে সেখানকার কত্যর্বরত চিকিৎসক আমিনুল ইসলাম সোহেলের তত্ত্বাবধায়নে মঙ্গলবার রাতে অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের পর থেকে তানিয়ার অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। সর্বশেষ গত শুক্রবার রাত নয়টার দিকে তানিয়ার ব্যথা বেশি হলে ঐ চিকিৎসকের ভাই আমিরুল ইসলাম সাগর ব্যথা উপসমের জন্য ইনজেকশান পুশ করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে ক্লিনিকের বেডেই মৃত্যু হয় তানিয়ার। নিহত তানিয়ার মা মনোয়ারা বেগম জানান, আড়াই মাস আগেই বেশ ঘটা করে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন তিনি। এখনও মেহেদির রঙ শুকায়নি। অথচ চিকিৎসা নিতে এসে তার মেয়েকে প্রাণ দিতে হলো। সাগর নামের ঐ ভুয়া চিকিৎসক তানিয়াকে ইনজেকশান পুশ করার পরই খুব ঝাঁকুনি শুরু হয়েছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই চোখের সামনে মেয়েটি মারা যায়। তিনি ঐ ভুয়া চিকিৎসকের শাস্তির দাবি জানান। নিহতের পিতা তারাজুল অভিযোগ করেন, ভুল চিকিৎসায় তার মেয়েটি মারা গেছে। এলাকার প্রভাবশালীদের চাপে একলাখ টাকায় আপোষ হতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। এ কারণে থানায় অভিযোগ দেয়া হয়নি। নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্য বলেন, শুক্রবার রাতেই তড়িঘড়ি করে নিহতের পরিবারকে আপসের চাপ দেয়া হয়। পরে স্থানীয় প্রভাবশালীরা এক লাখ টাকায় আপষ রফা করে দেন। তবে নিহতের পরিবার পেয়েছে ৪০ হাজার টাকা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসক আমিনুল ইসলাম সোহেলের মালিকানাধীন দুইটি ক্লিনিক রয়েছে। একটি গুরুদাসপুর পৌর সদরের খামারনাচকৈড়ের হাজেরা ও অপরাটি উপজেলার নাজিরপুর বাজারস্থ আনোয়ার হোসেন ক্লিনিক নামে পরিচালিত হচ্ছে। দুইটি ক্লিনিকেই চিকিৎসা দেন আমিনুল ইসলাম সোহেল ও তার ভাই আমিরুল ইসলাম সাগর। সোহেল এমবিবিএস পাস করলেও সাগর রংপর নর্দান বেসরকারি মেডিকেল কলেজে আদিবাসী কোঠায় প্রতারণা করে ভর্তি হয়েছিল ২০১৪ সালে। ২০১৭ সালে বিষয়টি প্রকাশ হলে তার ছাত্রত্ব বাতিল করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তার পর থেকেই সাগর আনোয়ার হোসেন ক্লিনিকে সর্বপ্রকার চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। সম্প্রতি ঐ ভুয়া চিকিৎসক সাগরকে তার ভাই আমিনুল ইসলাম সোহেলের ব্যবস্থাপত্রে চিকিৎসা দেয়ার অপরাধে আটক করেছিল গুরুদাসপুর থানা পুলিশ।
নাজিপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন তানিয়ার মৃত্যুর ঘটনা স্বীকার করে বলেন, অস্ত্রোপচারের নিয়ম না থাকলেও এসব ক্লিনিকের চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার করছেন। দিচ্ছেন সর্বপ্রকার চিকিৎসা। ভুল চিকিৎসায় প্রায়ই মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এই ঘটনায় স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপে একলাখ টাকায় নিহতের পরিবার আপোস হতে বাধ্য হয়েছে।
গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দিলীপ কুমার দাস ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নাটোর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দেয়নি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।