বি এম রাকিব হাসান, খুলনা ব্যুরো: খুলনা মহানগরীর যানজট নিরসনের লক্ষ্যে নগরীর ব্যস্ততম সোনাডাঙ্গা এলাকায় ২০০১ সালে কেসিসি ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করে সোনাডাঙ্গা টার্মিনালটি। কিন’ নির্মাণের পর ট্রাক ট্রান্সপোর্ট মালিক-শ্রমিকদের টার্মিনালটি ব্যবহারে রয়েছে অনীহা। অথচ সড়কের দুই পাশে অবস’ান নিয়ে ৯০ শতাংশ ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকে। এতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। নির্মাণের সময় টার্মিনালটি সিটি করপোরেশনের আয়ের অন্যতম উৎস হয়ে উঠবে বলে প্রচার করা হয়। কিন’ টার্মিনালটি খুলনার ব্যবসা কেন্দ্র ও বড়বাজার এলাকা থেকে তিন-চার কিলোমিটার দূরে। ফলে ব্যবসায়ীরা তাদের আমদানি ও রপ্তানিকৃত পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলো বরাবরই নগরীর কেডি ঘোষ রোড, ভৈরব স্ট্রান্ড রোড, কালীবাড়ি রোড, মজিদ সরণিতে রেখে পণ্য বোঝাই ও খালাস করে। ট্রাকগুলো টার্মিনালে প্রবেশই করে না। ফলে টার্মিনাল নির্মাণ হলেও যানজট কমার পরিবর্তে দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর বিশাল বাজেটের টার্মিনাল কাজে না লাগায় সেখানে পাইকারি কাঁচাবাজার স’াপন করা হয়েছে। টার্মিনালটি কাঁচাবাজার হিসেবেই ব্যবহার হচ্ছে। অনেক ট্রাক এখানে রেখে মেরামতের কাজ চলছে। টার্মিনালটি এখন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ায় নগরীর ৭নং ঘাট এলাকায় সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে তৈরি করা হচ্ছে আরেকটি ট্রাক টার্মিনাল। কিন’ কোনভাবেই সোনাডাঙ্গা টার্মিনালটি ব্যবহার উপযোগী করা যায়নি।
এদিকে, প্রশাসনিক নিয়ম ভঙ্গ করে খুলনা মহানগরীতে দিনের বেলা চলছে ট্রাকের আধিপত্য। প্রধান সড়ক জুড়ে পার্কিংসহ অতিরিক্ত মালামাল বোঝাই করছে তারা। তাদের অবহেলায় নিয়মিত ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। ফলে ঝুঁকিতে নগরবাসী। দিনের বেলা শহরে ট্রাক প্রবেশ নিষিদ্ধ রয়েছে। কিন’ প্রশাসনিক নির্দেশনা ভেঙে তারা যত্রতত্র শহরের অলিগলিতে ঢুকে পড়ছে। তারা বহন করছে অতিরিক্ত মালামাল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা হাসপাতাল না দেখেই যেখানে সেখানে হর্ন দিচ্ছে। নগরীতে ওয়াসার খনন ও অতিরিক্ত ইজিবাইকের কারণে চরম ভোগান্তির সাথে নতুন মাত্রায় যোগ হয়েছে ট্রাক সমস্যা।
সরেজমিন দেখা যায়, নগরীর পাওয়ার হাউস মোড় থেকে রেলস্টেশন সংলগ্ন কদমতলা মোড় পর্যন্ত জব্বার সরণি ও ক্লে রোডের সঙ্গে যুক্ত স্টেশন রোডজুড়ে প্রায় সারাক্ষণ অসংখ্য ট্রাক রেখে মালামাল খালাস ও বোঝাই করা হয়। বহু খালি ট্রাকও দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইজিবাইকের বেপরোয়া চলাচল। যে কারণে ওই সড়কে চলাচল করাই দায় হয়ে পড়ছে। জটলায় পড়ে নির্ধারিত সময়ে রেলস্টেশনে পৌঁছাতে পারেন না অনেক যাত্রী। নগরীর স্টেশন রোডে গড়ে উঠেছে যেন অঘোষিত ট্রাক টার্মিনাল। পাওয়ার হাউস মোড় থেকে রেলস্টেশন পর্যন্ত সড়কটিতে প্রতিদিন সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো। যত্রতত্র ট্রাক রাখায় সাধারণ পথচারি, রিক্সা ও অন্যান্য ছোট যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া নগরীর এম এ বারী সড়কে কতিপয় বাঁশ ব্যাবসায়ী দিনের বেলায় অতিরিক্ত বাঁশ বহন করে। যা অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে পথচারীরা হচ্ছে ভোগান্তির শিকার।
বেনী বাবু রোডের বাসিন্দা মেহেদী হাসান বলেন, দিনের বেলায়ও যত্রতত্র ট্রাক ঢুকে পড়ার কারণে নানা সমস্যা হচ্ছে। রাস্তায় দুর্ভোগে পড়তে হয়।
এসি ট্রাফিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমরা সব সময় দিনের বেলা ট্রাক প্রবেশের বিপক্ষে কাজ করি। কিন’ দিনের বেলা শহরে ট্রাক ঢোকার নেপথ্যে রয়েছে মাল লোড আনলোডের ব্যাপার। বণিক সমিতি রাতের বেলায় মাল লোড আনলোড না করায় ট্রাক ড্রাইভাররা বাধ্য হয়ে দিনের বেলায় চলাচল করছে। আর আমরাও এই কারণে কঠোর অবস’ানে থাকতে পারছি না। খুলনা জেলাপ্রশাসক (ডিসি) আমিন উল আহসান বলেন, নগরীতে দিনের বেলা ট্রাক ঢোকা নিষিদ্ধ। এই ব্যাপারে ট্রাফিক বিভাগ ব্যবস’া নেবে। যদি ট্রাক নিয়মিত শহরে দিনের বেলা ঢুকে থাকে তবে অবশ্যই যথাযথ ব্যবস’া নেবো।
বিভাগীয় ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী সরোয়ার হোসেন বলেন, দেশের সকল শহরে রাতের বেলায় লোড আনলোড হলেও খুলনায় দিনের বেলায় হচ্ছে। ফলে ট্রাক ড্রাইভাররা পড়ে ভোগান্তিতে কারণ দিনের বেলায় ট্রাক চলাচল নিষিদ্ধ। ভোগান্তি এড়াতে অনেক চালক নিয়ম ভেঙে ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক নিয়ে বের হয়। তিনি আরো বলেন, রাতের বেলায় লোড আনলোডে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে একাধিকবার বৈঠক হলেও কোন সুরাহা হয়নি।
নিরাপদ সড়ক চাই নিসচার কেন্দ্রীয় সদস্য ও জেলা সাধারণ সম্পাদক এস এম ইকবাল হোসেন বিপ্লব বলেন, নগরীতে দিনের বেলায় ট্রাক নিষিদ্ধ সত্ত্বেও যত্রতত্র ট্রাক ঢুকছে। তবুও সংশ্লিষ্ট ট্রাফিক বিভাগ ও কেসিসি রহস্যময় কারণে সমাধান করছে না ব্যাপারটার।
সম্মিলিত নাগরিক সমাজের আহবায়ক ও কেসিসির মেয়র প্রার্থী অ্যাড. মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, ট্রাক দিনের বেলা শহরে ঢোকায় যানজটসহ নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা সমস্যায় পড়ছে। তারা নিয়মিত চলাচল করতে পারছে না। আমরা বারবার এই নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে চেষ্টা করছি বিষয়টির সমাধান করতে।
,