চুরির অভিযোগে দুই শ্রমিককে এভাবে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে একটি কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার সকালে। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া পূর্বখণ্ড গ্রামে অবস্থিত ওই কারখানার নাম গেলি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।
নির্যাতিত ওই দুই শ্রমিক হলেন খুলনা জেলার দৌলতপুরের গিলাতলা গ্রামের খোকন মিয়ার ছেলে রাসু হোসেন (২৬) ও পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানি থানার চরবলেশ্বর গ্রামের খলিল মিয়ার ছেলে শাহিন আলম (২২)। তাঁরা ওই কারখানায় এক্সট্রা পদে চাকরি করতেন।
কারখানার প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিকেরা জানান, ওই দুই কর্মী কারখানার পাশে হাবিবুর রহমান ও মহসিনের বাড়িতে ভাড়া থাকেন। তাঁরা দুজন যাঁর যাঁর বাসায় ঘুমিয়ে ছিলেন। আজ সোমবার ভোরে কারখানার কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ ওরফে শিপন পাটোয়ারী ও কেওয়া পূর্ব খণ্ড গ্রামের কবির হোসেনের নির্দেশে কারখানার নিরাপত্তাকর্মীদের দিয়ে তাঁদের ঘুম থেকে তুলে কারখানায় নিয়ে আসা হয়। কারখানায় চুরির অপবাদ দিয়ে কবির হোসেনের সহায়তায় কর্মকর্তারা তাঁদের রশি দিয়ে বেঁধে মুখে কাপড় গুঁজে কারখানার ভেতর বেধড়ক মারধর করেন। একপর্যায়ে শাহিন চেতনা হারান। তাঁর চেতনা ফিরলে সকাল নয়টার দিকে কারখানা থেকে বের করে প্রধান ফটকের সামনে গলায় চোর লেখা কাগজ ঝুলিয়ে একটি কক্ষের জানালার গ্রিলের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঘটনাটি জানাজানি হলে অনেক উৎসুক লোক সেখানে জড়ো হয়। পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আশঙ্কায় কারখানা কর্তৃপক্ষ তাঁদের বাঁধন খুলে কারখানায় নিয়ে জোর করে কয়েকটি কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে তাঁদের চাকরিচ্যুতির নোটিশ ধরিয়ে দেয়। এ সময় কারখানা কর্তৃপক্ষ তাঁদের বকেয়া বেতন পরিশোধে অপারগতা প্রকাশ করে। কবিরের নেতৃত্বে কয়েকজন তাঁদের ভয়ভীতি দেখিয়ে দ্রুত এলাকা থেকে চলে যাওয়ার আদেশ দেন। তাঁদের দেওয়া নোটিশে লেখা আছে, ‘কোম্পানির মাল চুরির দায়ে চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হলো এবং তাঁদের সতর্ক করে দেওয়া হলো, কোম্পানির মাল চুরির দায়ে তাঁদের এই এলাকা ছেড়ে যেতে হবে। পরবর্তী সময়ে তাঁদের এই এলাকায় দেখা গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোম্পানির মাল চুরির দায়ে তাঁদের কোনো বেতন দেওয়া হবে না।’
নির্যাতিত ওই দুই শ্রমিক জানান, শাহিনের ভাড়া বাসার সামনে কারখানার একটি সিসার দণ্ড পাওয়া যায়। এরই জের ধরে তাঁদের চোর সাব্যস্ত করে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়।
কারখানার কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ ওরফে শিপন পাটোয়ারী মারধরের কথা স্বীকার করে জানান, তাঁদের থানায় দিলে পুলিশের ঝামেলায় পড়তে হতো। তাই মারধর করে সামান্য শাস্তি দিয়ে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কবির হোসেন জানান, ওই দুই শ্রমিক তাঁর বোনের বাড়িতে ভাড়া থাকেন। সেই হিসেবে তিনি খোঁজখবর নিয়েছেন। ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
শ্রমিক নির্যাতনের খবর পেয়ে কারখানায় পরিদর্শনে যান শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হক। তিনি কেবিডিনিউজকে বলেন, কারখানায় গিয়ে ওই দুই শ্রমিককে পাওয়া যায়নি। তবে কারখানা কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানিয়েছে, চুরির অভিযোগে তাঁদের কয়েকটি চড়-থাপ্পড় দিয়ে কারখানা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে এ ঘটনায় কারও কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।