বারী উদ্দিন আহমেদ বাবর, কুমিল্লা প্রতিনিধি॥কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার ছুপুয়া গ্রামে স্ত্রী সাজেদা বেগম ও বেড়াই তাজুল ইসলাম কর্তৃক খুন হন প্রবাসী খোরশেদ আলম (৫৫)। এ খুনটি সংঘটিত করতে মাত্র ৪ হাজার টাকায় ভাড়া করা হয় খুনে সহায়তা করার জন্যে কয়েকজন যুবককে। নিখোঁজের ৫দিন পর মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) সকাল ১১ টায় ওই প্রবাসীর মাটি চাপা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ এবং ময়নাতদন্তের পর নিহতের বোন নাহার বেগমের নিকট লাশটি হস্তান্তর করা হয়। বুধবার (৮ নভেম্বর) বাদ মাগরিব নিজ বাড়ীর আঙ্গিনায় (সমিানা প্রাচীরের ভিতরে) তাঁর লাশ দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের মেয়ে রাশিদা বেগম বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে নিহতের স্ত্রী সাজেদা বেগমকে কুমিল্লার আদালতে পাঠায়। আদালত তাঁর জবানবন্দী রেকর্ড করে কারাগারে পাঠিয়েছে। এছাড়াও নিহতের ছোট ছেলে ইস্রাফিলকে (১২) পুলিশ হেফাজতে রেখেছেন। এর বাইরে আসামী সাজেদা বেগমের ভাগ্নে মালিপাড়া গ্রামের পেয়ার আহাম্মদকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আটক করেছে।
এদিকে, বুধবার (৮ নভেম্বর) নিহতের স্ত্রী সাজেদা বেগমকে কুমিল্লার আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে সাজেদা স্বামীকে খুনের সাথে জড়িত বলে স্বীকারোক্তি দেয়। তিনি আদালতকে জানায় এ খুনের সাথে সাজেদা নিজে ও তার বেয়াই তাজুল ইসলামসহ আরো কয়েকজন জড়িত রয়েছে। ওরা সকলে মিলে সংঘবদ্ধ হয়ে গত বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) রাতে প্রবাসী খোরশেদকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। তবে তদন্ত ও অপর আসামীদের গ্রেফতারের স্বার্থে এ মুহুর্তে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
তবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নাঙ্গলকোট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) খাদেমুল বাহার বলেন, আসামী সাজেদা বেগম স্বামী খোরশেদকে খুনের সাথে জড়িত বলে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। সুষ্ঠু তদন্ত ও অপর আসামীদের গ্রেফতারের স্বার্থে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না।
অপরদিকে, প্রবাসী খোরশেদকে খুনের পর ঘটনার মোটিভ ঘোরাতে এলাকায় মাইকিং করানো হয়। বিভিন্ন জায়গায় লোক দেখানো খোঁজাখুঁজি করা হয়। সোমবার (৫ নভেম্বর) নাঙ্গলকোট থানায় একটি নিখোঁজ সাধারণ ডাইরীও (জিডি) করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, প্রবাসী খোরশেদ আলম দীর্ঘ ২৮ বছরের প্রবাস জীবনের কষ্টাউপার্জিত প্রায় ৭৫ লক্ষ টাকা পাঠিয়ে দিতেন স্ত্রী সাজেদা বেগমের কাছে। স্বামী প্রবাস থাকার সুযোগে একই গ্রামের তাজুল ইসলামের সাথে পরকীয়া প্রেমে জড়ায় স্ত্রী সাজেদা বেগম (৪৫)। পরকীয়ার প্রেমিকের মন খুশি রাখতে স্বামীর উপার্জিত লাখ লাখ টাকা চলে যেত প্রেমিক তাজুর কাছে। পরকীয়া প্রেমকে আরো ঘনিষ্ট করতে নিজের মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হয় প্রেমিক তাজুর ছেলের কাছে। প্রায় ২ বছর পূর্বে দেশে ফিরে এসে স্ত্রী সাজেদার কাছে টাকার হিসাব চাইলে হিসাব দিতে গড়িমসি করেন সাজেদা। এরমাঝে বেয়াই তাজুর নিকট ১৭ লক্ষ টাকা পাওয়ার কথা জানতে পারে খোরশেদ। এ নিয়ে আগামী ১৭ নভেম্বর গ্রাম্য শালিসের কথা ছিল। নির্ধারিত ওই তারিখ ঘোষনা করেছিলেন তাজু নিজেই। এরপর স্ত্রী সাজেদা ও বেয়াই তাজু মিলে পরিকল্পিত ভাবে খোরশেদকে খুন করে মাটি চাপা দেয়। নিহত খোরশেদের ২ ছেলে ও ৩ মেয়ে রয়েছে।
স’ানীয় ইউপি সদস্য একরাম ও সালেহ আহম্মদ জানায়, নিহত খোরশেদ আলমের সাথে তার মেয়ে রশিদার শশুর একই গ্রামের যৌবন আলীর পুত্র তাজুল ইসলামের সাথে ১৭ লক্ষ টাকা পাওয়াকে কেন্দ্র করে বিরোধ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ নিয়ে আগামী ১৭ নভেম্বর স’ানীয় ভাবে বিষযটি মীমাংসার জন্য একটি শালিস বৈঠক হওয়ার কথা ছিল বলেও জানান তারা।
নিহতের বোন নাহার বেগম জানান, গত বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর নিখোঁজের দিন) সকাল ১১টার দিকে খোরশেদ তার কাছে বলে আমার শরীর খারাপ লাগছে। পরিবারের লোকজন তাকে হত্যা করতে পারে। একটু খেয়াল রেখো।