এবার বাড্ডায় বাবা-মেয়ে খুন = তদন্ত করছে পুলিশ

 

badda khun

KBDNEWS : রাজধানীর কাকরাইলে একসঙ্গে মা-ছেলে খুন হওয়ার ১দিন পেরোনোর আগেই এবার বাড্ডায় একসঙ্গে বাবা-মেয়ে হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। বাড্ডার হোসেন মার্কেট এলাকার ময়নারটেকের ১টি বাসা থেকে বাবা ও মেয়ের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতরা হলেন জামিল শেখ (৪১) ও মেয়ে নুসরাত (৯)। পুলিশ তাদের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ ধারণা করছে নিহত জামিল শেখের স্ত্রী পরকীয়ায় লিপ্ত ছিল। পরকীয়ার কারণেই বাবা-মেয়ে হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানা গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরের আলো ফুটলেও কোলাহল ফেরেনি তখনও। দু’একটি রিকশার টুংটাং বেলের আওয়াজ মাত্র। মুসলি্লরা ফজরের নামাজ শেষে গলি পথে হাঁটছিলেন। হঠাৎই ১টি বাড়ির ছাদ থেকে নারীর কান্নার আওয়াজ। ছুটে যান মুসলি্লরা। তবে তখনও বাড়িটির প্রধান ফটক তালাবদ্ধ।

মুসলি্লদের হাঁকডাকে ঘুম ভাঙে বাড়ির মালিকের স্ত্রী নাসিমা দুলালের। বাড়ির ছাদে গিয়ে তিনি দেখেন ভাড়াটিয়া জামিল ও তার মেয়ে নুসরাতের নিথর দেহ। পাশে আহাজারি করছেন স্ত্রী আরজিনা বেগম। নাসিমা দুলালের জেরার মুখে ঘটনা সম্পর্কে আরজিনা বলেন, আপা ডাকাত পড়ছিল। ৪ জন মুখোশধারী আমার হাত-পা ও মুখ বেঁধে স্বামী জামিলকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে খুন করেছে। শ্বাসরোধ করে মারছে মেয়ে নুসরাতকে। এরপর মানুষের ভিড় জমে। পরিচিত মানুষের একের পর এক প্রশ্নের মুখে পড়ে নিহতের স্ত্রী আরজিনা। শুরু হয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। খবর পেয়ে পুলিশ আসে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার দিকে রাজধানীর উত্তর বাড্ডার ময়নারবাগের ৩০৬-পাঠানভিলার তৃতীয় তলার ছাদের চিলেকোঠা থেকে উদ্ধার করা হয় বাবা জামিল (৪১) ও মেয়ে নুসরাতের (৯) মরদেহ। মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে।

ঐ বাড়ির মালিক দুলাল পাঠান জানান, মাসখানেক আগে ময়নবারবাগের ৩০৬ নাম্বার গোরস্থান রোডের তার ৩ তলা বাসার চিলেকোঠা ভাড়া নেন জামিল শেখ। পেশায় গাড়িচালক জামিল শেখের বাসায় ১ যুবক সাবলেট ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকতো। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে তিনি ছাদে কান্নার শব্দ পেয়ে ছাদে উঠে দেখেন জামিল শেখের স্ত্রী আরজিনা কাঁদছে। কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করলে আরজিনা ৪ জন সন্ত্রাসী তার স্বামী ও মেয়েকে মেরে ফেলেছে বলে জানান। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ঘরে গিয়ে ২ জনের লাশ দেখতে পেয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানান।

ঐ বাসার নিচতলার ভাড়াটিয়া জোসনা বেগম বলেন, পাঠান ভিলায় ছোট ছোট সব ফ্ল্যাট। তৃতীয় তলায় ২টি কক্ষ ভাড়া নিয়ে থাকতেন গাড়িচালক জামিল। গত কোরবানির ঈদের পর স্ত্রী আরজিনা (৩০) মেয়ে নুসরাত (৯) ও ছেলে আলফিকে (৩) নিয়ে ঐ বাসায় ওঠেন জামিল। ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কান্নাকাটির আওয়াজ ও বাইরে মুসলি্লদের হাঁকডাকে বাসার মালিকের বউ আমাকে ওপরে পাঠান। গিয়ে দেখি কান্নাকাটি করছে আরজিনা। ভেতরে পুরুষটা রক্তাক্ত। মাথা থেকে রক্ত বেয়ে মেঝে ভিজে গেছে। মাইয়াডার কোনো সাড়া-শব্দ নাই। আমি চিক্কার (চিৎকার) দিয়া নিচে নামি। আপারে (মালিকের স্ত্রী) বলি, আপা আপনি গিয়া দেখেন সর্বনাশী ঘটনা। এরপর আপায় ওপর যান, দেখে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ আসে। পুলিশ ঐ মহিলারে নিয়ে থানায় চইল্লা গেছে-বলেন জোসনা বেগম।

নিহত জামিল শেখের বড় ভাই দুলাল শেখ জানান, তার ভাইয়ের সঙ্গে স্ত্রীর সম্পর্ক খারাপ ছিল। বিয়ের পর থেকেই তাদের পরিবারে অশান্তি লেগেছিল। আরজিনা মোবাইলে বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে কথা বলতো এ নিয়ে তাদের ঝগড়াও হয়েছে অনেক। এছাড়া নতুন এই বাসায় ওঠার আগে আরজিনা রাগ করে সাভারের ইপিজেড এলাকায় তার মায়ের বাড়িতে গিয়ে ২ মাস অবস্থান করে। পরে গত মাসে আবার স্বামীর কাছে ফিরে আসে। দুলাল শেখের ধারণা, পারিবারিক কলহের জের ধরে আরজিনাই লাঠি দিয়ে তার ভাইকে আঘাত করে হত্যা করেছে। হত্যার ঘটনাটি দেখে ফেলায় মেয়ে নুসরাতকে গলা টিপে হত্যা করেছে। আরজিনার হাতে খামচির দাগও রয়েছে। গলা টিপে ধরার সময় নুসরাত হয়তো তা ছাড়ানোর চেষ্টা করছিল।

পাশের অন্য ভবনের নিচতলার বাসিন্দা পিংকি বেগম বলেন, ওপরে রাতে শব্দ হলেই কানে আসে। গত রাতে খুন হইলে চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে পায়তাম। বাইরে থাইকা কেউ আইলেও বোঝা যাইত। আমি ৪টার পর থাইক্কা জাগনা (জেগে)। পিংকি বলেন, আরজিনা যে দাবি তুলছে, তার ভিত্তি পাইতেছি না। আগে থেকে কেউ এসে ভবনে থেকে খুন করে পালাইছে, নাকি হেই নিজে খুন করছে তা বলা মুশকিল।

নিহত জামিলের ভাগ্নে রুবেল বলেন, আমি, জামিল ও শামীম মামা একলগে একই অফিসে চাকরি করি। গত সপ্তাহে জামিল মামা আমারে বলছিল, মামা তোমার মামি যা-তা শুরু করছে। না পারছি বলতে না পারছি সইতে। কিন্তু তিনি পরিষ্কার কিছু বলেন নাই। আমি আর আগ্রহ দেখাই নাই, পারিবারিক সমস্যা কম বেশি সবারই থাকে। কিন্তু মামা খুনের পর সে কথাগুলো বারবার মনে পড়তেছে।

নিহত জামিলের বড় ভাই ইব্রাহিম ইবু বলেন, ১২ বছরের সংসার ওদের। গত ৪ বছর ধরে প্রায়ই শুনি ওদের (স্বামী-স্ত্রী) মধ্যে ঝামেলা। এভাবেই চলছিল। মাস তিনেক আগে ঝগড়া করে ওর বউ আরজিনা গ্রামের বাড়ি চলে যায়। তবে ফের কোরবানির ঈদের পর ঢাকায় আসে। এ বাসায় এসে গত সপ্তাহেও ওদের মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়েছে শুনেছি। ওর স্ত্রী পরকীয়া করে এমন অভিযোগ করেছিল জামিল। কিন্তু পাত্তা দেইনি। এখন মনে হচ্ছে, একসঙ্গে রাতে থেকে স্বামী ও মেয়ে মারা যায় আর স্ত্রী জীবিত থাকে কীভাবে? ভাই হত্যার পেছনে ভাইয়ের স্ত্রীর যোগসাজশ রয়েছে বলে দাবি ইব্রাহিমের।

বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, কে বা কারা এবং কেন তাদের হত্যা করেছে তা পরিষ্কার নয়। তবে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় জামিল শেখের স্ত্রী আরজিনা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। মরদেহ ২টি উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বাবাকে পিটিয়ে ও মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার কারণ এখনও স্পষ্ট নয়, তবে প্রাথমিকভাবে পরকীয়া ও আর্থিক কারণ গুরুত্ব দিয়ে ঘটনার তদন্ত চলছে। তিনি আরও বলেন, আরজিনার কথাবার্তা অসংলগ্ন। সে বাড়ির মালিককে ৪ জন সন্ত্রাসীর কথা বললেও তাদের কাছে সে কিছু দেখেনি বলে দাবি করছেন। তারা ধারণা করছেন পারিবারিক কলহের জের ধরেই এই হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে। জামিলের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরের করপাড়া ইউনিয়নের বনপাড়া গ্রামে। নিহত জামিলের বাবার নাম বেলায়েত শেখ (মৃত)। সম্প্রতি তেজগাঁওয়ের বেসরকারি ১টি প্রতিষ্ঠানে তিনি গাড়িচালক হিসেবে যোগদান করেন।

পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মোস্তাক আহমেদ জানান, আরজিনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই এই হত্যাকা-ের রহস্য উন্মোচন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

উল্লেখ্য, ১ দিন আগে গত বুধবারই কাকরাইল এলাকার ১টি বাসা থেকে মা শামসুন্নাহার করিম ও ছেলে শাওনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা তাদের জবাই ও কুপিয়ে হত্যা করে। ঘটনাস্থল থেকে ১টি রক্তমাখা ছুরিও উদ্ধার করেছে। পুলিশ ঐ ঘটনায় শামসুন্নাহার করিমের স্বামী অব্দুল করিম, বাসার গৃহকর্মী রাশেদা ও দারোয়ান নোমানকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post