অভিযোগ : ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর স্ট্যাটাস রংপুরে রণক্ষেত্র সংখ্যালঘুদের বাড়িতে আগুন । গুলিতে নিহত ১

 

fasbook ,ronpurরংপুর ও তারাগঞ্জ প্রতিনিধি : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর স্ট্যাটাস দেয়ার অভিযোগে গতকাল শুক্রবার রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার হরকলি ঠাকুরপাড়া গ্রামের হিন্দু সমপ্রদায়ের ৮টি বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কোতোয়ালি, গঙ্গাচড়া ও তারাগঞ্জ থানার পুলিশ গিয়ে শটগানের গুলি ও টিয়ার গ্যাসের শেল ছোড়ে। এ সময় সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে ১ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭ পুলিশসহ ২৫ জন।

রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল-এ) সাইফুর রহমান বলেন, ঐ ঘটনায় হাবিবুর রহমান (৩০) নামের এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। লাশ রংপুর মেডিকেল কলেজের মর্গে রয়েছে। আহতদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ১১ জন।

পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, গঙ্গাচড়া উপজেলার খলেয়া ইউনিয়নের ঠাকুরপাড়া এলাকার মৃত খগেন রায়ের ছেলে টিটু রায় গত ৫ নভেম্বর ফেসবুকে মহানবীকে (সা.) নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তি ও আপত্তিকর ছবি পোস্ট তথা ‘ধর্মীয় অবমাননাকর’ স্ট্যাটাস দেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন থেকে ঐ গ্রাম ও আশপাশ এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল।

স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানান, এরই প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার নামাজের পর স্থানীয় মুসলি্লরা একজোট হয়ে পাগলাপীর বাজারে সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন কর্মসূচি শুরু করেন। এসময় ঐ কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে আশপাশের কয়েক হাজার মুসলি্ল সমবেত হন। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ মানুষজন ঠাকুরপাড়ার কয়েকটি বাড়িতে অগি্নসংযোগ করে। এতে পুলিশ বাধা দিলে মুসলি্লদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়।

গঙ্গাচড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিন্নাত আলী বলেন, এ ঘটনায় গঙ্গাচড়া উপজেলার খলেয়া ইউনিয়নের লালচান্দপুর গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে টিটু রায়কে আসামি করে ৫ নভেম্বর গঙ্গাচড়া থানায় মামলা করেন। টিটু রায় গ্রামে থাকেন না। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করেন।

ওসি আরও জানান, গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে হঠাৎ করে উপজেলার শলেয়া শাহ, বালাপাড়াসহ আরও কয়েকটি এলাকার কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ মানুষ সমবেত হয়ে বিক্ষোভ করে। বিক্ষুব্ধ জনগণ হরকলি ঠাকুরপাড়ায় অবস্থিত অভিযুক্ত টিটু রায়ের বাড়িতে আগুন দেয়। এতে তাদের ৩টি ঘর ভস্মীভূত হয়ে যায়। এরপর ঐ এলাকার আরও ৭টি বাড়ির ১৫টি ঘরে আগুন দিলে সেগুলো ভস্মীভূত হয়ে যায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, টিটু রায়ের ৩টি ঘর ছাড়াও সুধীর রায়ের ৬টি ঘর, অমূল্য রায়ের ২টি ঘর, বিধান রায়ের ২টি ঘর, কৌশল্ল রায়ের ২টি, কুলীন রায়ের ১টি, ক্ষীরোদ রায়ের ১টি, দীনেশ রায়ের ১টি ঘর ভস্মীভূত হয়েছে। টিটু রায়ের ঘরে সামনে আহাজারি করতে করতে তার মা জিতেন বালা বলেন, ‘আমরা কিছুই জানি না। কেন আমাদের বাড়িঘরে আগুন দেয়া হলো। এখন আমি কেমন করিয়া বাস করব।’ এদিকে কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল ইসলাম ও গঙ্গাচড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিন্নাত আলী বলেন, সদর, গঙ্গাচড়া ও তারাগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা হলো ঘটনাস্থল হরকলি ঠাকুরপাড়া। ঘটনা জানার পর পর ৩ থানা থেকে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়। উত্তেজিত জনগণকে শান্ত ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শটগানের গুলি ও টিয়ার গ্যাসের শেল ছোড়ে। এতে ৭ পুলিশসহ ২০ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে ঐ এলাকার জাহাঙ্গীর (২৮), মাহাবুবুল (২৫), রিপন (২৮) আমিন (২৬), জামিলকে (২৭) রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এরা সবাই বালাপাড়া, শলেয়াশাসহ ঘটনাস্থল ঠাকুরপাড়ার আশপাশ এলাকার বাসিন্দা। বাকিদের নাম জানা যায়নি। তবে অভিযুক্ত টিটু রায়ের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঐ এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনান্থল থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল-এ) সাইফুর রহমান জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post