স্পট : পল্টন মডেল থানা
স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর পল্টন মডেল থানা এলাকায় এএসআই আলিমের শাসন-শোষণ চলছে অবাধে। নিজেকে পুলিশ অফিসার পরিচয় দিয়ে নানা অপকর্ম করে যাচ্ছেন বছরের পর বছর। এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে আঁতাত করে ১০টি মাদক স্পট থেকে প্রতিদিন রাতে নজরানা নিচ্ছেন ৩০/৪০ হাজার টাকা। ফুটপাতের দোকান থেকেও নিয়মিত চাঁদা আদায় করছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। কয়েকদিন আগে এলাকার এক মাদক ব্যবসায়ীকে ধরে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
পল্টন থানা এলাকায় ডিউটি করাকালীন সময়ে রাত ১১টার পর অনেক সাধারণ মানুষকে ধরে পকেটে ইয়াবা ও জাল টাকা ঢুকিয়ে গ্রেফতার করার হুমকি দিয়ে আদায় করছেন লাখ লাখ টাকা। মিথ্যা মামলায় ঢুকিয়ে নিরীহ মানুষকে হয়রানিও করছেন অহরহ। শুধু কি তাই? তিনি পল্টন মসজিদের পেছনে ও ইস্টার্ন হাউজিংয়ের পাশে ২টি ফ্ল্যাটে সুন্দরী মক্ষীরাণীদের মাধ্যমে নারী দেহ এবং রংমহল বাণিজ্য করছেন বলেও শোনা যায়। তার পোশাকী অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। এভাবে গ্রেফতার বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, মাদক ও নারী ব্যবসা করে অবৈধ পথে অগাধ সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, অর্থলোভী এই এএসআই তার চাকরি জীবনের শুরু থেকেই পেশাদার অপরাধীদের হাতে হাত মিলিয়ে অবৈধ পথে টাকা উপার্জন করার সব রকম কৌশল আয়ত্ত করেছেন। এএসআই আলিমের বাড়ি পাবনা জেলায়। এএসআই আলিম পুলিশ বিভাগের চাকরির ক্ষমতার অপব্যবহার করে এলাকার মানুষের ওপর নানা প্রকার জুলুম-অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি মানুষের জমিও দখল করে নিয়েছেন। রাজধানীর মাদক বাণিজ্যের গডফাদার হিসেবে এখন তার নামটিও বেশি শোনা যায় মাদক ব্যবসায়ী ও ইয়াবা ডিলারদের মুখে মুখে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এএসআই আলিমের কাছে কোনো মামলা তদন্ত দিলেই তিনি সেই মামলার আসামিদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা খেয়ে তাদের পক্ষ অবলম্বন করে বাদী ও সাক্ষীদের হয়রানি করেন। অন্যদিকে সাবেক থানায় থাকাকালে যতগুলো আবাসিক হোটেল, মাদক স্পট, ছোট ছোট কলকারখানা ও টেম্পু স্ট্যান্ড রয়েছে সেগুলো থেকে প্রতি মাসে ১০ লাখ টাকা চাঁদা ও মাসোহারা আদায় করতেন। বর্তমানে তিনি পল্টন থানা এলাকার ১০টি মাদক স্পট ও জুয়ার আসর নিয়ন্ত্রণ করে প্রতি মাসে কয়েক লাখ টাকা উপার্জন করছেন। ট্রাভেলস ও আদম বেপারীদের কাছ থেকে মাসিকহারে মাসোহারাও নিচ্ছেন। কথায় কথায় তিনি পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়াকে নিকট আত্মীয় বলে পরিচয় দেন এবং দম্ভোক্তি করে বলেন ‘তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলেও কিছু যায়-আসে না। সব অভিযোগ কমিশনার স্যার ডাস্টবিনে ফেলে দেবেন।’ এএসআই আলিমের এমন কথায় অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা বিস্মিত হন।
এদিকে এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, এএসআই আলিম তার অবৈধ পথে উপার্জিত টাকা দিয়ে মিরপুরে ৫ কাঠা জমি ক্রয় করে সেই জমিতে ১টি আধুনিক মডেলের বাড়ি নির্মাণ শুরু করেছেন। এই বাড়ি ও জমির মূল্য কমপক্ষে ৫ কোটি টাকা। এছাড়া ঢাকা উত্তরায় ৫ কাঠার ২টি প্লট কিনেছেন যার মূল্য ৬ কোটি টাকা। নামে-বেনামে তিনি সাভার ও নারায়ণগঞ্জেও প্লট ও ফ্ল্যাট কিনেছেন বলে শোনা গেছে। এছাড়া তার বাসায় কোটি টাকার আসবাব রয়েছে। প্রশ্ন হলো এত টাকা তিনি পেলেন কোথায়?
সম্প্রতি ফকিরাপুল এলাকার ১টি কম্পিউটার দোকান থেকে মালিকসহ ২ জনকে আটক করেন এএসআই আলিম। আটককৃত দোকান মালিকের নাম মাহফুজ মোল্লা অপরজনের নাম পাওয়া যায়নি। গত মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে দৈনিক জনতা পত্রিকার পেছনের গলির ১৫৫/৩ নং ফকিরাপুল থেকে তাদের ২ জনকে আটক করা হয়।
সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার পৌনে ৫টার দিকে পল্টন থানার এসআই রেজাউল ও এএসআই আলিম এবং সঙ্গীয় ফোর্সসহ ১৫৫/৩ নং ১টি কম্পিউটার দোকানে অভিযান চালায়। এসময় পুলিশ দোকানের মালিক মাহফুজ মোল্লা ও তার সহযোগীকে আটকে রেখে দোকানের সবগুলো কম্পিউটার ও পিসি জব্দ করে থানায় নিয়ে যান। পুলিশের এ অভিযানের সময় দৈনিক জনতার ফটো সাংবাদিক মো. ফরিদ উদ্দিন তার ব্যবহৃত মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলার চেষ্টা করলে এএসআই আলিম তার হাত থেকে জোরপূর্বক মোবাইলটি ছিনিয়ে নেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে শত শত লোক জড়ো হয়। উপস্থিত লোকজন সাংবাদিকের মোবাইল ফেরত দিতে এসআই রেজাউল ও এএসআই আলিমকে অনুরোধ করেন। কোনোক্রমেই মোবাইল না দিয়ে ঐ সাংবাদিককে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন। পুলিশের অনুমতি ছাড়া কেন ছবি তোলা হলো তা জানতে চান। এ ঘটনার পর পুলিশ মোবাইলটি থানায় নিয়ে যায়। পরে বিকেল পৌনে ৬টার দিকে সাংবাদিক ফরিদ থানায় গিয়ে ওসি তদন্তের হস্তক্ষেপে মোবাইল ক্যামেরাটি ফেরত পান।
এএসআই আলিম পেশাদার সাংবাদিকদের ‘সাংঘাতিক’ বলেও উপহাস করেন। দম্ভোক্তি করে বলেন, পুলিশ হলো দেশের রাজা, তোরা সব প্রজা। তার এ ধরনের কথাবার্তা চাকরি শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধি লঙ্ঘনের সমতুল্য হলেও তিনি তা আমলে নেন না। নিজেকে পুলিশের শীর্ষ কর্তার মতোই আচরণ করেন। এসব বিষয়ে এএসআই আলিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন ডিউটিতে আছি। পরে থানায় আসেন। প্রশ্ন হলো সামান্য একজন এএসআই এত ক্ষমতা কোথায় পান? তার পেছনে কোন শক্তি রয়েছে? তিনি কীভাবে দীর্ঘ ৭/৮ বছর ডিএমপিতে চাকরি করছেন। পল্টন মডেল আনা এলাকায় কিভাবে ৪ বছর রয়েছেন? তার চাঁদাবাজি, মাদক-নারী ও গ্রেফতার বাণিজ্য আর কতদিন চলবে?