বি এম রাকিব হাসান, খুলান ব্যুরো: খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলে উৎপাদিত প্রায় ৩শ’ কোটি টাকার পাটজাত পণ্য মজুদ রয়েছে। এসব পণ্য সময়মতো বিক্রি করতে পারছে না মিলগুলো। আর পণ্য বিক্রি করতে না পেরে আর্থিক সংকটে পড়েছে পাটকলগুলো। এ কারণে শ্রমিকদের মজুরি প্রদানে হিমসিম খেতে হচ্ছে। ফলে নিয়মিত মজুরি প্রদান করতে না পারায় সমপ্রতি শ্রমিক অসনেত্মাষ দেখা দেয়। পাটকলগুলোতে এখনও শ্রমিকদের ২ থেকে ৮ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে।
বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৯ পাটকলে উৎপাদিত ৩৩ হাজার ১৩২ মেট্রিক টন পাটজাত পণ্য বিক্রির অপেড়্গায় মিলগুলোর গোডাউনে পড়ে আছে। যার মূল্য প্রায় ৩শ’ কোটি টাকা। উৎপাদিত পণ্য সময়মতো বিক্রি করতে না পারায় সব পাটকলগুলোই আর্থিক সংকটে পড়েছে। আর এ কারণে শ্রমিকদের নিয়মিত মজুরি পরিশোধ করতে পারছে না মিল কর্তৃপড়্গ। ফলে ধীরে ধীরে শ্রমিকদের মজুরি বকেয়ার সংখ্যা বাড়ছে। ফলে শ্রমিকদের মধ্যে চাপা ড়্গোভ বিরাজ করছে। আর এ কারণেই শ্রমিক বাড়ছে।
সর্বশেষ গত ৪ অক্টোবর শ্রমিকরা পস্নাটিনাম জুট মিলের, ৫ অক্টোবর ক্রিসেন্ট জুট মিলের এবং ৭ অক্টোবর স্টার জুট মিলের উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। পরে জেলা প্রশাসনের বৈঠকের সিদ্ধানত্ম মোতাবেক মিল কর্তৃপড়্গ দ্রম্নত মজুরি পরিশোধের আশ্বাস দিলে তিনটি পাটকলের শ্রমিকরা ৮ অক্টোবর কাজে যোগদান করেন। ওই দিন ক্রিসেন্ট ও পস্নাটিনাম জুট মিলের শ্রমিকদের বকেয়া মাত্র এক সপ্তাহের মজুরি প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে আরো ২টি মজুরী পরিশোধ করা হয়।
বর্তমানে পস্নাটিনাম জুট মিলে শ্রমিকদের ৫ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। এছাড়া ক্রিসেন্টে ৫ সপ্তাহ, আলিমে ৫ সপ্তাহ, ইস্টার্নে ৫ সপ্তাহ, জেজেআইতে ৮ সপ্তাহ, স্টারে ৪ সপ্তাহ, দৌলতপুরে ২ সপ্তাহ, খালিশপুরে ৩ সপ্তাহ ও কার্পেটিং জুট মিলে বকেয়া রয়েছে ৬ সপ্তাহের মজুরি।
পাটকল শ্রমিক সিরাজুল ইসলাম, শামসুল আলম, মোঃ হেলাল, আঃ কুদ্দুস ও মিজান ড়্গোভ প্রকাশ করে বলেন, তারা সপ্তাহে ১৮শ’ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা মজুরি পান। কিন’ ৬ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া থাকায় তারা বাড়ির বাজার করতে পারছেন না। দোকানীরা এখন আর বাকিতে মালপত্র দিতে চায় না। এ অবস’ায় তাদেরকে স্ত্রী-সনত্মানদেরকে নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে।
ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ সভাপতি মোঃ মুরাদ হোসেন বলেন, সমপ্রতি শ্রমিক অসনেত্মাষ শানত্ম হলেও এখনও শ্রমিকদের ৫ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। নিয়মিত মজুরি পরিশোধ করা না হলে ফের শ্রমিকদের মধ্যে সনেত্মাষ দেখা দিতে পারে।
নগরীর খালিশপুরের পস্নাটিনাম জুট মিলের উপ-মহাব্যবস’াপক মোঃ শাহজাহান জানান, তার মিলে বর্তমানে প্রায় ৭০/৭৫ কোটি টাকার পাটজাত পণ্য রয়েছে। কিন’ ওই পণ্য সময়মতো তারা বিক্রি করতে পারেননি। সে কারণে সমস্যা দেখা দেয়। গত জুলাই মাস থেকে আনত্মর্জাতিক বাজারে পাটজাত পণ্যের চাহিদা কিছুটা কমে যায়। তবে চলতি মাসে আবার চাহিদা বেড়েছে। এখন কিছু কিছু পণ্য রফতানি হচ্ছে। শিগগিরই এই সংকট কেটে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ক্রিসেন্ট জুট মিলের উপ-মহাব্যবস’াপক আহমেদ হোসেন জানান, মিলে প্রায় ৪০ কোটি টাকার উৎপাদিত পণ্য রয়েছে। এই পণ্য দ্রম্নত বিক্রির চেষ্টা করা হচ্ছে। বিক্রি করতে পারলে আর্থিক সংকট থাকবে না।