১৫শ টাকা দিতে না পারায় প্রসূতিকে বের করে দেয়া হয় হাসপাতাল কম্পাউন্ডে সন্তান প্রসব

prosoty

স্টাফ রিপোর্টার :গরিব বলে রাজধানীতে ৩টি সরকারি হাসপাতালের ১টিতেও চিকিৎসা পাননি অন্তঃসত্ত্বা পারভীন আখতার। শেষ পর্যন্ত মাত্র ১৫শ টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় আয়ার মাধ্যমে টেনে হিঁচড়ে বের করে দেয়া হয় হাসপাতাল থেকে। তার মিনিট পাঁচেক পরেই হাসপাতাল কম্পাউন্ডে সন্তান প্রসব করেন হতভাগী পারভীন। তবে পারভীনের আর্তচিৎকারে হাসপাতালের কেউ এগিয়ে না আসলেও মন গলে অপর এক মায়ের। তার সহযোগিতায় প্রসব করানো হয়। এসময় অন্য মহিলারা নিজেদের পরনের ওড়না ও কাপড় দিয়ে দেয়াল তৈরি করে। ঘটনাটি ঘটে রাজধানীর আজিমপুর মাতৃসদনে গত মঙ্গলবার সকালে। এত কষ্টের পরও ফুটফুটে নবজাতককে বাঁচানো যায়নি। এসময় পর্যন্ত হাসপাতালের কোনো ডাক্তারকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। তবে ফুটফুটে নবজাতকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয়রা। স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে অবশেষে অসুস্থ পারভীনকে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পৃথক ২টি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

এর আগে পারভীন আখতার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং মিটফোর্ড হাসপাতালেও ভর্তি হতে যায়। কিন্তু এ ২টি হাসপাতালেও তাকে ভর্তি করা হয়নি।

পারভীনের সাথে হাসপাতালে যাওয়া তার ভাই সোহেল জানান, পারভীনকে প্রথমে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তাকে ভর্তি না করে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ঐ হাসপাতালেও তাকে ভর্তি না করে আজিমপুর ম্যাটারনিটিতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।

গতকাল সকাল ৮টার দিকে পারভীনকে আজিমপুর মাতৃসদনে নেয়া হয়। বারবার অনুরোধের পর তাকে দ্বিতীয় তলার লেবার রুমে নিয়ে যান এক নারী চিকিৎসক। তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বের হয়ে যেতেই শাহেদা নামের আয়া সেখানে যান। এসময় আয়া অপারেশনের জন্য তার কাছে ১৫শ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে এ হাসপাতালে চিকিৎসা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়ে শাহেদা তাকে টেনে দোতলা থেকে নিচে নামান। পারভীন তখন প্রসব ব্যথায় ছটফট করছিলেন। টাকা দিতে না পারলে অন্য হাসপাতালে যাও বলে আয়া তাকে বের করে দেন। ম্যাটারনিটি হাসপাতাল ভবন থেকে বের হতেই প্রসবব্যথায় শুয়ে পড়েন পারভীন। সেখানেই সন্তান প্রসব করেন তিনি। নবজাতক প্রথমে নড়াচড়া করলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই নিস্তেজ হয়ে পড়ে।

পারভীনের গ্রামের বাড়ি যশোর। বেশ কয়েক মাস আগে তার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায়। এরপর থেকে পারভীন গুলিস্তান রেল কলোনীতে ভাইয়ের কাছে থাকতেন। গত সোমবার গভীর রাতে তার প্রসব বেদনা শুরু হয়। দিনমজুর ভাই সোহেলের সহযোগিতায় ভোর থেকেই হাসপাতালে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান তিনি।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে আজিমপুরে মাতৃসদন ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক ডা. ইশরাত জাহান বলেন, হাসপাতালে ঐ নারীকে চিকিৎসা দেয়া হলেও পরে তিনি দালালের খপ্পরে পড়েছিলেন এবং হাসপাতালের বাইরে ঘটনাটি ঘটেছে এমন কথা বলার সাথে সাথে উপস্থিত সাংবাদিকরা তাদের মোবাইলে থাকা ভিডিও ফুটেজ দেখালে বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যান ডা. ইশরাত জাহান। প্রসূতি পারভীনের আর্তচিৎকারে হাসপাতালের কেউ এগিয়ে না আসাকে তিনি দুঃখজনক বলে অভিহিত করেন। তবে বিষয়টি জানতে পেরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ঘটনা তদন্তে গাইনি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. হোসনে জাহানকে প্রধান করে ৩ সদস্যের ১টি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এদিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (এসসিএইচ সার্ভিসেস) ডা. মোহাম্মদ শরীফ। তিনি বলেন, পারভীনের সাথে কথা বলে তিনি ঘটনার সত্যতার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন। শাহেদা নামের ঐ আয়াকেও শনাক্ত করা হয়েছে। গত মঙ্গলবারই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পুরো ঘটনা তদন্তে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ৪ সদস্যের ১টি কমিটি করা হয়েছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post