কুষ্টিয়ায় শিক্ষকের অশালীন আচরণ সইতে না পেরে স্কুল ছাত্রীর আত্নহত্যা

Kustia-student-death-e1507725821846[1]

স্টাফরিপোটার :শিক্ষকের অশালীন আচরণ সইতে না পেরে এবং মডেল টেষ্ট পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারায় ডালিম খাতুন নামের এক শিক্ষার্থী আত্নহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল বুধবার সকাল ১০টার দিকে ডালিমের স্বজন ও এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে স্কুল ঘেরাও করে। তারা অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করে অধ্যক্ষ ও সহকারী শিক্ষক মাসুদের ওপর চড়াও হয়। পরে স’ানীয়দের সহায়তায় পরিসি’তি শানত্ম হয়। ঘটনাটি ঘটেছে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কেএসএম স্কুল এন্ড কলেজের স্কুল শাখায়।
ডালিম মিরপুর উপজেলার কবরবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আকবর আলীর মেয়ে।
এলাকাবাসী জানায়, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কেএসএম স্কুল এন্ড কলেজের স্কুল শাখা থেকে ডালিম এবার মডেল টেষ্ট পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য প্রস’তি নিচ্ছিল।
ডালিম মঙ্গলবার স্কুলে প্রবেশপত্র তুলতে গিয়ে জানতে পারেন তার আর পরীক্ষায় অংশ নেয়া হচ্ছে না। বিষয়টি জানতে শিক্ষকদের কাছে গেলে শুনতে হয় অশালীন মনত্মব্য। রাগে দুঃখে বাড়ি ফিরে আত্মহননের পথ বেছে নেয় সে।
ডালিমের বড় ভাই রম্নবেল হোসেন জানান, দুই মাস আগে ডালিমকে সাথে নিয়ে মডেল টেস্ট পরীক্ষার জন্য তার স্কুলের সহকারী শিক্ষক মাসুদের কাছে ফরম পুরণ বাবদ টাকা জমা দিয়ে আসি। গতকাল বুধবার মডেল টেস্ট শুরম্ন হওয়ায় আগের দিন মঙ্গলবার ডালিম স্কুলে প্রবেশপত্র আনতে যায়। এ সময় স্কুলের সহকারী শিক্ষক মামুনর রশিদ মাসুদ জানায় মডেল টেস্টের জন্য টাকা জমা না দেওয়ায় সে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না।
তিনি জানান, সহকারী শিক্ষক মাসুদের এমন কথা শুনে হতবাক হয়ে যায় ডালিম। সে জানায় আপনার হাতেই আমি ও আমার ভাইয়া এসে টাকা জমা দিয়েছি। আজ আপনি বলছেন টাকা দেইনি। স্যার আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। ডালিমের এমন কথা শুনে শিক্ষক মাসুদ বলেন, ‘তোমার পরীক্ষা দিয়ে কাজ নেই। তোমার তো চেহারা সুরত ভালো, তুমি মডেল টেস্ট না দিয়ে মডেলিং করো। এতে ভাল করবে।’ শিক্ষক মাসুদের এ ধরণের কুরম্নচীপুর্ণ কথা-বার্তা শুনে ছুটে ডালিম ছুটে যায় অধ্যক্ষ মঞ্জুরম্নল ইসলাম ডাবলুর কাছে। সেখানেও কোন সদুত্তর মেলেনি।
কোনো প্রতিকার না পেয়ে হতাশ হয়ে একপর্যায়ে কাঁদতে কাঁদতে সে বাড়ি ফিরে আসে। এর পর ঘরের দরজা বন্ধ করে নিজ ঘরের ডাবের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে ডালিম বলে জানায় তার ভাই।
ডালিমের এমন করম্নণ মৃত্যুতে শোকাবহ পরিবার। বাড়িতে বুধবারও চলছে আহাজারি। ভাই বোন আত্মীয়-স্বজনদেরও একই অবস’া। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ ডালিমের এই আত্মহননের দায় স্বীকার করতে নারাজ।
ডালিমের মা ফুলি বেগম জানান, মেয়েটা খুব শানত্ম। পড়ালেখায় বেশ মনোযোগি। অভাব-অনটনের সংসারে গরম্নর দুধ বিক্রি করে পরীক্ষার ফরম পুরণ করতে টাকা দেয়া হয়েছিল। কিন’ মাসুদ স্যার আমার মেয়েকে বাঁচতে দেয়নি। তার কারণেই মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমি মাসুদ স্যারসহ জড়িতদের শাসিত্ম চাই।
চাচা নুর হোসেন জানান, মৃত্যুর কারণ হিসেবে যখন জানতে পারি স্কুলের শিক্ষকের অসদাচরণের কারণে ডালিমের মৃত্যু হয়েছে তখন এলাকার লোকজনসহ শিক্ষক মাসুদ ও অধ্যক্ষ মঞ্জুরম্নল ইসলাম ডাবলুর কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়। কিন’ তারা কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেছে। হত্যায় প্ররোচণার দায়ে অভিযুক্ত শিক্ষক মাসুদের শাসিত্ম দাবি করেন তিনি।
স্কুল পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য কবরবাড়িয়া গ্রামের নুরম্নল ইসলাম জানান, ডালিমের মৃত্যুর জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষই দায়ী। আমরা অভিভাবক হিসেবে এই ডালিমের মৃত্যুর জন্য অধ্যক্ষ ও সহকারী শিক্ষকের শাসিত্ম দাবি করছি।
তবে ডালিমের মুত্যুর বিষয়ে কেএসএম স্কুল এন্ড কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরম্নদ্ধে অভিযোগ সঠিক নয় দাবী অভিযুক্ত অধ্যক্ষ ও সহকারী শিক্ষকের। যদিও তাদের দু’জনের কথায় অমিল খুঁজে পাওয়া যায়।
অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক মামুনুর রশিদ মাসুদ জানান, ডালিম কখনই মডেল টেস্টের জন্য ফরম পুরণ করতে আসেনি। এমনকি টাকাও জমা দেয়নি।
মঙ্গলবার প্রবেশপত্র নিতে আসার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। একই সাথে আপত্তিকর কোনো কথাও বলেননি বলেও দাবী করেন তিনি।
অধ্যক্ষ মঞ্জুরম্নল ইসলাম ডাবলু বলেন, প্রবেশপত্র নিতে এসেছিল ডালিম। কিন’ ফরম পুরণ না করায় সে পরীক্ষার সুযোগ হারিয়েছে। এতে আামদের গাফিলতির কোনো সুযোগ নেই।
এ ব্যাপারে জগতি পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ আল আমীন জানান, বিষয়টি শুনেছি। তবে ডালিমের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও অভিযোগ পাইনি।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post