খুলনাঞ্চলের সীমানেত্ম চামড়া পাচার রোধে সতর্কাবস্থায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ভারতীয় গরু আসলে দাম কমতে পারে

বি এম রাকিব হাসান, খুলনা ব্যুরো: এবার টানা ১৫ দিন কোরবানীর চামড়া পাচার রোধে সতর্ক অবস’ায় থাকবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। খুলনাঞ্চলের সীমানত্মবর্তী ৪টি করিডোরে থাকছে বিশেষ নজরদারি। ব্যবসায়ীদের দাবীর মুখে কর্তৃপড়্গ এমন সিদ্ধানত্ম নিয়েছেন। ফলে এ অঞ্চলের চামড়া ব্যবসায়ী ও মৌসুমী ব্যবসায়ীদের মাঝে সৃষ্ট আতংক কাটতে শুরম্ন করেছে। তবে প্রতিদিন সীমানেত্মর ৪টি করিডোর দিয়ে ভারতীয় গরম্ন আসায় এ অঞ্চলের খামারীরা বিপাকে পড়েছে। কিন’ কোরবানীর গরম্ন কেনা ক্রেতারা ভারতীয় গরম্নর অনুপ্রবেশের খবরে স্বসিত্ম ফেলছে। গরম্নর বাজারমূল্য আগুন থাকায় ভারতীয় গরম্ন আসলে সে আগুন কিছুটা কমতে পারে বলে ক্রেতারা মনে করেন।
সূত্রমতে, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার কোরবানীর পশুর চামড়া পাচারের আশংকা রয়েছে বলে কয়েকটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর সাথে গত ২০ আগষ্ট খুলনাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা খুলনার ফেরিঘাট, ব্রীজ এলাকা এবং সাতড়্গীরার সীমানত্মগুলো দিয়ে যাতে চামড়া পাচার না হয় তার দাবি জানান সরকারের কাছে। অবশেষে চামড়া পাচার রোধে আইন শৃঙ্খলা রড়্গকারী বাহিনী টানা ১৫ দিন বিশেষ নজরদারির ব্যবস’া গ্রহন করে। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর পর্যনত্ম পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি সহ সংশিস্নষ্ট আইন শৃঙ্খলা সংস’া ও গোয়েন্দা সংস’া সর্তক অবস’ায় থাকবে।
এদিকে ব্যবসায়ীরা বলেন, ভারতের কয়েকটি প্রদেশে গরম্ন জবাই বন্ধ থাকলেও ট্যানারি বন্ধ হয়নি। আর সেকারণে এবারের চামড়া ভারতে পাচার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের সীমানত্ম দিয়ে তাই ভারতীয় বস্নাকাররা চামড়া পাচারে এবার আরো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এ অঞ্চলের চোরাচালানীরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন মোকামে বস্নাকে চামড়া নিতে অর্থলগ্নি করছে। খুলনাঞ্চলের সীমানত্ম তথা অবৈধ ঘাটগুলো দিয়ে প্রতি বছর চামড়া পাচার হয়। খুলনাঞ্চলে ৪টি করিডোরের মধ্যে রয়েছে কলোরোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া, সাতড়্গীরা জেলা সদরের সাতানী, সাতড়্গীরার কালিগঞ্জের বসনত্মপুর ও দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া। গত কয়েকদিন ধরে ট্রাকযোগে করিডোর অতিক্রম করে হরিয়ানা জাতের গরম্ন আসছে। পশু মোটাতাজাকরণ প্রকল্পের আওতায় খামারীরা জেলার পশুর হাটগুলোতে গরম্ন ছাগল আনতে শুরম্ন করেছে।
খুলনাঞ্চলের উলেস্নখযোগ্য পশুর হাটগুলো হচ্ছে কলারোয়ার হাট, সাতমাইল হাট, দেবহাটার পারম্নলিয়ার হাট, কালীগঞ্জের হাট, শ্যামনগরের হাট, সাতড়্গীরা সদর হাট, আশাশুনির হাট, তালার হাট, দিঘলিয়া উপজেলার পথের বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বারাকপুর স্কুল মাঠ ও মোলস্না জালাল উদ্দিন কলেজ মাঠ, রূপসা উপজেলার পিঠাভোগ পূর্বপাড়া, বাগমারা ও আমতলা, পাইকগাছা উপজেলার বাকা, গদাইপুর, চাঁদখালী ও কাছিকাটা, ডুমুরিয়া উপজেলার বানিয়াখালী, খর্ণিয়া, চুকনগর, সাহাপুর, কয়রা উপজেলার আমাদী, হোগলা, ঘুগরা কাঠি, গিলেবাড়ী, হায়াতখালী ও বানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ, দাকোপ উপজেলার চালনা ও বাজুয়া, ফুলতলা উপজেলা সদরের তাজপুর, তেরখাদা উপজেলা সদরের ইখড়ি কাটেঙ্গা, ও আঠারো মাইল, বটিয়াঘাটা উপজেলার বারোরিয়া ছাগলের হাট ও খুলনা মহানগরীর জোড়াগেট। কেসিসি’র সূত্র জানায়, আগামী শনিবার থেকে জোড়াগেটে পশুর হাট বসতে শুরম্ন করবে। পশুর হাটের নিরাপত্তায় ৮টি সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। কেএমপির একটি অস’ায়ী পুলিশ ক্যাম্প ও জালনোট প্রতিরোধের জন্য মেশিন বসানো হবে।
অপরদিকে, ব্যাংক ঋণের অপ্রতুলতা, লবনের মূল্য বৃদ্ধি, পুজি সংকট, ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া বিক্রির টাকা সময় মত না পাওয়া, রাজনৈতিক অসি’রতাসহ নানা কারণে সুযোগ বুঝে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের চামড়া বাজারের নিয়ন্ত্রন নিতে কোটি কোটি টাকার পুজি লগ্নি করেছে। এ ড়্গেত্রে অনেক পুজিপতিরা হুন্ডির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা খুলনাঞ্চলে বিনিয়োগ করছে। এ কারনে এবারের কোরবানির চামড়া খুলনাঞ্চলের ব্যবসায়ী ও টেনারি মালিকদের হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্রমতে, গত অর্ধযুগে চামড়া পাচার বেড়েই চলেছে। আসছে কোরবানী। অথচ খুলনাঞ্চলের চামড়া ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি নেই। মূলধনের অভাবে ব্যবসায়ীরা সাধারণত বাকিতে বেচা কেনা করেন। পরবর্তীতে ঢাকার আড়ৎ থেকে বকেয়া টাকা আদায়ে ড়্গুদ্র ব্যবসায়ীরা হাপিয়ে ওঠে। প্রায় শত বছর পূর্বে গড়ে ওঠা খুলনা শের-এ-বাংলা রোডের চামড়া পট্টিতে কাঁচা চামড়ার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল প্রায় দুই শতাধিক। এর মধ্যে এখন কোনও রকমে টিকে আছে মাত্র ২/৩টি প্রতিষ্ঠান। ঈদের আগেই ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে লবণের দাম বৃদ্ধি করতে শুরম্ন করেছে। এক বসত্মা লবণ এখন কিনতে হচ্ছে ১২৫০ টাকা দিয়ে। সব মিলিয়ে চামড়া ব্যবসায়ীদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তাই বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত এই চামড়া শিল্পের উন্নয়নে ব্যবসায়ীদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা না গেলে দেশের রাজম্ব কমবে বলে ধারণা ব্যবসায়ীদের।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post