বি এম রাকিব হাসান, খুলনা ব্যুরো: প্রায় শত বছরের পুরোনো খুলনা মহানগরীর শেরে বাংলা রোডের পাওয়ার হাউস মোড়ের চামড়া পট্টি। সে সময়ের জমজমাট চামড়া ব্যবসার জৌলুস এখন আর নেই। ব্যবসা ছেড়ে অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন অধিকাংশ চামড়া ব্যবসায়ী। মূলত নির্দিষ্ট স’ান ও পুঁজি সংকট, বকেয়া টাকা আদায় না হওয়া, ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্য, লবণের মূল্যবৃদ্ধি ও চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংক ঋণ সুবিধা না পাওয়াসহ নানা কারণে ব্যবসা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে তারা। এমতাবস’ায় অনিশ্চিয়তার মধ্যে রয়েছে খুলনার চামড়া ব্যবসা। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত এই চামড়া শিল্পের উন্নয়নে ব্যবসায়ীদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা না গেলে দেশের রাজম্ব কমবে বলে ধারণা ব্যবসায়ীদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রায় শত বছর পূর্বে গড়ে ওঠা এই চামড়া পট্টিতে কাঁচা চামড়ার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল প্রায় দুই শতাধিক। এর মধ্যে এখন কোনও রকমে টিকে আছে মাত্র ২/৩টি প্রতিষ্ঠান। সেই সব দোকানগুলো আজ পরিণত হয়েছে লোহা লক্কর আর গ্যারেজের দোকানে। আর দুই শতাধিক ব্যবসায়ীর মধ্যে এখন আছে মাত্র ১২ জন। চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসায় পুঁজি খাটিয়েও ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে দীর্ঘদিনের বকেয়া আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে চাহিদানুযায়ী ব্যাংক ঋণও পাচ্ছেন না তারা। এতে পুঁজি সংকটে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। আবার ব্যবসার জন্য দোকান পাওয়াও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। বাড়িওয়ালাদের চাপে ইতোমধ্যেই ঘর ছেড়ে দিয়েছেন অধিকাংশ ব্যবসায়ী। এমতাবস’ায় ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ব্যবসায়ীদের দুঃচিন-া ততই বাড়ছে। নির্দিষ্ট দোকান ও চামড়া মজুদ রাখার স’ান এবং পুঁজি না পেলে ঈদে চামড়া কেনায় বিপাকে পড়বেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিযোগ, সিটি কর্পোরেশনের কাছে প্রতিবছর জায়গা বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করলেও কোনও
পদক্ষেপই নেয়া হচ্ছে না। নগরীর জোড়াগেট কাঁচা বাজার, গল্লামারী অথবা অন্য কোথাও জায়গা খুঁজতে বললেও কার্যকর কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। এ সংকট উত্তরণে স’ানীয় প্রশাসনসহ সরকারের হস-ক্ষেপ কামনা করেছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে গত বছরের ন্যায় এবারও চামড়ার মূল্য সস-া হতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের। বর্তমানে গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৬০ টাকা এবং খাসির চামড়া ২০ টাকা দরে চলছে। ব্যবসায়ীদের মতে, কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের ব্যাংক ঋণ দেয়া হয় চলতি হিসাবের বিপরীতে। তার পরও ব্যাংকে সম্পত্তির দলিল জমা দিতে হয়। চামড়া বিক্রির টাকা ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়া পড়ে আছে অন-ত ৮ কোটি টাকা। ব্যবসা ভালো নয় বলে তারাও টাকা দিচ্ছে না। তাই এ অবস’ায় চরম দুশ্চিন-ায় পড়েছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা।
চামড়া ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার বলেন, ‘ব্যবসা আর চালানোর মত নেই। পুঁজি নেই, ঘর নেই ব্যবসা চলবে কি করে। অনেকেই ব্যবসা ছেড়ে দিছে। আমরাও আছি খুব বিপদে। এমনিতেই নির্দিষ্ট দোকান নেই, পুঁজি নেই তার ওপর আবার শ্রমিক সংকট, লবণের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি ৭০ কেজি বস-ায় ওজনে ৫/৬ কেজি কম থাকে। ঈদের আগেই ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে লবণের দাম বৃদ্ধি করতে শুরু করেছে। এক বস-া লবণ এখন কিনতে হচ্ছে ১২৫০ টাকা দিয়ে। সব মিলিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। প্রশাসন যদি কোনও ব্যবস’া না করে তাহলে পরিবার নিয়ে রাস-ায় বসতে হবে।’
খুলনা জেলা কাঁচাচামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমান উল্লাহ বলেন, ‘নির্দিষ্ট স’ান নেই আমাদের। চামড়া সংরক্ষণের কোনও জায়গাও নেই। কাঁচাচামড়ায় দুর্গন্ধ ছড়ায় বলে বাড়িওয়ালারা আমাদের কাছে দোকান ভাড়া দেবেন না। ইতোমধ্যে অধিকাংশ দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন ও জেলা প্রশাসকের নিকট একটি নির্দিষ্ট স’ানের দাবি নিয়ে বার বার আলোচনা করেও বিষয়টির কোনও সুরাহা হয়নি। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আবারও যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। এমপি মহোদয় সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলেও কিছু হল না। জোড়াগেটের কাঁচা বাজার তো আদৌও চালু হয়নি। এই মুহুর্তে কাঁচা বাজারটা আমাদের প্রয়োজন। এবারের ঈদে খুবই চিনি-ত আমরা। বর্ষাকালে রাস-ায় চামড়া রাখা যাবে না নষ্ট হয়ে যাবে। এখানে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করলে সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও পরিবার-পরিজন নিয়ে বাঁচতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, ‘বিগত পাঁচ বছর ধরে ৮/১০ কোটি বকেয়া টাকা এখনও আদায় না হওয়ায় আমরা অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও আছি। পুঁজি সংকটে ব্যবসা ছেড়ে দিছে অনেক ব্যবসায়ী। এতে খুলনার চামড়া ব্যবসা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। তবে এমন শঙ্কার মধ্য দিয়েও গত বছর ২০ হাজার গরু এবং ২৫ হাজার ছাগলের চামড়া সংরক্ষণ করতে সক্ষম হন খুলনার এই চামড়া ব্যবসায়ীরা। স’ান নির্ধারণ এবং অথের্র যোগান না হওয়া পর্যন- এবারের ঈদে চামড়া কেনা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন সকল চামড়া ব্যবসায়ীরা। তিনি আরও বলেন, ‘ভারতে কিন’ গরু জবাই বন্ধ থাকলেও ট্যানারি বন্ধ হয়নি। আর তাই এবারের চামড়া ভারতে পাচার হওয়ার সম্ভাবনা