আপন জুয়েলার্সের গোপন কুঠুরিতে আরো ২২ কেজি সোনা জব্দ স্বর্ণ জব্দ হলেও আপন জুয়েলার্সের ব্যবসা চলবে : শুল্ক গোয়েন্দা

 

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর গুলশান ডিসিসি মার্কেটে আপন জুয়েলার্সের শোরুমের গোপন কুঠুরি থেকে আরও ২২ কেজি স্বর্ণ জব্দ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর। গতকাল রোববার শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) মইনুল খান এসব তথ্য জানান। তবে বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারায় আনুষ্ঠানিকভাবে সাড়ে ১৩ মণ স্বর্ণ জব্দ করা হলেও ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় আপন জুয়েলার্সের বাধা নেই বলে জানিয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নুরুল হুদা আজাদ। অপরদিকে আপন জুয়েলার্সের কারণে অনেকের বিয়ে ভাঙার উপক্রম হয়েছে।

জানা গেছে, গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় শুল্ক গোয়েন্দার ১টি দল গুলশান-১ ডিসিসি মার্কেট শাখায় স্বর্ণ ও ডায়মন্ড জব্দের জন্য আপন জুয়েলার্সে অভিযান চালায়। এসময় অভিযান চালিয়ে আপন জুয়েলার্সের শোরুমের অভ্যন্তরে ১টি গোপন কুঠুরির সন্ধান পায় গোয়েন্দারা। সেখানে তল্লাশি চালিয়ে আরও ২২ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করে তারা। সেগুলো বাজেয়াপ্ত ও জব্দ করে গোয়েন্দা হেফাজত ও পরে বাংলাদেশ ব্যাংকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে জব্দকৃত ঐ স্বর্ণের ব্যপারে আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

এদিকে আপন জুয়েলার্সের উত্তরা শোরুমে ইয়াবা ও বিদেশি মদের সন্ধানে তল্লাশি চালিয়েছে গোয়েন্দারা। এই শোরুমেই বসতেন আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিমের ছেলে ও বনানীতে ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামী সাফাত আহমেদ। এর আগে রাজধানীতে আপন জুয়েলার্সের ৫টি শোরুমে অভিযান চালায় শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। ঐ সময় তারা প্রায় সাড়ে ১৩ মণ সোনা ও ৪২৭ গ্রাম হীরা জব্দ করে।

শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নুরুল হুদা আজাদ জানান, বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারায় আনুষ্ঠানিকভাবে সাড়ে ১৩ মণ স্বর্ণ জব্দ করা হলেও ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় আপন জুয়েলার্সের বাধা নেই। আপন জুয়েলার্সের বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার ও হীরা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

শুল্ক গোয়েন্দার এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ব্যবসায়িক কার্যক্রম নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল যে আপন জুয়েলার্সের কাছে স্বর্ণের বৈধ কাগজপত্র নেই। সময় নিয়েও তারা তা দেখাতে পারেননি। যে কারণে তাদের সাড়ে ১৩ মণ স্বর্ণ জব্দ করা হয়েছে। শোরুমগুলো আর সিলগালা থাকছে না। বিকেলেই আপন জুয়েলার্সের ৫টি শোরুম তাদের কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়া হবে। এখন থেকে তারা ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালাতে পারবেন। তিনি বলেন, স্বর্ণ ক্রয়বাবদ অগ্রিম বুকিংকারীদের তালিকা তৈরি হয়েছে। ক্যাটাগরি ও তালিকা অনুযায়ী একটি ব্যবস্থা নেয়া হবে। তালিকা মালিকপক্ষ ও আমাদের কাছে থাকছে। গ্রাহকরা কাগজ দেখিয়ে অর্ডারের পণ্য নিতে পারবেন।

অপরদিকে পারিবারিক সিদ্ধান্তে স্বপ্নার (ছদ্মনাম) বিয়ের দিন ধার্য হয় গত ৩০ মে। মে মাসের শুরুতে আপন জুয়েলার্সের ডিসিসি মার্কেটের শোরুম থেকে মোট ১২ ভরি স্বর্ণালঙ্কারের অর্ডার দেন। অগ্রিম জমা দেন ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। কিন্তু গত ১৪ ও ১৫ মে হঠাৎ শুল্ক গোয়েন্দারা আপন জুয়েলার্সের ৫টি শোরুম থেকে মোট সাড়ে ১৩ মণ স্বর্ণ ও ৪২৭ গ্রাম ডায়মন্ড সাময়িকভাবে জব্দ করে। এতে বিপদে পড়েন স্বপ্না। এরপর অনেক দেনদরবার করেও স্বর্ণের অলঙ্কার কিংবা টাকা কোনোটাই ফেরত পাননি তিনি।

তিনি বলেন, আমাকে স্বর্ণ দিতে না পারলে টাকা ফেরত দিক। কিন্তু তারা টাকাও দিচ্ছে না, স্বর্ণও দিচ্ছে না। স্বর্ণ কিংবা টাকা ফেরত না পাওয়ায় প্রথম ধাপে বিয়ে পিছিয়েছে। ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকার স্বর্ণ তো রাতারাতি কেনা আমার পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়। যে কারণে বিপাকে আছি। বিয়ে ভাঙার ভয়ে প্রকাশ্যে কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারছি না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিসিসি মার্কেটের আপন জুয়েলার্স শোরুমের ম্যানেজার মো. নান্নু বলেন, আমরা কোনো গ্রাহককে হয়রানি করতে চাই না। কিন্তু শুল্ক গোয়েন্দারা সব স্বর্ণ ও অলঙ্কার জব্দ করায় আমরা কোনো অগ্রিম ক্রেতাকে স্বর্ণ দিতে পারছি না। টাকা ফেরত দিতে গেলেও একটি প্রক্রিয়া রয়েছে। বিষয়টি সরাসরি মালিকপক্ষ দেখভাল করে।

উল্লেখ্য, গত ২৮ মার্চ রাজধানীর বনানীর ‘দ্য রেইনট্রি’ হোটেলে জন্মদিনের পার্টিতে ডেকে নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ২ ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়- এমন অভিযোগ এনে বনানী থানায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী ২ তরুণী। মামলায় অভিযুক্ত ১ জন আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার হোসেনের ছেলে সাফাত আহমেদ। সাফাতসহ ৫ আসামি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। ঐ ঘটনার পর আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ‘অবৈধ সম্পদ’ খুঁজতে তার প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালায় শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর। এছাড়া বিভিন্ন মহল থেকে আপন জুয়েলার্স বর্জনেরও দাবি ওঠে।

শুল্ক গোয়েন্দারা গত ১৪ ও ১৫ মে আপন জুয়েলার্সের গুলশান ডিসিসি মার্কেট, গুলশান এভিনিউ, উত্তরা, সীমান্ত স্কয়ার ও মৌচাকের ৫টি শোরুমে অভিযান চালিয়ে প্রায় ১৩.৫ মণ স্বর্ণ ও ৪২৭ গ্রাম ডায়মন্ড সাময়িকভাবে জব্দ করে। এগুলো পরে আইনানুগভাবে প্রতিষ্ঠানের জিম্মায় দেয়া হয়। আত্মপক্ষ সমর্থনে আপন জুয়েলার্স কর্তৃপক্ষকে ৩ বার সুযোগ দিলেও তারা কোনো বৈধ কাগজ দেখাতে পারেনি। তবে আপন জুয়েলার্স মালিকপক্ষের দেয়া ১৮২ জনের তালিকার মধ্যে ৮৫ জন প্রকৃত গ্রাহককে মেরামতের জন্য জমা রাখা প্রায় ২.৩ কেজি স্বর্ণালঙ্কার অক্ষত অবস্থায় ফেরত দেন শুল্ক গোয়েন্দারা।

Post a Comment

Previous Post Next Post