রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ৫ শতাধিক গ্রাহকের প্রায় অর্ধকোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে একটি এনজিও। উধাও হয়ে যাওয়ার পর থেকেই দিশেহারা হয়ে পড়েছেন দরিদ্রঘরের এসব গ্রাহকরা। গত বুধবার দুপুরে উপজেলার গোলাকান্দাইল মধ্যপাড়া এলাকায় অবস্থিত পল্লী প্রগতি ফাউন্ডেশন নামের ভুয়া এনজিও’র সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
প্রতারিত গ্রাহকরা জানান, গত ১১ দিন আগে গোলাকান্দাইল মধ্যপাড়া এলাকার সৈয়দ মীরের বাড়িতে অফিস ভাড়া নেয় পল্লী প্রগতি ফাউন্ডেশন (পিপিএফ) নামে একটি এনজিও। সেখানে যুব প্রশিক্ষণ ও মানবিক সহযোগিতা প্রকল্প নামে একটি সাইনবোর্ডও স্থাপন করা হয়। মূল অফিস ঠিকানা দেয়া হয়েছে, কঙ্বাজার জেলার চকরিয়া থানার পূর্বকাকারা বাজারবাড়ী এলাকা। অফিস খোলে কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেন।
এনজিও’র চেয়ারম্যান সুলতানা বেগম ও ম্যানেজার মামুনসহ অফিস কর্মকর্তারা সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করবেন বলে পুরো এলাকাতে প্রচার করেন।
৫ দিনের মাথায় কালীবাড়ি, বাজবী, মাহনা, দড়িকান্দি, গোলাকান্দাইল, কান্দাপাড়া, সাওঘাটসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৫ শতাধিক গ্রাহক হয়ে যায় এনজিওটিতে। গ্রাহকদের বুঝানো হয়, ১০ হাজার টাকা জমা রাখলে ১ লাখ টাকা ঋণ দেয়া হবে, ৫ হাজার টাকা জমা রাখলে ৫০ হাজার টাকার ঋণ দেয়া হবে, ৩ হাজার টাকা জমা রাখলে ৩০ হাজার টাকা ঋণ দেয়া হবে। আর টাকা জমার ৫ দিনের মধ্যেই ঋণ পরিশোধ করা হবে। এর পর থেকেই গ্রাহকরা ঋণের আশায় টাকা জমা দিতে শুরু করেন।
পল্লী প্রগতি ফাউন্ডেশন (পিপিএফ) নামে একটি এনজিওতে গ্রাহক নবী হোসেন ৩২ হাজার, আব্দুর রশিদ ১০ হাজার, হেনা বেগম ১০ হাজার, নাজমা বেগম, ২০ হাজার, মামুন মিয়া ৭ হাজার, লতিফ মিয়া ৫ হাজার, আল-আমিন ১০ হাজার, আক্তার হোসেন ১০ হাজার, দাউদ মোল্লা ১০ হাজার, বাচ্চু মিয়া ৩ হাজার, হালিম মিয়া ১ লাখ ৬ হাজার, মমতাজ বেগম ৪৫ হাজার টাকা জমা প্রদান করে প্রতারিত হয়েছেন। এ ধরনের অসংখ্য গ্রাহকের অভিযোগের শেষ নেই। এসব গ্রাহকদের প্রায় অর্ধকোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে এনজিওটি।
গত বুধবার সকালে গ্রাহকরা ঋণ তুলতে এসে দেখতে পান পল্লী প্রগতি ফাউন্ডেশন (পিপিএফ) নামে একটি এনজিওটিতে তালা ঝুলছে। মালপত্র গুছিয়ে এনজিও’র কর্মকর্তারা পালিয়ে গেছে। এরপর প্রতারিত গ্রাহকরা সেখানে বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু করেন। এনজিও’র দুনির্তীবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রূপগঞ্জ থানায় একাধিক গ্রাহক অভিযোগ দায়ের করেছেন। প্রতারিত গ্রাহকরা আরো জানান, ঋণের আশায় কেউ কেউ স্বর্ণালঙ্কার ও গরু ছাগল বিক্রি করে, আবার কেউ কেউ বিভিন্ন স্থান থেকে ধারদেনা করে তারা এনজিওতে টাকা জমা প্রদান করেছেন। ঋণের টাকা পাওয়াতো দূরের কথা এখন যে টাকা জমা দেয়া হয়েছে তা ফেরত পেলেও রক্ষা পাওয়া যাবে।
কলামিস্ট, গবেষক লায়ন মীর আব্দুল আলীম বলেন, গ্রামের সহজ-সরল মানুষগুলো বুঝে না বুঝে হায় হায় কোম্পানির প্রতারণার শিকার হচ্ছে। এসব হায় হায় কোম্পানির প্রতারণা থেকে বাঁচতে হলে মানুষকে সযাগ থাকতে হবে। এনজিও বা সমিতির খোঁজখবর নিয়ে এগুনো প্রয়োজন। রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন বলেন, একটি এনজিও’র বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত মোতাবেক ঐ এনজিও’র কর্মকর্তাদের বের আইনের আওতায় আনা হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানা ইসলাম বলেন, পল্লী প্রগতি ফাউন্ডেশন (পিপিএফ) নামে এনজিও আছে কি না আমাদের জানা নেই। এছাড়া প্রতারিত গ্রাহকরা যদি আমাদের কাছে অভিযোগ করে অবশ্যই তদন্ত ঐ এনজিও’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।