সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : বিস্ময়কর করারোপের মাধ্যমে জনগণকে আতঙ্কগ্রস্ত করা এবং উন্নয়নবান্ধব সরকারকে অজনপ্রিয় করার দায়ে অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেছেন, বাজেটে নাগরিক স্বার্থ পরিপন্থী করারোপের মাধ্যমে অর্থমন্ত্রী সাধারণ মানুষকে ব্যাংকবিমুখ করার উদ্যোগ নিয়েছেন। গতকাল রোববার রাজধানীর কমরেড মনি সিংহ সড়কের ‘মুক্তি ভবনে’ সিটিজেনস রাইটস মুভমেন্টের উদ্যোগে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে তারা এসব কথা বলেন। বক্তারা বলেন, কোনো পণ্যকে (মদ, গাঁজা ও আফিম ইত্যাদি) নিরুৎসাহিত করতে আবগারি শুল্ক বসানো হয়। জনগণকে ব্যাংকমুখী করাই ১টি আধুনিক রাষ্ট্র তথা ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রধান লক্ষ্য। ১টি রাষ্ট্রে অর্থনীতির গতিময়তা বৃদ্ধি ও চাঙা করার অন্যতম উপায় হচ্ছে গণমানুষকে ব্যাংকমুখী করা। কিন্তু আমরা দেখছি এবারের বাজেটের বেপরোয়া করারোপের দিকটি। এই করারোপ মানুষের মনে অসহনীয় তাপদাহ সৃষ্টি করছে, যা মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণীকে গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ফেলেছে। জনগণ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে গণহারে ব্যাংকবিমুখ হবে এবং তাদের কষ্টার্জিত সঞ্চিত অর্থ কোথায় রাখবে, কি করবে তা নিয়ে শঙ্কায় পড়বে। অগত্যা সঞ্চিত/নগদ অর্থ ব্যাংকে না রেখে মাটির ব্যাংকে, বাঁশের ফাঁক-ফোঁকরে, বালিশের মধ্যে রাখতে চাইবে। দিশেহারা জনগণ এই ব্যাংকিং দুরবস্থায় ছত্রাকের ন্যায় গজিয়ে ওঠা ভুইফোঁড় সমবায় পদ্ধতির জালে, পাড়া-মহল্লায় গজিয়ে ওঠা অননুমোদিত সমবায় সমিতির ঘেরে আটকা পড়বেন। সাধারণ মানুষ অধিক মুনাফার লোভে অতি অল্পসময়ে ১ লাখ টাকা দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে চড়াসুদে নগদ অর্থলগি্ন করার চক্রের ফাঁদে জড়াবে।
তারা বলেন, ১ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা রাখলে আবগারি শুল্ক কাটা হবে ৪শ টাকা, হিসাব পরিচালনা মাশুল ৪শ টাকা। আর যদি গ্রাহকের এটিএম কার্ড থাকে সেক্ষেত্রে আরও ৩শ টাকা। ১ লাখ টাকায় বার্ষিক সুদ প্রদান করা হবে ৪শ টাকা। এই সুদ থেকে কর কাটা হবে ১৫ শতাংশ অর্থাৎ ৬০ টাকা। আমানতকারী বছর শেষে ১ লাখ টাকায় সুদ পাবেন ৩৪০ টাকা। আর মূলধন থেকে খোয়াবেন ৮৬০ টাকা, অনেক ক্ষেত্রে ১১৬০ টাকা পর্যন্ত। জনগণ গভীর আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্গে ব্যাংকে টাকা আমানত রাখেন। প্রকৃত অর্থে ব্যাংকে জমাকৃত গ্রাহকের (জনগণ) এই অর্থ নিরুপদ্রব ও সুরক্ষার দায়িত্ব সরকারের (ব্যাংক বিধিমালা যথার্থ মান্য করার ক্ষেত্রে সরকারই এই দায়িত্ব অর্থলগি্নকারী প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছে)। আমরা অতি সম্প্রতি জেনেছি, গত প্রায় ২ যুগ ধরে আমানতকারীর হিসাব থেকে গ্রাহককে না জানিয়েই আবগারি শুল্ক নামে টাকা কর্তন করা হচ্ছে। এতদিন গ্রাহকের হিসাব থেকে যে পদ্ধতিতে টাকা কাটা (সরানো) হতো তাকে স্রেফ চুরি হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায়।
তারা আরও বলেন, নাগরিকের ব্যাংকে গচ্ছিত আমানতের ওপর কর পরিশোধের পর বৈধ টাকা সুরক্ষার পরিবর্তে ব্যাংকে গচ্ছিত মূল টাকা থেকে বিভিন্ন উপায়ে করারোপের মাধ্যমে টাকা কেটে নেয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রের এই অধিকার থাকার কথা নয়। এটা অবৈধ, সংবিধানের পরিপন্থী। এটি বৈধ সম্পত্তি আত্মসাৎ করার শামিল এবং এটি অবশ্যই বেআইনি।
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিটিজেনস রাইট্স মুভমেন্টের মহাসচিব তুসার রেহমান। এসময় অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন- লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, বিশিষ্ট পরিবেশবিদ প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক, বাংলাদেশ এনভায়নরমেন্ট ডেভেলপোমেন্ট ফোরামের সভাপতি প্রকৌশলী সরদার আমিন প্রমুখ।