ইফতার তৈরির উপকরণের দামে আগুন নির্ধারিত দরের চাইতে বেশি দরে বিক্রি হয়েছে গরু ও খাসির মাংস বাজার মনিটরিং হচ্ছে না
মো. কামরুজ্জামান : আজ থেকে শুরু হচ্ছে পবিত্র সিয়াম সাধনার মাস মাহে রমজান। মনের কু-প্রবৃত্তিকে ধ্বংস করে সংযম প্রদর্শন করাই এই সময়ের লক্ষ্য হলেও রাজধানীর বাজারগুলোতে মিলছে এর উল্টো চিত্র। কে কার চাইতে কত বেশি মুনাফা লুটে নিতে পারেন তার প্রতিযোগিতায় যেন মেতে উঠেছেন ব্যবসায়ীরা। অথচ পণ্যের মজুদ প্রয়োজনের চাইতে বেশি থাকায় এবার নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণেই থাকবে বলে গত কয়েকদিন আগেই আশ্বাস দিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তবে তার এই কথার সত্যতা এখন বাজারগুলোতে নেই বললেই চলে। বেগুন, টমেটো, শসা, চিনি, রসুন, মাছ, মাংস, ছোলাসহ প্রায় সব পণ্যের দরই বেড়েছে গত দুই দিন ধরে। বিশেষ করে ইফতার তৈরির উপকরণগুলোর দামে যেন আগুন লেগেছে। আর রোজার আবহে নির্ধারিত দরের চাইতে ২০-২৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হয়েছে গরু ও খাসির মাংস। সাধারণ ক্রেতাদের অভিমত, ব্যবসায়ীদের চোখ অতি মুনাফায়। যেকোন উপায়ে ক্রেতাদের পকেট থেকে অতিরিক্ত অর্থ নেয়াই যেন তাদের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হয়ে গেছে। আর তাই সংযম প্রদর্শনের পরিবর্তে অসহনীয় এক পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রমজানের একদিন আগে ১০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি শসা বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায় আর টমেটো প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। গেল সপ্তাহেও এই টমেটোর দাম ছিলো ৩০ থেকে ৪০ টাকা। গতকাল রোজার অতি প্রয়োজনীয় জিনিস বেগুন প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকায়, আবার কোথাও কোথাও এ দাম ৮০ টাকাও ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে কাঁচা মরিচের দাম ছিলো প্রতিকেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। গাজরের দাম বেড়ে দ্বিগুন হয়ে বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। এছাড়া প্রতি হালি লেবু আগের সপ্তাহের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়ে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। একই সঙ্গে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, বাঁধাকপি, করলা, কাকরোল, ধুন্দল, মুলা, কাঁচ কলা, কাঁচা পেঁপে, কচুসহ সাধারণ সবজির দামও আগের তুলনায় বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।
সবজির পাশাপাশি মাছ-মাংসের বাজারও গতকাল ছিলো টালমাটাল। বাজারগুলোতে প্রতি কেজি রুই ও কাতল মাছ ২০ থেকে ৪০ টাকা বেড়ে ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাঙ্গাস মাছের দাম ছিলো ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, কই ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা, টেংরা ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা এবং শিং মাছের দাম ছিলো ৪৪০ থেকে ৭০০ টাকা। গরুর মাংসের দাম ৪৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রির কথা থাকলেও প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৫০০-৫১০ টাকায়। খাসির মাংস ৭২০ থেকে ৭৮০ টাকা, ফার্মের মুরগি ১৬৫ থেকে ১৭৫ টাকা, মাঝারি আকারের পাকিস্তানি কক মুরগি প্রতি হালি ৬০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
গরুর মাংসের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাড্ডা বাজারের গরুর মাংস বিক্রেতা বেলাল হোসেন বলেন, একদিন পরেই (আজ) রোজা, তাই মাংসের দাম একটু বেশি। দুই-একদিন ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হবে। তারপর আবার দাম কমে যাবে। মূলত রোজার কারণেই দাম একটু বেড়েছে। সিটি কর্পোরেশন যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সেটা কেন রাখা হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে গরু এখন জবেহ করা হচ্ছে এর দাম কিন্তু বেশি। ফলে দুই-তিন দিন পর দাম কমবে। এখন কেউই কম দামে মাংস বিক্রি করছে না।
এদিকে রমজানের অতি দরকারী সামগ্রী ছোলার দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি ১০০ টাকার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হয়েছিলো ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। আর গতকাল সেই একই ছোলা বিক্রি হয়েছে ৮৫ থেকে ৯৫ টাকায়। এর বাইরে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হয়েছে ২০ টাকায়, দেশি পিঁয়াজ ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়, আমদানি করা রসুন ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়, লবণ ২৫-৪০ টাকায় এবং চিনি ৬৫-৭৫ টাকায়।
বাজার পরিস্থিতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উত্তর বাড্ডা বাজারে পণ্য কিনতে আসা ক্রেতা লোকমান খান বলেন, বাজারে কোন মনিটরিং নেই। ফলে সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণও নেই। আর এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা যে যার মতো দাম হাকিয়ে নিরবে আমাদের পকেট কাটছে। বেগুনের দাম দুই দিন আগেও ৩৫-৪০ টাকা ছিলো, আর এখন রোজার জন্য এর দাম ৭০-৮০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। ৬০ টাকার চিনি হয়েছে ৭০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছে সরবরাহ কম তাই দাম বেশি, অথচ বাজারে গিয়ে কোন পণ্যেরই সরবরাহ কম চোখে পড়ছে না। বরং প্রয়োজনের চাইতে বেশিই দেখছি। অথচ অতি মুনাফার লোভে আমাদেরকে নিয়ে তামাশা করা হচ্ছে।