মাত্রাতিরিক্ত কনটেইনার চাপে বিপাকে চট্টগ্রাম বন্দর

blding

kbdnews ডেস্ক : মাত্রাতিরিক্ত কনটেইনারের চাপে বিপাকে চট্টগ্রাম বন্দর। সাধারণত বন্দরের ৩০ শতাংশ জায়গা খালি রেখে ধারণক্ষমতার সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ কনটেইনার বন্দরে থাকলে তাকে আদর্শ অবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু বর্তমানে ওই বন্দরে ধারণক্ষমতার শতভাগের চেয়ে বেশি কনটেইনার পড়ে থাকছে। এমন পরিস্থিতিতে একক আমদানিকারকের পণ্যভর্তি (এফসিএল- ফুল কনটেইনার লোড) কনটেইনারের ওপর দ্বিগুণ হারে ডেমারেজ চার্জ ব্যবস্থা চালু করেও পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। বরং ব্যবসায়ীদের চাপে বন্দর কর্তৃপক্ষ ওই ডেমারেজ চার্জ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ফলে অতিরিক্ত এফসিএল কনটেইনার জমে থাকার কারণে বন্দরের পরিচালন কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটায় বড় ধরনের সঙ্কটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বন্দর সংশ্লিষ্ট ও ব্যবহারকারীদের সূত্র এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে সমুদ্রপথে দুই ধরনের কনটেইনারে পণ্য আমদানি-রফতানি করা হয়। তার একটি হলো এফসিএল, অন্যটি এলসিএল (লুজ কনটেইনার লোড)। একটি এফসিএল কনটেইনারে একজন আমদানিকারকের পণ্য থাকে। আর এলসিএল কনটেইনারে একাধিক আমদানিকারকের ভিন্ন ভিন্ন পণ্য থাকে। কনটেইনার ভাড়া কমানো ও খালাসে দুর্ভোগ এড়ানোর লক্ষ্যে ব্যবসায়িরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এফসিএল কনটেইনারে করে পণ্য আমদানি করছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের ধারণক্ষমতা ২৬ হাজার ৮৫৭ টিইইউএস কনটেইনার। তার বিপরীতে আদর্শ অবস্থার শর্ত অনুযায়ী সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ৭৯৯ টিইইউএস কনটেইনার থাকার কথা। কিন্তু ১ মার্চ পর্যন্ত বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে পড়ে ছিল ২৮ হাজার ৮১৭ টিইইউএস কনটেইনার। তার মধ্যে এফসিএল কনটেইনার ২৪ হাজার ১২৮টি, এলসিএল কনটেইনার ৬৯টি, বেসরকারি আইসিডিগামী কনটেইনার ৪ হাজার ৫৫২টি ও কমলাপুরগামী কনটেইনার রয়েছে ৬৮টি। ওসব কনটেইনারের বেশির ভাগেই রয়েছে তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামাল, মূলধনি যন্ত্রাংশ, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, ভোগ্যপণ্য ও খাদ্যশস্য।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরে পুরনো পদ্ধতিতে কার্যক্রম চালু থাকায় কনটেইনারের সংখ্যা ধারণক্ষমতা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এখনো বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া অর্ধেকের বেশি কনটেইনারের পণ্য বন্দরের মূল চত্বর থেকেই আমদানিকারকদের ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে বোঝাই করে খালাস নিতে হচ্ছে। বিশ্বের অন্য কোনো বন্দরের মূল চত্বর থেকে এভাবে এফসিএল কনটেইনারভর্তি পণ্য খালাসের নজির নেই। ওই পদ্ধতিতে একটি কনটেইনার খুলে পণ্য সরানোর জন্য ৩-৪টি কনটেইনার রাখার জায়গা দরকার হয়। আবার একই কনটেইনার জাহাজ থেকে নামানোর পরে বন্দর চত্বর থেকে সরানো পর্যন্ত কমবেশি ৬-৭ ধাপে ওঠানো-নামানো হয়। অথচ আন্তর্জাতিক মানদ- অনুসরণ করলে বন্দরে কোনোভাবেই ধারণক্ষমতার ৭০ শতাংশের বেশি কনটেইনার রাখা উচিত নয়। কারণ তার ব্যত্যয় ঘটলে কনটেইনার ওঠানো-নামানো, স্থানান্তর ও খালাসের মতো পরিচালন কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। এফসিএল কনটেইনারগুলো চট্টগ্রাম বন্দরের বদলে কেন বেসরকারি আইসিডিগুলোয় নিয়ে খালাসের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না তা কারোর বোধগম্য নয়। তাতে বন্দরের ওপর থেকে চাপ অনেকটাই কমে যেতো।

সূত্র আরো জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের মাত্রাতিরিক্ত কনটেইনারের কারণে যে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে তার মোকাবেলায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গত ডিসেম্বর থেকে এফসিএল কনটেইনারের ওপর দ্বিগুণ হারে ডেমারেজ চার্জ আরোপের সিদ্ধান্ত কার্যকর করে। ওই নিয়মে বন্দর ইয়ার্ডে থাকা প্রতিটি এফসিএল কনটেইনারের ক্ষেত্রে আগের ৬ ডলার ভাড়া বাড়িয়ে ১২ ডলার এবং ২৪ ডলার ভাড়া বাড়িয়ে ৪৮ ডলার নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষের ওই সিদ্ধান্তে আমদানিকারকরা প্রচ- ক্ষুব্ধ হন। ব্যবসায়িরা ডেমারেজ আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হলে সব ধরনের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে বলে হুমকি দেয়। সেই প্রেক্ষিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ দ্বিগুণ ডেমারেজ চার্জের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেয়।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে মাত্রাতিরিক্ত কনটেইনারের উপস্থিতি প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি মাহবুবুল আলম জানান, সমস্যা মোকাবেলার জন্য বন্দরের বাইরে কনটেইনার ইয়ার্ড নির্মাণ করতে হবে। তাছাড়া বেসরকারি ডিপোয় আরো বেশি সংখ্যক পণ্যভর্তি কনটেইনার খালাসে বাধ্যবাধকতা রেখে আইনও করতে হবে। তাছাড়া বর্তমানে যে পদ্ধতিতে কনটেইনার ওঠানো-নামানো হচ্ছে তা অদক্ষতারই ইঙ্গিত দেয়। ব্যবসায়ীরা কখনো চায় না কনটেইনার বেশি সময় বন্দরে ফেলে রাখতে। তবে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বেশি সময় কনটেইনার বন্দরে ফেলে রাখলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে একই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম চেম্বার পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ জানান, বন্দরে এফসিএল কনটেইনার সাধারণত ২২ হাজার থাকলে তাকে সহনীয় পর্যায় ধরা হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষের উচিত যন্ত্রপাতি বৃদ্ধিসহ বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো। পণ্য চালানের কাগজপত্র ছাড় ও স্ক্যানিংয়ে ধীরগতিসহ নানা কারণেই আমদানিকারকরা অনেক সময় কনটেইনার যথাসময়ে নিতে পারে না। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করা জরুরি।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে আমদানি করা এফসিএল কনটেইনারের সংখ্যা ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি হয়ে গেছে। তাতে বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘি্নত হচ্ছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ একাধিকবার ব্যবসায়ীদের আমদানিকৃত পণ্যভর্তি কনটেইনার ডেলিভারি নেয়ার পরিমাণ বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছে। কিন্তু আমদানিকারকদের অনেকেই বছরের পর বছর বন্দরে পণ্য ফেলে রাখছে। একাধিকবার তাগিদ দেয়ার পরও অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছে না। ওই কারণে ভাড়াও দ্বিগুণ করা হয়। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি উন্নতি হয়নি। বরং ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর চাপে বর্ধিত চার্জ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post