বি এম রাকিব হাসান, খুলনা ব্যুরো: খুলনার তেরখাদা উপজেলার ৬ ইউনিয়নে বিভিন্ন এলাকায় মৎস্য ঘেরে বিষ প্রয়োগ, ঘের লুট ও চুরি করে ক্ষতিসাধনসহ নানা কারণে ঘের মালিকরা চিংড়ি চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে। এক শ্রেণীর সন্ত্রাসী ও ঘের লুটেরাদের অস্বাভাবিক দৌরাত্ব বৃদ্ধি আর স’ানীয় প্রশাসনের দুর্বলতার তদারকীর অভাবে চিংড়ি চাষিরা এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে। ফলে দেশ হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা থেকে। চিংড়িতে অধিক মুনাফা অর্জিত হওয়ায় এক সময়ে তেরখাদা উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে দিন মজুর থেকে শুরু করে ধর্ণাঢ্য ব্যক্তিরা ঘের কেটে চিংড়ি চাষ শুরু করে। যাদের জমি নেই তারা অন্যের জমি ইজারা নিয়ে মাছ চাষে আগ্রহী হয়ে সর্বত্র পূঁজি বিনিয়োগ করে। ঐ সময় চিংড়ি চাষে লাভ হয় প্রচুর পরিমাণ। সাবলম্বী হতে শুরু করে দিনমজুর পরিবারের সদস্যরা। উপজেলার ছোট বড় প্রায় ৭ হাজার ঘেরে বর্ষা মৌসুমে চিংড়ি ও সাদামাছ চাষের পাশাপাশি ইরি-বোরো ধান চাষ শুরু করে। ফলন নিজেদের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিক্রি করে অর্থও ঘরে আসতে থাকে। কিন’ এখন সে অবস’া আর নেই। প্রতিটি ইউনিয়নে এক শ্রেণীর সন্ত্রাসী ও ঘের লুটেরাদের অস্বাভাবিক দৌরাত্ব এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দুর্বল তদারকীর কারণে চিংড়ি চাষিরা এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে। গেল বছর প্রচুর বর্ষার কারণে উপজেলার হাজার হাজার ঘের পানিতে ভেসে যায়। ফলে অনেক ঘের মালিকের প্রচুর পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। স’ানীয় ঘের মালিকরা জানিয়েছে চিংড়ি চাষ শুরু হওয়ার ১/২ বছর কোন প্রকার ক্ষতি ছাড়াই শানি-পূর্ণ পরিবেশে মাছ চাষ করেছে। মৌসুম শেষে মুনাফা হয়েছে প্রচুর। তখন চিংড়ি ঘেরে কোন নৈশপ্রহরীও পাহাড়া দেওয়া লাগত না। চিংড়িতে প্রচুর নগদ অর্থ পেত চাষিরা। কিছুদিনের মধ্যে প্রতিটি ইউনিয়নে এক শ্রেণীর ঘের লুটেদের আবির্ভাব ঘটে। লুটেরা প্রতি রাতে এক এক এলাকায় গিয়ে ঘের প্রহরীকে বেঁধে রেখে ঘেরের মধ্যে এক প্রকার ভারতীয় বিষ ব্যবহার করে ঘেরের সমুদয় মাছ লুট করে নিয়ে যায়। আবার অনেকে এলাকার প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ঘেরে কীটনাশক প্রয়োগ করে রেনু, চিংড়ি পোনাসহ লাখ লাখ টাকার মাছ ধ্বংস করে দেয় প্রতিপক্ষ গ্রুপ। এভাবে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রতি বছর চিংড়ি চাষিরা ক্ষতিগ্রস- হচ্ছে। ফলে প্রচুর লোক এ ব্যবসা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বলে যানা যায়। উপজেলার আটলিয়া এলাকার কবির চৌহদ্দী, মন্ডলগাতী এলাকার শহীদুল ইসলাম, পানতিতা এলাকার কালু মোল্লা, দ্বিন মোহাম্মাদ, কবির মিনা, ইঞ্জিল মিনাসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী ও চাষিরা জানান, একজন চাষিকে ঘেরের চিংড়ি চাষের যোগ্য করে তুলতে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করতে হয়। এছাড়া চিংড়ির রেনুপোনা ক্রয় ও তাদের খাবার দিয়ে বড় করে তোলা, শ্রমিকদের মজুরী প্রদানসহ অন্যান্য খাতে বিপুল অর্থ লগ্নি করতে হয়। আর মৌসুম শেষে মাছ ক্রয় করে খরচাদি পোষানোসহ ধার দেনা পরিশোধ করে তারপর লাভের মুখ দেখতে হয়। চোর সন্ত্রাসী ঘের লুটতরাজদের অপতৎপরতার কারণে লাভ-তো দূরে থাক আসল ঘরে তুলতে পারছে না। বছরের পর বছর আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস- হচ্ছে চিংড়ি চাষিরা। গত ২০১৬ সালে চিংড়ি মাছের দাম ছিল কেজি প্রতি ২ হাজার টাকা। তা এখন ৯শ’ টাকা কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে বলে উপজেলা সদরের কাটেংগা বাজারের চিংড়ি মাছ ব্যবসায়ী খোকন শেখ, কবির মুছাল্লিসহ কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া যায়। অনেকে জমি বন্ধক ও জমি বিক্রি করে মহাজনের দেনা পরিশোধ করেছে, আবার কেউ কেউ সুদ ও দাদন ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ে সর্বশান- হয়ে পড়েছে। বর্তমানে চাষিরা চিংড়ি চাষের পরিবর্তে সাদা মাছের পোনা চাষের প্রতি ঝুঁকে পড়েছেন।
উপজেলার বারাসাত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কে এম আলমগীর হোসেন বলেন, আগের মত তেরখাদায় চিংড়ি চাষিরা চাষের প্রতি যদি আগ্রহ থাকত তাহলে অবহেলিত এ অঞ্চলের মানুষের উন্নয়নে আরও এক ধাপ এগিয়ে যেত।
বি এম রাকিব হাসান,
খুলনা ব্যুরো: