জমেছে অলস টাকা - অব্যবস্থাপনা দীর্ঘায়িত হলে ?

 

টাকা

স্টাফরিপোটার:  দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি ভালো না হওয়ায় সরকার ও বেসরকারি খাতের ঋণ নেয়ার চাহিদা না থাকায় ব্যাংকে জমেছে অলস টাকার পাহাড়। উপচে পড়ছে তারল্য। গত বছরে রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্যেও আমানতের টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রেখে মুনাফা করেছে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। আর এ মুনাফা করাতে গিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছে খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জানা গেছে, দেশে বিনিয়োগ না বাড়ায় এবং বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় দেশের অভ্যন্তরে ঋণের চাহিদা বাড়ছে না। ফলে ব্যাংকে অলস টাকা বেড়েই চলেছে।
সূত্র জানিয়েছে, সরকার ঋণ না নিয়ে উল্টো পরিশোধের কারণে প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকা অলস পড়ে আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের মাধ্যমে ৩৭ হাজার কোটি টাকা তুলে নিলেও উপচে পড়ছে তারল্য।
এদিকে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে প্রায়ই টাকা তোলে। যার বিপরীতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে সুদ দিতে হয় বাংলাদেশ ব্যাংককে। ফলে এই খাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদ ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, সরকার ঋণ না নেয়ায় বাধ্য হয়েই আমানতের সুদ হার নামিয়ে আনতে হচ্ছে মূল্যস্ফীতির নিচে। বিশ্লেষকরা বলছেন, তহবিল ব্যবস্থাপনায় এ অদক্ষতার কারণে একদিকে বাজেটের ওপর চাপ বাড়ছে অন্যদিকে প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে ট্রেজারি মার্কেট। অব্যবস্থাপনা আরো দীর্ঘায়িত হলে গোটা আর্থিক খাতেই বিপর্যয়ের আশঙ্কা তাদের।
দেশের অভ্যন্তরে ঋণ নেয়ার চাহিদা না থাকায় বিপুল পরিমাণ অর্থ অলস পড়ে আছে ব্যাংকগুলোতে। অংক ছাড়িয়ে গেছে লাখ কোটি টাকা। সামাজিক দায়বদ্ধতার দোহাই দিয়ে সরকার উচ্চ সুদে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ঋণ নিয়ে পরিশোধ করছে ব্যাংক খাতের স্বল্প সুদের ঋণ। অর্থবছরে সরকার ৩৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার কথা থাকলেও ২০১৬ সালের ৩০ জুন থেকে চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৭ মাসে সরকার পরিশোধ করেছে ১৮ হাজার ৮শ’ ৪৭ কোটি টাকা। ব্যাংকাররা বলছেন, সরকার ঘোষণা অনুযায়ী ঋণ নিলেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসত।
সরকার ঋণ না নেয়ায় বাধ্য হয়েই মুদ্রানীতির লক্ষ্যপূরণে বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের মাধ্যমে মাত্র পৌনে ৩ শতাংশ সুদে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ৩৬ হাজার ৪শ’ ৪৩ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে । এরপরও বিপুল অংকের অলস অর্থ ব্যাংকে ব্যাংকে। ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসাবে বিনা সুদে ফেলে রেখেছে ৫ হাজার ৯শ’ কোটি টাকা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, তহবিল ব্যবস্থাপনায় সরকারের অদক্ষতা চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। যা বাজেটের উপর চাপ বাড়াচ্ছে এবং শিগগিরই তা সহনীয় মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। তহবিল ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা না বাড়াতে পারলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশংকা করছেন তারা।
জানা গেছে, বিনিয়োগ স্থবিরতার কারণে ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ রফতানি আয় ও রেমিটেন্সের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ করছে তা কাজে লাগাতে পারছে না। ফলে তারা বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে রাখছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেটা বাজারমূল্যে কিনে নিচ্ছে। অর্থাৎ ডলারের বিপরীতে ছাড়া হচ্ছে স্থানীয় মুদ্রা। এভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক গত অর্থবছরে প্রায় ৩৮ হাজার কোটি টাকা বাজারে ছেড়েছে। এর বাইরে বিনিয়োগ মন্দার কারণে ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ আমানত গ্রহণ করছে তা কাজে লাগাতে পারছে না। এভাবে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকের বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলো ১শ’ টাকা আমানতের বিপরীতে বিনিয়োগ করতে পারছে ৬৯ টাকা। অথচ দেশীয় উদ্যোক্তারা আনছেন বিদেশি ঋণ।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, সুদ কম হওয়ায় উদ্যোক্তারা বিদেশি ঋণ নিচ্ছেন। ফলে ব্যাংক আমানত অব্যবহৃত থাকছে। ফলে ব্যাংকগুলো বাধ্য হয়ে ঋণের সুদহার কমাচ্ছে। পাশাপাশি তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় কমাতে কমানো হচ্ছে আমানতের হার। আর ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করতে পারায় বাড়ছে খেলাপি ঋণ।
যদিও জনগণের অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রেখে মুনাফা করা বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাজ না। ভালো ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের ঋণ দিয়ে ব্যবসার পরিবেশ সৃষ্টি করা ব্যাংকের কাজ হলেও দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ঋণ গ্রহণে অনিহার ফলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে

Post a Comment

Previous Post Next Post