বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক-এর মাঠ পরিদর্শন

কৃষি গবেষনা Meherpur_pic-1_(3)[1]

Meherpur_pic-1_(1)[1]

বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক-এর মাঠ পরিদর্শন
মেহেরপুরের গমক্ষেতে আবারও বস্নাস্ট রোগ ॥ দিশেহারা চাষিরা

কামারুজ্জামান খান : চলতি বছরে আবারও মেহেরপুরের গমক্ষেত বস্নাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গম চাষ করে বিপাকে চাষিরা।
সোমবার সকালে মেহেরপুর সদর উপজেলার বুড়িপোতা ও গাংনীর তেরাইল মাঠের বস্নাস্ট রোগে আক্রান্ত গমক্ষেত পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইন্সটিটিউট-গাজিপুর-এর মহাপরিচালক ডক্টর আবুল কালাম আজাদ, দিনাজপুর গম গবেষনা কেন্দ্রের পরিচালক ডক্টর নরেশ দেব বর্মন ও মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডক্টর পরিতোষ কুমার মালাকার, কুষ্টিয়া কৃষি গবেষনা ইন্সটিটিউট-এর উদ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডক্টর সায়েদুর রহমান, সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কামরম্নজ্জামান ও গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রইস উদ্দিনসহ কৃষি কর্মকর্তাগন।
এই রোগে আক্রানত্ম গমড়্গেতে বিভিন্ন প্রকার ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করেও কোন ফল পাচ্ছে না কৃষকরা। ইতি মধ্যে কোন কোন মাঠের গম ৩০ ভাগ ড়্গেত আক্রানত্ম হয়েছে। আমেরিকান বিজ্ঞানী তিমথি জে ক্রুপনিকের মতে, দ্রম্নত এ সমস্যার সমাধান না হলে রোগটি দেশের গন্ডি পেরিয়ে ভারত, নেপাল, ভূটানসহ দক্ষিন এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বীজ পরিশোধন না করা ও আগাম বীজ বপনের কারণে এ রোগে আক্রানত্ম হয়েছে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। সমস্যা সমাধানে দেশে নতুন জাতের বীজ উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে বলে জানান তারা।
গত বছর মেহেরপুরের ১৪ হাজার হেক্টোর জমির গমক্ষেত বস্নাস্ট রোগে আক্রানত্ম হয় । ফলে কৃষকদের ঘাম ঝরানো উৎপাদিত ফসল পুড়িয়ে ফেলতে হয়।বীজবাহিত এ রোগের আক্রমন থেকে রক্ষা পেতে চলতি বছরে গম আবাদে নিরম্নতসাহিত করে কৃষি বিভাগ। কিন’ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গম চাষ করে চাষিরা। চলতি বছর ৪ হাজার হেক্টোর জমিতে গম আবাদ করা হয়েছে। গমের শীষ বের হবার সাথে সাথে বস্নাস্ট রোগে আক্রানত্ম হচ্ছে গমক্ষেত। বিভিন্ন প্রকার ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করেও কোন কাজ হচ্ছে না। এদিকে হঠাৎ করে গমক্ষেত আক্রানত্ম হবার কারণে দিশেহারা কৃষকেরা। কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেব মতে গত বছর ১৪ হাজার হেক্টোর জমিতে গম চাষ হয়। বস্নাস্ট রোগের কারনে এই চাষ কমে চলতি বছরে জেলায় প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়েছে।
সদর উপজেলার গোভিপুর গ্রামের গম চাষি রফিকুল ইসলাম জানান, গেল বছর ৪ বিঘা জমিতে গম চাষ করেছিলেন। কিনত্ম হুইট বস্নাস্ট রোগে আক্রানত্ম হওয়ায় জমির গম জমিতেই পুড়িয়ে ফেলতে হয়। চলতি বছরে তিনি ৪ বিঘা জমিতে গমের আবাদ করেছেন। কিন’ শীষ বের হবার সাথে সাথেই সাদা হয়ে যাচ্ছে। ভিতরে দানা বলতে কিছুই থাকছে না। বিভিন্ন ধরনের ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করেও কোন লাভ হচ্ছে না। গেল বছরের মত এবারও লোকসানে গুনতে হবে।
গাংনী উপজেলার তেরাইল গ্রামের গম চাষি আশরাফুল ইসলাম জানান, কৃষি বিভাগ থেকে গম চাষ করতে নিষেধ করা হয়। এমনকি মাইকিংও করা হয়। কিন’ তা অমান্য করে খাবারের জন্য এবার এক বিঘা জমিতে গমের আবাদ করেছিলেন। নিজের গমের এখনও শীষ বের হয়নি। কিন’ পাশের জমির গম নষ্ট হওয়ায় আতংকিত হয়ে পড়েছেন তার মত অনেক চাষি। বিঘা প্রতি জমিতে গম চাষে খরচ হয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা।
দিনাজপুর গম গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পরিতোষ কুমার মালাকার জানান, বস্নাস্ট রোগটি বীজ বাহিত হলেও ঘাস জাতীয় আগাছার মধ্যে থাকা জীবানু ও আবহাওয়া তারতম্যেও গমক্ষেত আক্রানত্ম হতে পারে। বাতাসের মাধ্যমে আক্রানত্ম জমির ক্ষেত থেকে অন্য ক্ষেতেও ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণে চলতি বছরসহ আগামী দুই বছর গম চাষ থেকে কৃষকদের নিরম্নতসাহিত করা হয়। আগাম গম চাষের কারণে কিছু কিছু জেলায় এ রোগ দেখা দিয়েছে। এছাড়াও বস্নাস্ট রোগে আক্রানত্ম ৯ টি জেলা বাদে অন্য জেলা গুলোতে গমের বীজ তৈরি করা হয়েছে। কিন’ আক্রানত্ম এলাকায় কোন বীজ তৈরি ও সরবরাহ করা হয়নি। কৃষকরা আক্রানত্ম বীজ থেকে বীজ তৈরি করার কারণে আবারও গমক্ষেতে এ রোগ দেখা দিয়েছে। একই দাবি বাংলাদেশ গম গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক নরেশ চন্দ্র দেব বার্মার।
ঢাকা খামার বাড়ির উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং এর পরিচালক গোলাম ফারম্নক জানান, বস্নাস্ট রোগ থেকে বাঁচতে গমের শীষ বের হবার আগেই ছত্রাক নাশক প্রয়োগ করতে হবে। কোনক্রমেই আক্রানত্ম জমির গম বীজ হিসেব ব্যবহার করা যাবে না। গেল বছরে গমক্ষেত বস্নাস্ট রোগে আক্রানত্ম হওয়ায় গবেষণা শুরম্ন হয়েছে। প্রতিরোধি জাতের বীজ উদ্ভাবনের মাধ্যমে আগামী দুই বছরের মধ্যে এ সমস্যা সমাধান করা হবে। ইতোমধ্যে গবেষণায় বারি গম-৩০ ও বিএ ডব্লিউ-১২০২ জাতের মধ্যে আক্রমনের মাত্রা কম পাওয়া গেছে। এ জাতগুলো অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হবে। অনুমোদন পেলেই এ জাতগুলো উম্মুক্ত করে আরোও প্রতিরোধী জাত ৈৈতরি করা হবে।
পরিদর্শন টিমের আরেক সদস্য আমেরিকান বিজ্ঞানী তিমথি জে ক্রুপনিকের মতে, দ্রম্নত এ সমস্যার সমাধান না হলে রোগটি দক্ষিন এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে যেতে পারে। তবে ভয় পাবার কিছু নেই, এটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব। পরবর্তীতে যেন এটি ছড়িয়ে না পড়ে, সেই লক্ষে কঠোরভাবে গবেষণা করে যাচ্ছি। তবে বৈজ্ঞানিক হিসেবে আমি মনে করি এ রোগটি সম্পর্কে আমাদেরও অনেক কিছু জানার আছে। সমস্যা সমাধানে সবাই এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। এছাড়াও কৃষকদের কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ি কাজ করা প্রয়োজন।

Post a Comment

Previous Post Next Post