বি.এম.রাকিব হাসান, খুলনা ব্যুরো: কৃষকের চঞ্চল চোখ এখন রোমাঞ্চকর ধান কাটার দিকে। মাঠে মাঠে পাঁকা ফসলের মৌ মৌ গন্ধ। বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের প্রধান ফসল আমন মৌসুমের দিকে আমজনতা কৃষক তাকিয়ে আছে অধীর আগ্রহে। লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে কৃষকরা সর্বস্ব চিন-া চেতনা মেধা খাটিয়ে ক্ষেতের পর ক্ষেত ফসল ফলিয়েছে। আর কয়েকদিন পরে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে। এখন ইরি, বেতি বালাম, চিনি কালাই, জটাই বালাম, স্বর্ণা ধান কাটা চলছে। গত বছরের তুলনায় এসব জাতের প্রতি মণ ধান ২শ’ থেকে ২৩০ টাকা বেশি বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ ৫শ’ টাকার ধান বিক্রি হচ্ছে ৭২০ টাকায়। চিনি কানাই বিক্রি হচ্ছে ১৩শ’ থেকে ১৩শ’ ৫০ টাকা। বেতি বালামের দাম ৯শ’ টাকা। বাজার এ অবস’া চলতে থাকলে কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে। গত বছর ভরা মৌসুমে আমন ধান বিক্রি হয় ৭শ’ থেকে সাড়ে ৭শ’ টাকা। এবার বাজার অনুযায়ী এ ধান ৯শ’ থেকে সাড়ে ৯শ’ টাকা বিক্রির আশা করছে কৃষক। এদিকে, ধান কাটার এই চূড়ান- মুহুর্তে কৃষক খানিকটা উদ্বিগ্ন রয়েছে। চলতি মৌসুমে খুলনায় রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন হলেও ন্যায্য মূল্য নিয়ে শঙ্কিত কৃষকরা। পাশাপাশি কৃষকরা ন্যায্য মূল্যের জন্য এবার আশাবাদিও বটে।
সূত্রমতে, রোপ আমনের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৫ হাজার ২৪৫ হেক্টর। রোপন করা হয়েছে ৯১ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমি। ৩ হাজার ৬২০ হেক্টর আনাবাদি রয়ে গেছে। এর মধ্যে উচ্চ ফলনশীল ৬৮ হাজার ২ হেক্টর ও স’ানীয় জাতের ২৭ হাজার ২৪৩ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা ছিল। রোপন করা হয়েছে উচ্চ ফলনশীল ৬৭ হাজার ৫০ হেক্টর ও স’ানীয় জাতের ২৪ হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে আবাদ কম হয়েছে। কারণ হিসেবে জানা গেছে ২১ ও ২২ আগষ্ট অতিবৃষ্টির কারণে এ দু’দিন পানি আটকে থাকায় কৃষকরা জমিতে ধানের চারা রোপন করতে পারেনি। ফলে আবাদ কম হয়েছে।
অপরদিকে, চলতি মৌসুমে চাষাবাদ সামান্য কিছুটা কম হলেও শেষ মেস আমনের বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে। তবে কৃষকও নানা সমস্যায় জর্জরিত। এনজিও সমিতির ঋন করে আবার কেউ কেউ মহাজন ও ফড়িয়াদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে জমি চাষ করেছে। বর্গা চাষীদের পাশে কৃষি ব্যাংক না থাকায় তাদেরকে এনজিও ও মহাজনদের সরানাপন্ন হতে হয়েছে।
জেলা মার্কেটিং অফিস সূত্রে জানা গেছে, সমপ্রতি ডুমুরিয়া চুকনগর বাজারে প্রতি মণ ধান ৮৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে রোপা আমন ধানের দাম আরও বেড়েছে। রোপা আমন ধানের ফলন ভালো এবং ধানের মূল্য সনে-াষজনক। এদিকে গত মঙ্গলবার বটিয়াঘাটা উপজেলার বাজার এলাকার সাপ্তাহিক হাটে রোপা আমন ধান মণ প্রতি বিক্রি হয়েছে মাত্র ৮শ’ থেকে সাড়ে ৮শ’ টাকা। জেলার রূপসার নৈহাটী ইউনিয়নের বাগমারা গ্রামের কৃষক মোঃ জাহিদুল ইসলাম জানান, তিনি মৌসুমে ১১ বিঘা জমিতে রোপা আমনের আবাদ করেছেন। এতে তার ব্যয় হয়েছে ২৩ হাজার টাকা। এ আবাদ করে তিনি প্রায় ৮০ মণ ধান পেতে পারেন বলে ধারণা করেছেন। রূপসা উপজেলার টিএসবি ইউনিয়নের তিলক গ্রামের কৃষক মনিরুল জানান, তিনি এ বছর ৩ বিঘা জমিতে রোপা আমনের আবাদ করেছেন। এতে তার ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার টাকা। এ আবাদ করে তিনি ৪৫ মণ ধান পাবেন বলে আশাবাদী। তিনি বলেন ধানের দাম এবার একটু ভালো পাওয়ায় উৎপাদন খরচ বাদে কিছুটা মুনাফা পাবেন। রূপসার বাগমারা গ্রামের কৃষক মোঃ সত্য রায় জানান, তিনি এ বছর ১২ বিঘে জমিতে রোপা আমনের আবাদ করেছেন। এতে তার সর্বসাকূল্যে ব্যয় হয়েছে ২৫-২৬ হাজার টাকা। তিনি বিঘা প্রতি ১৩-১৫ মণ ধান পাবেন বলে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি আরও বলেন এ বছর ধানের বাজার মূল্য ভালো থাকায় উৎপাদন খরচ বাদে আশানুরুপ মুনাফা চোখে দেখা যাবে।
কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা উপ-পরিচালক আব্দুল লতিফ জানান, ইতোমধ্যে খুলনা মেট্রোসহ জেলার ৯ উপজেলায় শতকরা ১০ ভাগ রোপা আমন কর্তন করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় রোপা আমনের ফলন ভালো হয়েছে। এ বছর রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অর্জিত বেশি হয়েছে। বটিয়াঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুবায়েত আরা বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে কৃষকের মুখে এখন হাসির ঝর্ণা। বর্তমানে উচু জমির ধান কাটা ও মাড়াই চলছে। নিচু জমির ধান পৌষের প্রথম সপ্তাহে কাটা পড়বে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার কৃষকদের জন্য ও তাদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে সরকার।