অর্থনৈতিক রিপোর্টার : ২০২৪ সাল নাগাদ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশ বের হতে পারবে। তবে এসময় পরবর্তী আরও ৩ বছর স্বল্পোন্নত দেশের বিভিন্ন সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। আঙ্কটাডের রিপোর্টে উঠে এসেছে এমন তথ্য। গত শুক্রবারে সকালে রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে স্বল্পন্নোত দেশগুলোকে নিয়ে আঙ্কটাডের রিপোর্ট প্রকাশ করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি। এসময় আঙ্কটাডের রিপোর্টের উপর বিভিন্ন মতামত তুলে ধরে সংস্থাটি। মানব সম্পদ উন্নয়ন সূচকের দিকে গুরুত্ব দিলে আরো দ্রুত স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়া সম্ভব বলে মত দেয়া হয় সংস্থাটির পক্ষ থেকে। পাশাপাশি উন্নয়নের ধারা অব্যহত রাখতে গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন, রফতানিতে পণ্যের বহুমুখীকরণসহ বিশ্ব পরিস্থিতির বিভিন্ন ঝুঁকি মোকাবিলায় করণীয় ঠিক করা জরুরি বলেও মনে করে সিপিডি।
সিপিডি’র সম্মাানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য অনুষ্ঠানে বলেন, বিশ্বব্যাংকের মাথাপিছু আয়ের হিসাব অনুযায়ী, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে উন্নীত হয়েছে। তবে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হতে পারবে না। অবশ্য সরকার ইচ্ছে করলে যেকোনও সময় ঘোষণা দিয়ে এলডিসির তালিকা থেকে বের হয়ে আসতে পারে।
তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে আসার গতি মসৃণ ও টেকসই হওয়া জরুরি। হালকাভাবে বা নিস্তেজভাবে বা গড়াগড়ি দিয়ে বের হলে চলবে না। ক্ষিপ্রতার সঙ্গে বেরুতে হবে। সেক্ষেত্রে উন্নয়নের কাঠামোগত পরিবর্তন জরুরি। কাঠামোগত রূপান্তর মানে হচ্ছে বাংলাদেশে আরও শিল্পায়ন হতে হবে। উৎপাদন বাড়াতে হবে। কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। আর এটা করতে হলে শ্রমঘন আরও শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বাড়াতে হবে। এজন্য রাজস্ব আহরণের গতি বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, কেবল জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও রফতানি প্রবৃদ্ধিতে সফল হওয়া যাবে না। প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, সুশাসন, সমাজের বৈষম্য দূরীকরণ জরুরি। উন্নয়ন হতে হবে সবগুলো মিলিয়ে।
আঙ্কটাড’র প্রতিবেদন থেকে সিপিডি’র গবেষক তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশসহ ১৬টি দেশের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে ২০২১ সাল নাগাদ বের হবে ১০টি। ২০২৫ সালে বের হবে আরও ৬টি। আঙ্কটাডের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২১ সালে যে দেশগুলো স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হবে তার মধ্যে বাংলাদেশের নাম নেই। প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২০১৮ সালের মধ্যে এলডিসি থেকে বের হওয়ার প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জন করবে। ২০২১ সালের মধ্যে এলডিসি থেকে বের হওয়ার জন্য যে তিনটি সূচককে বিবেচনা করা হয়, তার তিনটি সন্তোষজনকভাবে বজায় রাখতে সক্ষম হবে বাংলাদেশ। তিনটি বিষয় হলো-মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও আর্থিক ভঙ্গুরতা সূচক। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এরইমধ্যে মানবসম্পদ উন্নয়নে জোর দিয়েছে। আর্থিক ভঙ্গুরতা সূচকে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় সক্ষমতা অর্জন করেছে। মাথাপিছু আয়েও বাংলাদেশ লক্ষ্য অর্জনের কাছাকাছি রয়েছে।
অনুষ্ঠানে সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনসহ অন্যান্য গবেষকরা উপস্থিত ছিলেন।