বি.এম.রাকিব হাসান, খুলনা: উপকূলীয় এলাকা হিসেবে খুলনাঞ্চলে লবণ শিল্পের বিপুল সম্ভবনা ছিল। সে অমিত সম্ভাবনাকে সামনে রেখে এ অঞ্চলে বিনিয়োগ শুরু হয়েছিল। দেখতে দেখতে খুলনাঞ্চলে ৩২টি লবণ ফ্যাক্টরী গড়ে ওঠে । কিন’ জাতীয় নীতিমালার অভাবে এবং পুজি ও কাচামাল সংকটের কারনে মুলত: পাট শিল্পের পর এবার লবন শিল্পে ধ্বস নামতে শুরু করেছে। লবন শিল্প গড়ে ওঠার জন্য খুলনাঞ্চলকে “পারফেকট লোকেশান” হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। বন্ধ বা রুগ্ন শিল্পকে বাচিয়ে রাখা ও নতুন উদ্যামে শিল্পকল কারখানা প্রতিষ্ঠার যে উদ্যোগ ও নীতিগত সিদ্ধান- বর্তমান সরকার গত ৮ বছর আগে নিয়েছিল তাতে হয়ত আবারো এ শিল্পে যৌবন ফিরে আসবে এমন আশাবাদ ছিল সংশ্লিষ্টদের। এতে লবণ শিল্পে বিনিয়োগকারীরা আবারো আগ্রহ প্রকাশ করবে। ইতোমধ্যে এ অঞ্চলে নতুন করে লবণ ফ্যাক্টরী স’াপনের জন্য একটি বহুজাতিক কোম্পানী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সূত্রমতে, কয়েক যুগ অতিবাহিত হলেও দেশে আজও লবণ শিল্পের জন্য কোন নীতিমালা তৈরী হয়নি। কাগজে কলমে দেশের বিভিন্ন স’ানে ২৬৭টি লবন কারখান রয়েছে। ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে ওঠা এ লবন কারখানা শিল্প বিকাশের জন্য সরকারীভাবে উল্লেখযোগ্য কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ফলে দীর্ঘদিন নানা সংকটে পড়ে একে একে কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। খুলনা এলাকায় বর্তমানে ৮টি লবন কারখানা চালু রয়েছে। লবন শিল্পের এ পরিসি’তিতে ভারতের টাটা কোম্পানী তাদের উৎপাদিত লবন এ দেশে বাজারজাত করার সিদ্ধান- নিয়েছে বলে সূত্রটি জানায়। তাদের এ উদ্দেশ্য বাস-বায়িত হলে দেশের লবন শিল্প চিরতরে মার খাবে বলে ব্যবসায়ীর আশংকা করছেন। লবন শিল্পের কাচামাল রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদনে দেশে আজ পর্যন- কোন করাখানা গড়ে না ওঠায় প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদেশ থেকে তা আমদানি হয়। আর এটা করতে গিয়ে দেশীয় কারখানা মালিকরা পুজি সংকটে পড়েন। ব্যাংক ঋন পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের রয়েছে নানা সমস্যা। এ ক্ষেত্রে এক শ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ি কাগজে কলমে কারখানা দেখিয়ে ব্যাংক ঋন নিয়ে লাভবান হলেও প্রকৃত ব্যবসায়ীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। সূত্রমতে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের ১২০টি দেশে লবন উৎপাদিত হয়। এর মোট উৎপাদন ২৫ কোটি টন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট, চীন, জার্মান, ভারত, কানাডা, অষ্টেলিয়া, ব্রাজিল অন্যতম। উৎপাদিত লবনের ৩০ ভাগ ব্যবহৃত হয় খাদ্য হিসেবে। বাকি ৭০ ভাগ লবন রাসয়নিক দ্রব্য প্রস’তি এবং শিল্পের কাচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। টেক্্রটাইল মিল, চামড়া ঔষধ, প্রসাধন সামগ্রী, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, গ্যাস প্রস’তকারী কারখানা, ফুড ইন্ডাষ্ট্রি সহ এ ধরনের বিভিন্ন শিল্প কলকারখানায় লবন ব্যবহৃত হয়ে থাকে। লবন থেকে হাইড্রোক্লোরিড এসিড, সোডা গ্র্যাস, কষ্টিক সোডা, ক্লোরিন, পটাশ, ইত্যাদি তৈরি করা হয়। খুলনা এলাকায় উৎপাদিত লবনের গুনগত মান অন্য অনেক স’ানের চেয়ে ভাল বলে কারখানা মালিকরা জানান। ইউনিসেফের এক জরিপে বলা হয়েছে দেশের উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে আয়োডিনের ঘাটতি রয়েছে। এর ফলে সেখানকার লোকজনের মধ্যে গলগোন্ড, টেরাখ্যাগ সহ বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়। এ অঞ্চলের উৎপাদিত লবন উত্তারাঞ্চলের চাহিদা মেটায়। কিন’ খুলনাঞ্চলের লবন কারখানাগুলো একে একে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এলাকার চাহিদার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স’ানের চাহিদা মিটাতে ব্যর্থ হচ্ছে। খুলনার ব্যবসায়িরা লবন শিল্পে সংকটের প্রধান কারন হিসেবে সঠিক নীতিমালার অভাব, ব্যাংকের অসহযোগিতা এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দায়ি করেছেন। অথচ খুলনায় বিশ্বমানের লবন উৎপাদিত হচ্ছে। বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এক সময় পাটশিল্প ছিল এ অঞ্চেলর মানুষের অহংকার। তেমনি বর্তমান সরকারের সদিচ্ছা ও পৃষ্ঠপোষকতায় রুগ্ন লবন শিল্প আবার মাথাচাড়া দিবে। এমন প্রত্যাশা এ অঞ্চলের অভিজ্ঞজনদের। এ ব্যাপারে নাগরিক নেতা বাংলাদেশ পরিবেশ ও মানবাধিকার বাস-বায়ন সোসাইটির খুলনা বিভাগয়ি মহাসচিব মো: আজগর হোসেন বলেন, মৃত শিল্প নগরী খুলনাকে জাগ্রত করতে লবন শিল্প বিকাশের কোন বিকল্প নেই। লবন কারখানাগুলো পুনরায় চালু করলে অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ার পাশাপাশি স’ানীয় শ্রম বাজার সচল থাকবে।
বি.এম. রাকিব হাসান