নাজুক অবস্থা খুলনার বেসরকারি পাটকলের

 

বি.এম.রাকিব হাসান, খুলনা ব্যুরো: দিন দিন নাজুক দিকে যাচ্ছে খুলনার বেসরকারি পাটকলগুলো। মহসেন ও অ্যাজাক্স জুট মিল বন্ধ গত ৩ বছর ধরে। পাটকল বন্ধক রেখে ব্যাংকের ঋণ নেওয়া এবং পরে সেই টাকা দিয়ে অন্য ব্যবসা পরিচালনা করায় একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এক সময়ের লাভজনক পাটকলগুলো। এতে বেকার হচ্ছে এসব পাটকলে কাজ করা শত শত শ্রমিক কর্মচারী। শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেসরকারি মহসেন জুট মিল প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। মিলটিতে স’ায়ী-অস’ায়ী মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক-কর্মচারীরা কাজ করতো। বন্ধ থাকা মিলের কাছে তাদের পাওনা ২১ কোটি টাকা। শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধ না করে মিল বন্ধ রাখায় অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গেছেন। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন অনেক শ্রমিক।
বেসরকারি খাতের বড় পাটকল সোনালী জুট মিলের অবস’াও শোচনীয়। এক সময় যেই মিলে ৬ থেকে ৭ হাজার শ্রমিক কাজ করতো, এখন সেখানে রয়েছে মাত্র ৯০০ শ্রমিক। আফিল জুট মিল চলছে কোনো রকমভাবে। অ্যাজাক্স জুট মিল সাড়ে ৩ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। নতুন মালিক মিলটি চালুর উদ্যোগ নিয়েছে কিন’ চালু করতে পারেনি। এখানে প্রায় ১ হাজার ৭০০ শ্রমিক কাজ করে।
জুট স্পিনার্সেও শ্রমিকদের বকেয়া প্রায় ১ কোটি ওপরে বকেয়া। এই মিলটিও ঢিমেতালে চলছে। সাগর জুট মিলে এক নোটিশে সব শ্রমিক-কর্মচারী ছাটাই করে এখন শিশু শ্রমিক দিয়ে মিল চালানো হচ্ছে।
জানা গেছে, পাটকলগুলো তদারক, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি) গঠন করা হয়। ওই সময় বিজেএমসির আওতায় ৮২টি পাটকল রাখা হলেও ১৯৭৭-৯৬ সালের মধ্যে ৪৪টি পাটকল বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া হয়। পরে সরকারি ৩৮টি পাটকলের মধ্যে ১৯৯৩ সালে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে ১১টি এবং ২০০২ সালে আদমজী জুট মিল বন্ধ করে দেয়া হয়। বর্তমানে সরকারি পাটকলের সংখ্যা ২৬টি।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাব মতে, স্বাধীনতার পর ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে দেশের মোট রফতানি আয়ের ৯০ শতাংশই ছিল পাটের অবদান, যা বর্তমানে ২ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রফতানি আয়ে পাটের অবদান মাত্র ৮৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। বাংলাদেশ থেকে মূলত ভারত, সিরিয়া, ইরান, মিসর, তিউনিসিয়া, তুরস্ক, সিরিয়া, ইরাক, থাইল্যান্ডসহ আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাট ও পাটপণ্য রফতানি হয়।
বেসরকারি পাটকল শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয়য় সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সবুজ বলেন, মালিকদের খামখেয়ালীপনায় বেসরকারি কলকারখানার শ্রমিকরা মরতে বসেছে। তারা মিলগুলো ব্যবহার করছে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার উপকরণ হিসেবে। সরকার এসব মিলে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করলেও তা বাস-বায়ন করছে না মালিকপক্ষ। রবং একের পর এক মিল বন্ধ রেখে শ্রমিকদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে তারা। অবিলম্বে খুলনার মহসেন, অ্যাজাক্স, সোনালী জুট মিলসহ বন্ধ মিলগুলো চালুর দাবি জানান শ্রমিক নেতারা।
বি.এম.রাকিব হাসান,
খুলনা ব্যুরো:

Post a Comment

Previous Post Next Post