বেনাপোল বন্দরের পণ্য গুদামে ভয়াবহ আগুন

banapul
বেনাপোল বন্দরের পণ্য গুদামে ভয়াবহ আগুন

পুড়েছে কোটি কোটি টাকার পণ্য : ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

বেনাপোল থেকে এম ওসমান : দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে ২৩ নম্বর রাসায়নিক পণ্যের গুদামে ভয়াবহ আগুনে পুড়েছে কোটি কোটি টাকার পণ্য। গতকাল রোববার ভোর ৫টায় আগুনের সূত্রপাত ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের ভয়াবহতা এতই তীব্র ছিলো যা নিয়ন্ত্রণ করতে হিমসিম খেতে হয় ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকটি ইউনিটকে। যশোর ও বেনাপোল বন্দর ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিটের প্রচেষ্টায় দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এসময় ভারতীয় পেট্রাপোল বন্দর থেকে ভারতীয় একটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয়। এর আগেই আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করে ২৩ নম্বর পণ্য গুদাম, পাশাপাশি খোলা আকাশের নিচে রাখা অন্যান্য মালামালও ভস্মীভূত হয়েছে। এমনকি বন্দরের অভ্যন্তরে থাকা পণ্যবাহী কয়েকটি ভারতীয় ট্রাক এবং বেনাপোল পোর্ট থানার একাংশ পুড়ে গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোর ৫টার সময় স্থল বন্দ?রের ২৩ নং শে?ডে তারা ধোঁয়া উঠতে দেখেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে আগুন। এক সময় সে আগুন বন্দরের ২৩নং শেডসহ পোর্ট থানা ও রাস্তার উপর রাখা ট্রাক-প্রাভেটকার এবং ও মোটরসাইকেল পুড়ে যায়। যার মধ্যে ৪টি ভারতীয় ট্রাক রয়েছে।

বন্দর ব্যবহারকারী সিএন্ডএফ এজেন্টরা জানান, ২৩নং শেডে তাদের ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্য কেমিক্যাল, ফাইবার, মশা তাড়ানো স্প্রে নিউ হিট, তুলা এ্যাসোসিয়েডস গুডস, কাপড়, কাগজসহ শত শত কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের আমাদিনকৃত পণ্য পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

স্থানীয় সিএন্ডএফ ও ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী জানান, বন্দর শেড থেকে মালামাল চুরি করে, কেউ পরিকল্পিতভাবে শেডে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে সে ধারণাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। কারণ এর আগেও এ বন্দরে এমন ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকবার। এবারও কি পরিকল্পিতভাবে এই অগি্নকা-ে ঘটনা ঘটেছে কিনা

যশোর ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক পরিমল চন্দ্র কুন্ডু জানান, যশোর, মনিরামপুর, কেশবপুর, অভয়নগর, ঝিকরগাছা বেনাপোলসহ মোট ৮টি ইউনিটের সহযোগিতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে কিভাবে আগুনে সূত্রপাত ঘটেছে এব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু না জানাতে পারেননি।

এঘটনায় নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব সাফায়েত হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্যান্যরা হলেন, স্থল বন্দরের সচিব হাবিবুর রহমান এবং জেলা প্রশাকের পক্ষ থেকে ১ জন।

বেনাপোল স্থল বন্দরের ট্রাফিক উপ-পরিচালক আব্দুল জলিল তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বন্দরে কিভাবে আগুন লেগেছে, সে ব্যাপারে তদন্ত শেষে বলা যাবে। আর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনই বলা সম্ভব নয়। কাগজপত্র দেখে এ বিষয়ে বলা যাবে।

তবে বন্দরের পরিচালক নিতাইচন্দ্র সেন সাংবাদিকদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে।

বেনাপোল সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান স্বজন জানান, বন্দর কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার কারণে এ দুর্ঘটনা। তাদের অব্যবস্থাপনা ও খামখেয়ালিপনার কারণে প্রায়ই এ বন্দরে অগি্নকা-ের ঘটনা ঘটে থাকে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিকল্পিতভাবে আগুনে বন্দরের ২৩ নম্বর শেড ছাই হয়েছে কি না এমন সন্দেহ উড়িয়ে দেয়া যায় না। এর আগেও বেনাপোল বন্দরে ৭/৮ বার আগুন লেগেছে। প্রতিবারই বন্দর কর্তৃপক্ষ শর্ট সার্কিটের মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে থাকেন।

এদিকে, গতকাল বিকালে নৌ-পরিবহণ মন্ত্রী শাহাজান খান স্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন, যশোর জেলা প্রশাসক ড. হুমায়ুন কবির, যশোর ৮৫-১ আসনের এমপি শেখ আফিল উদ্দিন ও শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুস সালাম।

Post a Comment

Previous Post Next Post