বি.এম.রাকিব হাসান, খুলনা: আগামীদিনে সকল প্রকার ব্যবসায়িক সেবা দিতে প্রস-ুত আছে দেশের দ্বিতীয় আন্ত-র্জাতিক সমুদ্র বন্দর মংলা। মাত্র ৭ বছরের ব্যবধানে নানা প্রকার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে রুগ্ন দশা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে এ বন্দরের আয় বেড়েছে ৯ গুণ। এ বন্দর এখন লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পা রেখে তরতর করে শক্তিশালী অর্থনৈতিক সংস্থায় প্রবেশ করছে। মাত্র দু’টো পয়েন্টে বাধা অতিক্রম করতে সক্ষম হলেই মংলা বন্দরই অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করবে বলে বন্দর ব্যবহারকারীদের অভিমত।
প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বাংলাদেশের দ্বিতীয় আন-র্জাতিক সামুদ্রিক বন্দর মংলা। সৃষ্টির পর থেকে অতি সুনামের সাথে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রায় ছয় দশক পর্যন- চলে আসলেও বিপত্তি দেখা দেয় ২০০০ সালের পর থেকে। নদীর নাব্যতা সংকট, শ্রমিক অসনে-াষ, কাষ্টমসের হয়রানি ,পণ্য আমদানির পর তা খালাস না করে জাহাজ আটকে রাখা ও কারণে অকারণে বিদেশী জাহাজের নামে মামলা করার ফলে চরম ইমেজ সংকটে পড়ে মংলা বন্দর। শুরু হয় বন্দরের অর্থনৈতিক দৈন্যদশা। লোকসানি প্রতিষ্ঠান হিসেবে এ বন্দরের দুর্নাম ছড়িয়ে পড়ে দেশী-বিদেশী ব্যবসায়ী মহলে। এর কারণে বন্দর ব্যবহারকারীরা এ বন্দর ব্যবহারে অনাগ্রহী হয়ে পড়ে। বন্দরের আর্থিক অবস্থা পড়ে লোকসানের গিরিখাদে। বন্দরকে লোকসানের এই অবস্থা থেকে টেনে তুলতে বন্দর পরিচালনা ব্যবস্থাপনা পর্ষদে অভিজ্ঞ এবং দক্ষ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়। এর ফলে ২০০৪- ২০০৫ ইং অর্থ বছরের মত চরম অর্থ সংকটের অবস্থাকে পিছনে ফেলে এখন মংলা বন্দর অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ২০০৭-২০০৮ ইং অর্থ বছরে কার্গো (পণ্য) খালাস বোঝাই ছিল সর্বনিম্ন । ওই অর্থ বছরে মাত্র ৭ লাখ ২২ হাজার মেঃ টন পণ্য মংলা বন্দর দিয়ে খালাস বোঝাই হয়েছে এবং এ অর্থ বছরে ১২ মাসে বন্দরে জাহাজ এসেছে ৯৫টি। মাসিক জাহাজ আগমনের গড় মাত্র ৫টি । তবে এ বছর থেকেই বন্দর লোকসানকে পিছু ফেলে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। এর পূর্বে ২০০৪-২০০৫ ইং অর্থ বছরে লোকসান ছিল ১১ কোটি ৬১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা ২০০৫-২০০৬ইং অর্থ বছরে লোকসান ছিল ৯ কোটি ৩৯ লাখ ৬৭ হাজার এবং ২০০৬-২০০৭ইং অর্থ বছরে লোকসানের পরিমান ছিল ৬ কোটি ১৮ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। নানা চড়াই উৎরাই পার করে এ বন্দর এখন শুধু লাভজনক প্রতিষ্ঠানই নয়, সম্ভাবনাময় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের স্বর্ণদুয়ারের দিকে তরতর করে এগিয়ে চলছে। বন্দর এগিয়ে চলার এ ধারা অব্যাহত থাকলে নিকট ভবিষ্যতে মংলা বন্দরই দেশের জাতীয় অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন মংলা-রামপাল থেকে ৪ বার নির্বাচিত সংসদ ও সাবেক ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ও সাবেক খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক এমপি। মাত্র দু‘টো সমস্যার সমাধান হলেই মংলা বন্দরই দেশের অর্থনীতির উন্নতিতে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে বলে মনে করেন বন্দর ব্যবহারকারী ও মাষ্টার ষ্টিভেডরস পৌর মেয়র মোঃ জুলফিকার আলী এবং শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য মেসার্স নুরু অ্যান্ড সন্সের সত্ত্বাধিকারী হোসাইন মোঃ দুলাল। বন্দর অধিকতর গতিশীলে বাধা সৃষ্টিকারী সমস্যা দুটোর মধ্যে একটি হচ্ছে বন্দর চ্যানেলে ডুবান- রেক (ডুবে থাকা জাহাজ কার্গো) অপসারণ না করা। অপর সমস্যাটি হচ্ছে হিরণ পয়েন্টের মুখে সাগর থেকে বন্দর অভিমুখে জাহাজ প্রবেশের পথ আউটার (নদীর মুখে) বারে নদী খনন না হওয়া। এই দুটো সমস্যা বাদে মংলা বন্দর এখন ব্যবসায়ীদের সকল প্রকার সেবা দিতে প্রস-ুত।
গত ২০০৭- ২০০৮ অর্থ বছরে এ বন্দর দিয়ে পণ্য খালাস ও বোঝাই হয়েছে মাত্র ৭ লাখ ২২ হাজার মেঃ টন আর চলতি অর্থ বছর ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরে পণ্য খালাস বোঝাই হয়েছে ৪৫ লাখ ৩০ হাজার মেঃ টন । ওই অর্থ বছরে (২০০৭-২০০৮) জাহাজ এসেছিল মাত্র ৯৫টি মাসিক গড় ৮টি কিন’ এ অর্থ বছরে জাহাজ এসেছে ৪১৬ টি। মাসে বন্দরে জাহাজ আগমনের গড় প্রায় ৩৫ টি। এ অর্থ বছরে বন্দরের নীট মুনাফা ৬০ কোটি ১২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। বর্তমানে বন্দরের দক্ষ ব্যবস’াপনা পর্ষদের কারণে এ অর্থ বছর এ বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশী পণ্য খালাস বোঝাই করে আর্থিকভাবে বেশী মুনাফা করেছে বলে জানান বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল রিয়াজ উদ্দীন আহমেদ বিএন।
বন্দরে জাহাজ আগমন নির্গমনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে মংলা শুল্ক কর্তৃপক্ষ (কাষ্টমস) এ অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রার (টার্গেট) চেয়ে ১শ ২৪ কোটি বেশী রাজস্ব আদায় করেছেন বলে জানান খুলনা কাস্টমস কমিশনার ড. আল আমিন প্রামানিক। এ অর্থ বছরে মংলা কাষ্টমস অফিসের রাজস্ব আদায়ের টার্গেট ছিল ১ হাজার ৮শ ১৩ কোটি টাকা কিন’ আদায় হয়েছে ১ হাজার ৯শ ৩৭ কোটি টাকা ।
বি.এম.রাকিব হাসান,