মুদ্রা পাচার বা মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ কার্যক্রমের বিদ্যমান ব্যবস্থা পরিবীক্ষণের লক্ষ্যে এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন লন্ডারিং (এপিজি) কর্তৃক ৩য় পর্বের মিউচ্যুয়াল ইভ্যালুয়েশন প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত প্রতিবেদন (মিউচ্যুয়াল ইভ্যালুয়েশন রিপোর্ট-এমইআর) গত ৭ আগস্ট বুধবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়াগো শহরে চলমান এপিজির ১৯তম বার্ষিক সভায় অনুমোদিত হয়েছে।
এপিজে’র ১৯তম বার্ষিক সভায় ‘মিউচ্যুয়াল ইভালুয়েশন রিপোর্ট’ শিরোনামে প্রকাশিত ঐ প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিবৃতিতে বলা হয়, এপিজে’র চূড়ান্ত ইভালুয়েশন এবং এর ফাইনাল রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশ মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন ঝুঁকিমুক্ত দেশ। রিপোর্টে দেখা যায়, নরওয়ে এবং শ্রীলংকার চেয়ে, এমনকি অস্ট্রেলিয়া ও অনেক উন্নয়নশীল দেশের চেয়েও বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে অনেক ভাল অবস্থানে রয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়, সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লড়াই এবং মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী অর্থায়নের বিরুদ্ধে অভিযান আন্তর্জাতিক মানের।
সভায় এপিজে’র সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিরা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসী অর্থায়ন বন্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় অবস্থানের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের মানিলন্ডারিং সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ কার্যক্রম এপিজি ও এর ৪১টি সদস্য রাষ্ট্র কর্তৃক আন্তর্জাতিক মানের হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে এবং প্রদত্ত রেটিং অনুযায়ী বাংলাদেশের ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন রিভিউ গ্রুপ-প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যে আশঙ্কা করা হয়েছিল তা হতে বাংলাদেশ পুরোপুরি মুক্ত হয়েছে। এছাড়াও সন্ত্রাস, সন্ত্রাসে অর্থায়ন, জঙ্গিবাদ, মানিলন্ডারিংসহ অন্যান্য অপরাধ দমনে প্রধানমন্ত্রীর যে অঙ্গীকার তা এপিজি’র সভায় সকল সদস্য রাষ্ট্র কর্তৃক বহুলভাবে প্রশংসিত হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত কার্যক্রম বিবেচনায় নিয়ে অ্যাসেসমেন্ট টিম কর্তৃক প্রস্তাবিত রেটিংসমূহের মধ্যে দুটি ইমিডিয়েট আউটকাম (আইও)-এর রেটিং উন্নীত করা হয়। এছাড়া কয়েকটি সদস্য দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক ৪টি ইমিডিয়েট আউটকাম (আইও)-এর রেটিং কমানোর যে প্রস্তাব করা হয়েছিল তা সভায় বিবেচনায় নেয়া হয়নি। এর ফলে চূড়ান্ত রিপোর্টে বাংলাদেশের রেটিং নরওয়ে, শ্রীলঙ্কা হতে ভালো অবস্থানে রয়েছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়াসহ অনেক উন্নত দেশ হতেও ভালো অবস্থানে রয়েছে যা সন্ত্রাস, সন্ত্রাসে অর্থায়ন, জঙ্গিবাদ, মুদ্রা পাচারসহ অন্যান্য অপরাধ নির্মূলে বাংলাদেশের অবস্থানকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করেছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের উপর প্রথম ২০০২ সালের অক্টোবর মাসে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল কর্তৃক এ ধরনের মূল্যায়ন শুরু করা হয় যা ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর অ্যাসেসমেন্ট প্রোগ্রাম (এফএসএপি) নামে পরিচিত। ঐ সময়ে মানিল্ডারিং প্রতিরোধ বিষয়ে কার্যক্রম কেবলমাত্র শুরু হওয়ায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ নন-কমপ্লিয়েন্ট হিসেবে বিবেচিত হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ কর্তৃক প্রেরিত প্রতিবেদনসমূহ বিবেচনায় নিয়ে এপিজি সেক্রেটারিয়েট এর নেতৃত্বে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ব্রুনাই দারুস সালাম, নিউজিল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ৮ (আট) সদস্যের একটি মূল্যায়নকারী দল গত ১১-২২ অক্টোবর, ২০১৫ মেয়াদে বাংলাদেশ সফর করে। উক্ত সফরকালে দলটি বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ/সংস্থা এবং প্রাইভেট সেক্টরের ব্যাংক/বীমা/আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ বিচারক/শিক্ষাবিদ/সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করে তথ্য সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে গত ১ থেকে ৫ মে ২০১৬ মেয়াদে দলটি আবারও বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ/সংস্থার সাথে আলোচনার মাধ্যমে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ কার্যক্রমের বিদ্যমান ব্যবস্থা সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করে।
বাংলাদেশ কর্তৃক প্রেরিত প্রতিবেদন এবং উলি্লখিত দুইটি সফর হতে সংগৃহীত তথ্যাদির উপর ভিত্তি করে মূল্যায়নকারী দল কর্তৃক বাংলাদেশের মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ কার্যক্রমের উপর প্রতিবেদন (মিউচ্যুয়াল ইভ্যালুয়েশন রিপোর্ট-এমইআর) প্রস্তুত করা হয়। পরবর্তীতে উক্ত প্রতিবেদনের উপর পর্যালোচনাকারীদের পর্যবেক্ষণ, বাংলাদেশ এর মতামত এবং এপিজি’র চলমান বার্ষিক সভায় সদস্যদেশমূহের আলোচনার ভিত্তিতে বাংলাদেশের প্রতিবেদনটি (এমইআর) চূড়ান্ত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এবারের বার্ষিক সভায় বাংলাদেশের পক্ষে বিজ্ঞ এটর্নি জেনারেল, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ও বিএফআইইউ প্রধান, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালকসহ, দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ পুলিশ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই, বিএফআইইউ এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ অংশগ্রহণ করেছেন।