স্টাফ রিপোর্টার : অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে রাষ্ট্রায়াত্ত্ব অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ আবদুল হামিদকে চূড়ান্তভাবে অপসারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এদিকে দায়িত্ব নেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অগ্রণী ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মিজানুর রহমানসহ তিনজনকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেফতার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আটক অন্য দুইজন হলেন-অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান শাখার উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. আখতারুল আলম এবং সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. শফিউল্লা।
রাজধানীর মতিঝিল থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে তাদেরকে গ্রেফতার করেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. বেনজীর আহম্মদ। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, বিকেলে মতিঝিল এলাকা থেকে অগ্রণী ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মিজানুর রহমান, অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান শাখার উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. আখতারুল আলম এবং সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. শফিউল্লাকে আটক করা হয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে গতকাল বৃহস্পতিবার মতিঝিল থানা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নম্বর-৩৮। ঐ তিনজন ছাড়াও এ মামলায় আরও পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, পরস্পর যোগসাজশে নিজেরা লাভবান হয়ে এবং অন্যদের লাভবান করা জন্য একটি ভবনের অস্বাভাবিক নির্মাণ ব্যয় ও আয় দেখিয়ে মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে গ্রাহককে ১০৮ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করে। তারা পর্যায়ক্রমে ৯৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা উত্তোলন বা গ্রহণ করে। এতে ব্যাংক তথা রাষ্ট্রের ক্ষতিসাধনসহ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।
এর আগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রায়ত্ত্ব এই ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ আবদুল হামিদকে চূড়ান্তভাবে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ৭শ ৯২ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করার অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে আবদুল হামিদকে অপসারণের নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর দুপুরের দিকে ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব দেয়া হয় মিজানুর রহমানকে।
কিন্তু ভারপ্রাপ্ত এমডি’র দায়িত্ব পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাকেও গ্রেফতার করেছে দুদক।
এদিকে এমডি সৈয়দ আবদুল হামিদকে চূড়ান্তভাবে অপসারণের বিষয়টি জানিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক মহাব্যবস্থাপক স্বাক্ষরিত চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যানকে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের অপসারণ সংক্রান্ত চিঠি পাওয়ার সাথে সাথে আমরা সৈয়দ আবদুল হামিদকে জানিয়ে দিয়েছি। ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৪৬ ধারায় আইন লঙ্ঘন ও আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থ হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্রে জানা যায়, দায়িত্ব পালনকালে নানা অনিয়মের অভিযোগে সমপ্রতি তাকে শুনানির জন্য ডেকে পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক। শুনানিতে অনিয়মের বিরুদ্ধে সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারায় ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৪৬ ধারা মোতাবেক অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানা গেছে, মুন গ্রুপকে বেআইনিভাবে ঋণ দেয়ার ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকায় অগ্রণী ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান খানকে সব কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল হামিদ এ নির্দেশ উপেক্ষা করে তাকে একাধিক বিভাগের দায়িত্ব দেন। মোট ১০ ধরনের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততার দায়ে আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংক নীতিমালা অনুযায়ী, ২৫ লাখ থেকে ১ কোটি পর্যন্ত ঋণ অনুমোদন, পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন করতে পারেন এমডি। তবে অর্পিত ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে ৭৯২ কোটি টাকা ঋণসুবিধা দিয়েছেন আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।