বি. এম. রাকিব হাসান, খুলনা ব্যুরো: হাইব্রিড সবজি চাষ খুলনাঞ্চলের কৃষকদের ভাগ্য বদলে দিয়েছে। লবনাক্ত এলাকা খুলনার গ্রামে গ্রামে চাষ হচ্ছে এ সবজি। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় কৃষকরা এখন হাইব্রিড জাতের শাক-সবজির চাষ করছেন।
খুলনা বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলা মুলত উপকুলীয় অঞ্চলের অন-র্ভুক্ত। চিংড়ি চাষ করে গত ২ যুগে এ অঞ্চলের মানুষ বিশেষ সফলতা লাভ করে। কিন’ গত অর্ধযুগে এ অঞ্চলের চিংড়ি চাষীরা ভাইরাস সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এ শিল্পে লোকসান গোনে। তাছাড়া লবণাক্ততা নিয়ে পরিবেশবাদীরা সোচ্চার হয়ে ওঠে। পরিবেশ ও প্রতিবেশ সমন্বিত রাখার লক্ষে বিভিন্ন এনজিও ও সেচ্ছ্বাসেবী প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক প্রচারণা চালায়। ফলে চিংড়ি চাষীরা অনেকেই পেশা পরিবর্তন করে ঝুকে পড়ে সব্জি চাষে। আর এই সব্জি চাষই এখন এ অঞ্চলের চাষীদের অন্যতম জীবীকার উৎস। চাষীরা দেশীয় বীজ বাদে হাইব্রীড চাষ করে অধিকফলন ফলাচ্ছে। আর তাতেই এনেছে তাদের জীবনে সচ্ছ্বলতা।
দক্ষিণাঞ্চলের মৎস্য ঘেরের পাশের শত শত হেক্টর জমিতে এ সবজি চাষ হচ্ছে। রূপসা উপজেলার পাথরঘাটা গ্রামের কৃষক সেলিম শেখ জানান, আট বছর ধরে তিনি কৃষি কাজ করছেন। এ বছর তিন বিঘা জমিতে শসা ও করলা চাষ করেছেন। মোট ৮শ ঝারে লাল তীর সিডের আলাভী গ্রীণ জাতের শসা বীজ করে খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। এতে তার আয় হয়েছে ১ লাখ টাকা। একদিন পর একদিন ১২ মণ করে শসা ও করলা তুলে বিক্রি করছেন।
একই গ্রামের সুভাষ হালদার পাঁচ বছর ধরে কৃষি কাজ করছেন। এ বছর এক একর জমিতে ৩৫০টি ঝারে লাল তীরের আলাভী গ্রীণ জাতের শসা বীজ রোপন করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে মাত্র ৫ হাজার টাকা। ইতোমধ্যেই তিনি ২০ হাজার টাকার শসা বিক্রি করেছেন। একদিন পর একদিন তিনি ৫’শ কেজি করে শষ্য তুলে বিক্রি করে এখন পরিবার পরিজন নিয়ে স্বচ্ছল জীবনযাপন করছেন। বাগেরহাটের মোল্যাহাট উপজেলার আরুডিহি গ্রামের সেরজান মুন্সী বলেন, তার জমিতে ৭শ’ ঝাড়ে আলাভী গ্রীণ জাতের শসা, টিয়া জাতের করলা এবং মার্টিনা জাতের লাউ বীজ রোপণ করেছেন। শসা চাষে তার খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা।
এ পর্যন- ১৪০ মণ শসা বিক্রি করেন। প্রথমে মণপ্রতি ১২শ টাকা বিক্রি করেছেন। এখন প্রতি মণ ৪শ টাকায় বিক্রি করছেন। তিনি জানান, এ বীজের গুণাগুণ খুবই উন্নত। এ বীজ বপণ করার ২০ দিনের মধ্যে প্রতি গিটে গিটে ফল আসে। ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে ফসল বিক্রি করা যায়।
এ ব্যাপারে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, রামপালে ২শ হেক্টর জমিতে সবজির চাষ হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষক হাইব্রিড সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এ এলাকা লবণাক্ত এবং মৎস্য ঘেরে পূর্ণ। ঘেরের পাশেই সবজি চাষ হয়।
হাইব্রিড সবজি চাষে অল্প খরচে দ্বিগুণ লাভ সম্পর্কে লাল তীর সীড লিমিটেডের খুলনা এরিয়া ম্যানেজার মাহবুব-উল-হক বলেন, আলাভী গ্রীণ আমাদের নতুন জাতের বীজ। উন্নত মানের এ জাতের জীব চাষিদের মাঝে ব্যপক সাড়া ফেলেছে।
অপরদিকে লোনা অঞ্চল বলে খ্যাত সাতক্ষীরার তালা, পাটকেলঘাটা, কলারোয়া, আশাশুনি এলাকায় হাইব্রীড সব্জি চাষ শুরু হয়েছে। বিশেষ করে আঠারোমাইল তালা, পাটকেলঘাটা এলাকায় চাষীরা নতুন নতুন জাতের হাইব্রীড সব্জি চাষ করে এ অঞ্চলে বাজারজাত করছে। তাছাড়া ঢাকার ফড়িয়ারা ট্রাকে করে এ অঞ্চল থেকে সব্জি নিয়ে যাচ্ছে।
সূত্রমতে, হাইব্রীড সব্জি চাষে সফলতা আসলেও কৃষকরা সরকারী ঋনের সুবিধা না পাওয়া এবং এনজিওগুলোর চড়া সুদের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে কাঙ্খিত লক্ষে পৌছাতে পারছেনা। লভাংশের সিংহভাগ চলে যাচ্ছে এনজিওদের করা সমিতির সাপ্তাহিক কিসি-তে। প্রতিদিন বা দু’দিন অন-র কৃষকরা তাদের ক্ষেতের সব্জি তোলে। মাঠ পর্যায়ে বিক্রি করে খুব বেশি লাভ করতে পারেনা। কারণ কৃষকের কাছ থেকে ফড়িয়া কেনে আর ফড়িয়ার কাছ থেকে ব্যাপারীর হাত বদল হয়ে পাইকারী বাজারে যায়। আর সেখান থেকে আসে খুচরা বাজারে। যে কারণে কৃষকরা বেচা কেনা করে আগেই দিতে হয় এনজিওদের কিসি-র টাকা। হিসাব করলে দেখা যায় এসকল প্রানি-ক চাষিরা ৩০-৪২ শতাংশ পর্যন- সুদ দিয়ে থাকে। কৃষকদের যদি স্বল্প সুদে ঋন দেয়া সম্ভব হতো তাহলে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হতো। যে কারণে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলো ছোট ছোট দলভুক্ত করে কৃষকদের মাঝে স্বল্প সুদে সরকারি গ্রুপ ঋন প্রদানের দাবি করে আসছে সরকারের কাছে।