রক্তে ভেজা নিস'এ রক্তের জন্যই হাহাকার---ফ্রান্স থেকে পার্থ প্রতীম মজুমদার

 

kbdnews ডেস্ক : ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর নিস’এ হামলার ঘটনাকে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে চিহ্নিত করেছে দেশটির সরকার। ৮০ জনেরও বেশি লোক নিহত এবং সাড়ে ৪শ থেকে ৫০০ লোকের আহত হওয়ার প্রাথমিক খবর পাওয়া গেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিশ্বের সব এলাকার পর্যটকদের কাছে সমাদৃত নিসের রাস্তা রক্তে ভিজে গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতদের পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য সরকার জনগণের কাছে রক্তদানের আহ্বান জানিয়েছে। যে কোনো ধরনের সাহায্যের জন্য জরুরি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস থেকে বাংলাদেশি মূকাভিনেতা (মাইম) পার্থ প্রতীম মজুমদার এমনটাই জানিয়েছেন। অনলাইন দৈনিক বাংলা ট্রিবিউনের সৌজন্যে অনলাইন  kbdnews পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো-
দুই দশকের বেশি সময় ধরে ফ্রান্সে বসবাস করছেন পার্থ প্রতীম মজুমদার। তিনি জানান, শো’এর প্রয়োজনে অনেকবারই তিনি নিসে গিয়েছেন। সারাবছর রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া ও মনোরম পরিবেশের কারণে শহরটি পর্যটকদের কাছে খুবই পছন্দের জায়গা। নিসের প্রমেনাদে দেজ অ্যাংলেইস অনেক আগে থেকেই খুব বিখ্যাত। বিশ্বের খ্যাতনামা সব শিল্পী, প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সৌন্দর্যপিপাসুদের অ্যাপার্টমেন্ট-বাড়ি রয়েছে এর আশপাশে। তাদের অনেকেই সেখানে ছুটি কাটাতে আসেন এবং এ কারণে শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও বেশ উন্নত।

পার্থ প্রতীম জানান, এ বছর বাস্তিল দিবস বৃহস্পতিবার হওয়ায় শুক্রবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। বৃহস্পতি থেকে রোববার মোট পর্যন্ত ৪ দিন ছুটি হওয়ায় অনেকেই নিসে গিয়েছিলেন অবসর কাটাতে। তার ছেলে সুপ্রতীম নিসে হামলার সময় প্রায় দেড়শো কিলোমিটার কাছে অন্য একটি শহরে অবস্থান করছিলেন এবং মেয়ে দোয়েল বন্ধুদের সাথে ছুটি কাটাতে ছিলেন নিসের প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে একটি শহরে। বাংলাদেশি এই মাইম শিল্পী বলেন, এতো সুন্দর একটি শহরের রাস্তা রক্তে ভিজে গেছে। আবার সেখানেই রক্তের জন্য আকুল আবেদন জানানো হচ্ছে। এই ভয়াবহতার কথা ভাবলেই আমাদের গা শিউরে উঠছে। এরকম একটি ঘটনা যে ঘটতে পারে তা কেউই ভাবতে পারেনি।

তিনি জানান, ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে পারিসে শার্লি হেবদো ম্যাগাজিনের কার্যালয়ে ও নভেম্বরে একটি কনসার্ট হলে হামলার পর স্বাভাবিকভাবেই পুরো দেশজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ কড়া ছিল। এর মধ্যে বাস্তিল দিবসের অনুষ্ঠানে কীভাবে এই হামলা হলো তা অবাক করারই বিষয়। এতো গভীর গোয়েন্দা নিরাপত্তা ও কঠোর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মধ্যে ভয়াবহ হামলার ঘটনায় সরকারই হতভম্ব।

‘একটি ট্রাক দুই তিন কিলোমিটার রাস্তা মানুষ মারতে মারতে যাচ্ছে, কী ভয়াবহ! আমরা জেনেছি সাড়ে ৪শ-৫শ মানুষ আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য রক্ত চাওয়া হচ্ছে। উৎসবে মাতোয়ারা পরিবেশের মধ্যে এই হামলায় সবাই নির্বাক হয়ে গেছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট গত রাত ৩টার দিকে এই হামলাকে অন্যতম ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।’

ইউরো খেলার সময়টায় জুনের মাঝামাঝি থেকে জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত কোনো সহিংসতা বা বড় ধরনের অস্থিরতা না থাকায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ কম থাকতে পারে বলে জানান পার্থ প্রতীম মজুমদার।

গত বৃহস্পতিবারের হামলায় তিউনিসীয় বংশোদ্ভুত এক তরুণকে চিহ্নিত করার ঘটনায় ফ্রান্সে প্রবাসী ও মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর চাপ বাড়বে কিনা এ ব্যাপারে তার মতামত জানতে চাওয়া হয়। জবাবে পার্থ প্রতীম জানান, ফ্রান্সে ৭ কোটি মানুষের মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ লাখই মুসলিম। আর ফরাসি সমাজ এতোটাই উন্নত যে মুসলিম বা প্রবাসীদের ওপর চাপ আসবে এমনটা কেউই মনে করে না। তবে বিশ্বের যেকোনো জায়গাতেই যদি ভিন্ন পরিচয়বহনকারী কেউ হামলার জন্য দায়ী হয়, তাহলে নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর ওপর চাপ তৈরি হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে এখন সরকারসহ সবার দৃষ্টি ভয়াবহ হামলা পরিস্থিতি সামলিয়ে ওঠার দিকেই বলে মনে করেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় এই মূকাভিনেতা।

Post a Comment

Previous Post Next Post