২০১৮ সালের মধ্যে আইসিটি রপ্তানি বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে

আইসিটি

সম্মেলনের উদ্বোধন শেষে বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়

২০১৮ সালের মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতে রপ্তানি আয় এক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। এ ছাড়া বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং বা বিপিও খাতে ২০২১ সালের মধ্যে প্রতিবছর দুই লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে দুই দিনের ‘বিপিও সম্মেলন ২০১৬’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সজীব ওয়াজেদ জয় এসব কথা বলেন। দেশে ও আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের বিপিও খাতের অবস্থান ও সক্ষমতা তুলে ধরতে দ্বিতীয়বারের মতো এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, আইসিটি অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্য) যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ সংস্থা আইটিইউর মহাসচিব হাউলিন ঝাউ; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ইমরান আহমেদ; বাংলাদেশ  টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ; আইসিটি সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার এবং বাক্যর সভাপতি আহমাদুল হক বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ বাজার শক্তিশালী করতে না পারলে বিশ্ব বাণিজ্যে ভালো করা যাবে না। আমাদের স্থানীয় বিপিও প্রতিষ্ঠানগুলোকে আন্তর্জাতিক বাজারে ব্র্যান্ডিং করতে হবে।’

স্থানীয় অভিজ্ঞতার আলোকে বিশ্ববাজারে নিজেদের সক্ষমতা তুলে ধরতে এবারের বিপিও সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে ‘স্থানীয় অভিজ্ঞতা, বৈশ্বিক ব্যবসা।’ বিপিও খাতে সরকারের সরাসরি সহযোগিতার কথা তুলে ধরে জয় বলেন, বাংলাদেশে এ খাতে প্রতিবছর প্রচুর কর্মী প্রয়োজন। এ জন্য আইসিটি বিভাগ ৪০ হাজার প্রযুক্তিবিদ তৈরির প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বিপিও খাতকে সহযোগিতা করতে দেশে ১০টি আইটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র করা হবে।

সজীব ওয়াজেদ জয় আরো বলেন, দেশে বছরে ১০ হাজার কম্পিউটার সায়েন্স স্নাতক তৈরি হচ্ছে। এদের মধ্যে অনেকেই গুগল, ফেসবুক বা মাইক্রোসফটের মতো প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয়, বর্তমানে প্রতিটি গ্রামের জনগণ সরকারি সেবা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফল, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ অন্যান্য তথ্যসেবা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নিতে পারছে। দেশে ছয় কোটির বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে, বর্তমানে শতভাগ টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক রয়েছে।

আর্থসামাজিক উন্নয়ন সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পুত্র বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। এ লক্ষ্য অর্জনে আইসিটি খাতকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। স্কুলের পাঠ্য বইয়ের ছাপা সংস্করণের পাশাপাশি এখন পিডিএফ সংস্করণ পাওয়া যাবে বলেও জানান তিনি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘বিশ্ব বাণিজ্যে ভালো করতে হলে বিপিও খাতকে দেশের বাজারেও শক্তিশালী করতে হবে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ৩২ বিলিয়ন ডলার আয় করছে, যার মধ্যে শুধু গার্মেন্ট খাত থেকেই আসে ২৮ বিলিয়ন ডলার। রপ্তানি বাণিজ্য থেকে এক বিলিয়ন ডলার আয় হয়, এ রকম আর কোনো খাত আমাদের নেই। আমরা সে সুযোগটাই নিতে চাই।’

বিপিও খাতে প্রবৃদ্ধি প্রায় শতভাগ জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘বিপিও থেকে আমরা ১৮০ মিলিয়ন ডলার আয় করছি। ২০২১ সালের মধ্যে আইসিটি খাত থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলার আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সরকার কাজ করছে, তার মধ্যে শুধু বিপিও খাত থেকেই এক বিলিয়ন ডলার আয় করার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।’

পলক বলেন, ‘আমাদের পাশের দেশ ভারত, শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইন বিপিও সেক্টরে সবচেয়ে ভালো করেছে। বিপিও সেক্টরে সারা বিশ্বের ৬০০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ভারত প্রায় ১০০ বিলিয়ন, ফিলিপাইন ১৬ বিলিয়ন এবং শ্রীলঙ্কা তিন বিলিয়ন ডলার আয় করছে। আমাদের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে এই খাতে এক বিলিয়ন ডলার আয় করা।’

আইটিইউ মহাপরিচালক হাওলিন ঝাও বলেন, বাংলাদেশ বিপিও সেক্টরে অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। এই ধারা বজায় রাখতে হবে। বিপিও সেক্টরে এগিয়ে যাওয়া দক্ষ জনবল তৈরি করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

ইমরান আহমেদ বলেন, বিপিও খাতে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

শাহজাহান মাহমুদ বলেন, বিপিও সেক্টরকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বিটিআরসি সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছে। বিপিও সেক্টর ও বিটিআরসি যৌথভাবে কাজ করছে। আয়োজকরা জানান, দুই দিনের আয়োজনে ২০ জন আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন সেমিনার ও কর্মশালায় বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকছেন। এতে ২৫ হাজারের বেশি দর্শনার্থীর উপস্থিতি আশা করছে আয়োজকরা। পুরো আয়োজনটি অনলাইনে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে। ভেন্যুতে রয়েছে ফ্রি ওয়াইফাই সুবিধা।

সম্মেলনের প্রথম দিন ‘গভর্নমেন্ট প্রসেস আউটসোর্সিং : গ্লোবাল বেস্ট প্র্যাকটিসেস’, ‘প্রোটেক্টিং ডাটা অ্যান্ড প্রাইভেসি ইন দ্য কানেক্টেড নেটওয়ার্ক ওয়ার্ল্ড’, ‘অপরচুনিটিজ ইন লোকাল অ্যান্ড গ্লোবাল বিপিও ফর ইউথ’, ‘বিগ ডাটা অ্যানালিসিস ফর নিউ হরাইজন ইন বিজনেস ইন্টেলিজেন্স’, শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

বিপিও সামিট শেষ আজ : দুই দিনের এ আয়োজনের পর্দা নামবে আজ শুক্রবার। সন্ধ্যা ৬টায় বলরুমে বিপিও সামিটের সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ ছাড়া সমাপনী দিনে দেশের বিপিও খাতের সফল উদ্যোক্তাদের পুরস্কৃত করা হবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post