বি. এম.রাকিব হাসান, খুলনা: আধুনিক সুযোগ সুবিধার অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছেন সুন্দরবনের মাঠ পর্যায়ের অতন্দ্র প্রহরী বনরক্ষীরা। বৈষম্যের কারণে বনরক্ষীদের নেই রেশনিং ও ঝুঁকিভাতা। ফলে নানা প্রতিকুলতায় ব্যাহত হচ্ছে সুন্দরবন রক্ষায় কার্যক্রম। সূত্র জানায়, বিশ্ব ঐতিহ্য ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন রক্ষায় নিয়োজিত বন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন স্কেলের সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকায় মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়। এমনকি গহীন বনে চাকরি বলে সরকারি ছুটিগুলোও তারা ভোগ করতে পারেন না পরিবারের সাথে। সুন্দরবনে চাকরিরত অবস’ায় বন বিভাগের কোন কর্মচারী মারা গেলে সরকারের পক্ষ থেকে কোন বেতন ভাতা দেয়া হয় না।
অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সুন্দরবনে কর্মরতদের ২ লাখ টাকা ঝুঁকি ভাতা দেয়া হয় বলে সূত্র জানিয়েছে। সুন্দরবনের পশ্চিম বন বিভাগ খুলনা রেঞ্জের ভোমরখালী টহল ফাঁড়ির বনকর্মী বলেন, বনের ভেতর টহলের জন্য নেই কোন আধুনিক নৌযান। এক ফাঁড়ি থেকে অন্য ফাঁড়িতে দ্রুত কোনভাবে পৌঁছানো যায় না। বনের ভেতর সব জায়গায় মোবাইল নেটওয়ার্ক কাজ করে না। তিনি আরো বলেন, বনদস্যু, বাঘ ও কুমিরের সঙ্গে লড়াই করে তাদের সুন্দরবনে কাজ করতে হয়। ইচ্ছা থাকলেও অনেক কাজ তারা করতে পারেন না। কারণ, ঝুঁকি ভাতা তো দূরের কথা ভাল কাজের কোন প্রশংসাও পাওয়া যায় না। বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ৬ হাজার ১৭ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট সুন্দরবনের স’লভাগের পরিমাণ ৪ হাজার ১৪৩ বর্গকিলোমিটার ও জলভাগের পরিমাণ ২ হাজার ৮৭৪ বর্গ কিলোমিটার। সুন্দরবন বনবিভাগ পূর্ব ও পশ্চিম এ দুভাগে বিভক্ত। দু বিভাগে মোট ৪টি রেঞ্জ রয়েছে। সুন্দরবনের মধ্যে শতাধিক খাল রয়েছে। এ সকল খাল নদী পরিদর্শন করার জন্য ৭৬টি ক্যাম্প ও মাত্র ১৭৮ জন বন প্রহরী আছেন। যা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন- কম। সুন্দরবন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত লোকবল ও সরঞ্জামাদি নেই।
ভুক্তভোগী বনকর্মীরা জানান, পুলিশ বিভাগের ন্যায় শতভাগ ফ্যামিলি রেশন, ঝুঁকি ভাতা, কর্মরত অবস’ায় নিহত পরিবারের জন্য এককালীন অনুদান এবং সুন্দরবনসহ অন্যান্য বন বিভাগের জন্য শতকরা ৩০ ভাগ দুর্গম ভাতা পাবার জন্য সংশ্ল্লিষ্ট বন মন্ত্রণালয়ে একটি লিখিত আবেদন করা হলেও এ ব্যাপারে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ বনপ্রহরী কল্যাণ সমিতির সুন্দরবন পশ্চিম আঞ্চলিক শাখার সভাপতি সৈয়দ অলিয়ার রহমান মিলন জানান, তাদের দাবিকৃত আবেদন বন মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে গিয়ে লাল ফিতায় আটকে গেছে। পশ্চিম সুন্দরবনের বিভগীয় বন কর্মকর্তা বলেন, বন বিভাগের স্টাফদের দাবি দাওয়ার বিষয়টি একাধিকবার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
বি. এম. রাকিব হাসান
খুলনা
২৪-০৬-১৬