খুলনায় বিমান বন্দর নির্মাণ প্রকল্প প্রাইভেট সেক্টরে বাস-বায়নের রোডম্যাপে অগ্রসর

 

বি. এম. রাকিব হাসান, খুলনা ব্যুরো: বহু কাঙ্খিত বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দিনের প্রাণের দাবি খানজাহান আলী (রহ:) বিমান বন্দর প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর ফাস্টট্র্যাক প্রকল্পে অন-র্ভুক্ত হয়েছে। এটি খুলনাঞ্চলের মানুষের জন্য আশার বানী। তবে সরকার কৌশলী হয়ে এ প্রকল্পটি প্রাইভেট সেক্টরে বাস-বায়নের রোডম্যাপে অগ্রসর হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীও সম্মতি দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে দফায় দফায় প্রকল্প বাস-বায়ন নিয়ে দুতিয়ালীর দায়িত্ব পালন করছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান। ২০১৯ সালে প্রকল্পটির বাস-বায়ন সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি ইতিমধ্যে একনেকে পাশ হয়েছে। সরকার তার মেয়াদকালে প্রকল্পটি বাসত্মবায়নের সরকার তার মেয়াদকালে শতভাগ সুফল ঘরে তুলতে চায়। আগামী নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে এ প্রকল্পের সফলতা সহায়ক বলে মনে করছেন স’ানীয় রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
সূত্রমতে, মংলা বন্দরকে আধুনিকায়ন করা এখন সময়ের দাবীতে পরিণত হয়েছে। অবহেলিত এ সেক্টরটিকে সূর্যালোকে প্রস্ফুটিত করার দাবী সর্বমহলের। প্রস-াবিত বিমান বন্দরটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর বাগেরহাট জেলার মংলার অতি কাছে এবং বিভাগীয় শহর খুলনা থেকে মাত্র ১৫ কি:মি: দূরে। বিমান বন্দরটি স’াপিত হলে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য গতিশীল হবে। দেশী ও বিদেশী ব্যবসায়ী মহল তুলনামূলক কম সময়ে ও নিরাপদে ইপিজেড ও মংলা বন্দরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ও মালামাল পরিবহনসহ ইপিজেড ও বন্দরের কার্যকারিতা বাড়বে। অন্যদিকে বিশ্বের একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের পর্যটন বিকাশে এই বিমান বন্দর বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এদেশের পর্যটন সেক্টরে সুন্দরবনের অপরূপ বৈচিত্র্য, হযরত খানজাহান আলী (রহ:) মাজার, ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদ, পার্শ্ববর্তী গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনকের মাজার ও স্মৃতিসৌধ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষের বাসস’ান পিঠাভোগ এবং দক্ষিণডিহির শ্বশুরালয় ইত্যাদির গুরুত্ব অপরিসীম। বিমান বন্দরটি নির্মাণ হলে পর্যটকদের নিরাপদ যাতায়াত সুবিধা হবে এবং পর্যটনখাতের উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান বলেন, বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটি সহ এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দিনের প্রাণের দাবী খুলনাঞ্চলে বিমান বন্দর প্রতিষ্ঠা। এ পর্যন- সরকারীভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও তহবিল সংকটের কারণে যথাসময়ে প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি। কিন’ প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছায় প্রকল্পটি খুব দ্রুত বাস-বায়ন হবে।
খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, ফয়লায় খানজাহান আলী বিমান বন্দর নির্মাণ প্রক্রিয়া নানা অবহেলার শিকার হওয়া সত্ত্ব্বেও যতটুকু কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে এবং আরো কিছু টাকা খরচ করে স্বল্প সময়ের মধ্যে ছোট যাত্রীবাহী বিমান ওঠানামার ব্যবস’া করা সম্ভব। প্রথম পর্যায়ে এই ব্যবস’া করে খানজাহান আলী বিমান বন্দরের ঐতিহাসিক যাত্রা শুরু করা যায়।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্য সমপ্রসারণ, দ্বিতীয় বৃহত্তম সামুদ্রিক বন্দর মংলাকে কার্যকর ও সুন্দরবনের পর্যটন সুবিধার লক্ষ্যে খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্প বাস-বায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। ১৯৯৬ সালে বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য একনেক অনুমোদন দেয়। এ বিমানবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ অভ্যন-রীণ বিমানবন্দরে রূপান-রের জন্য ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সিদ্ধান- নেয়। এর আগে বিএনপি সরকারের শেষ বছর ১৯৯৫ সালের মার্চে তদানীন-ন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রস-াবিত খানজাহান আলী বিমানবন্দরের ভিত্তি প্রস-র স’াপন করেন।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠনের পর দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক ও যোগাযোগ ব্যবস’া উন্নয়নে পুনরায় ‘খানজাহান আলী বিমানবন্দর প্রকল্প’ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিশেষ বিবেচনায় নেয়া হয়। ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় প্রাক্কলিত ব্যয় ৩শ’ ২২ কোটি টাকার পরিবর্তে ৪শ’ ৫৪ কোটি টাকা নির্ধারণের জন্য প্রকল্পটি পুনরায় মূল্যায়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠানের জন্য বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা কমিশনকে অনুরোধ জানানো হয়। সর্বশেষ খান জাহান আলী বিমান বন্দর প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারন করা হয়েছে ৫৪৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এদিকে ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনা-সাতক্ষীরা সফরকালে বিমানবন্দর প্রকল্পটি বাস-বায়নে প্রতিশ্রুতি দেন। প্রকল্প বাস-বায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়।
সূত্রমতে, অতি সমপ্রতি প্রধান মন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়েছে, দেশি ও বিদেশী মালিকানায় গঠিত যৌথ উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস-বায়ন করা হবে। ওরিসিস শীর্ষক বিদেশী কোম্পানী অর্থ সংস’ান করতে ইচ্ছুক। লার্সেন এন্ড ট্যারবো লি: কারিগরি বিষয়বলি ও নির্মানের দায়িত্ব নিতে সক্ষম হয়েছে। ৩০ বছর তারা বিমান বন্দর পরিচালনা করবে। প্রকল্পটি উন্নয়ন কর্মসূচীতে অন-র্ভূক্ত আছে। পদ্মার এপারে বৃহত্তর আন-র্জাতিক বিমান বন্দর নির্মানের জন্য অধিক পরিমান জমি অধিগ্রহন করা হচ্ছে। তাই পিপিপিতে বিমান বন্দর নির্মান ও পরিচালনা করলে নির্ধারিত সময়ে অর্থ সরবরাহ ও চালু করা সম্ভব হবে। প্রকল্প থেকে সাশ্রয় প্রাপ্ত অর্থ সরকার অন্য প্রকল্পে ব্যয় করতে পারবে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে বিমান বন্দরটি নির্মান সংক্রান- আন-: মন্ত্রণালয়ের সভায় গৃহীত হয় যে এই প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর ফাষ্টট্র্যাক প্রকল্পে অন-র্ভুক্ত হচ্ছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post