KBDNEWS ডেস্ক : করযোগ্য আয়সীমার মধ্যে পড়লেও অধিকাংশ সরকারি চাকরিজীবীই আয়কর বিবরণী জমা দিচ্ছেন না। ফলে সরকারের পক্ষে ওসব চাকরিজীবীদের সম্পদের হিসাব চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে সরকারের কাছে হিসাব নেই প্রায় ২ লাখ সরকারি চাকরিজীবীর। ফলে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যদিও বিধান অনুযায়ী আয়কর বিবরণীতে সরকারি চাকরিজীবীদের ব্যক্তিগত সব ধরনের সম্পদের হিসাব উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক।
এমন পরিস্থিতিতে করযোগ্য সরকারি চাকরিজীবীদেও বেতন-ভাতা থেকে আয়কর আদায় নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি এ ব্যাপারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবকে আধাসরকারি পত্র দেয়া হয়েছে। ঐ চিঠিতে সরকারি চাকরিজীবীদের কাছ থেকে কর আদায় করতে হিসাবরক্ষণ কার্যালয় ও দফতরপ্রধানকে নির্দেশ দিতে সচিবদের অনুরোধ করা হয়েছে। এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবীরা সাধারণ নাগরিকের মতো নিজ থেকেই করযোগ্য আয়ের রিটার্ন জমা দিচ্ছেন। আর ঐ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী রিটার্ন দাখিল করা থেকে বিরত থাকছেন। আবার যারা বর্তমানে আয়কর বিবরণী জমা দিচ্ছেন তাদের অনেকেও অর্জিত সম্পদের প্রকৃত হিসাব উল্লেখ করেন না। বিগত ওয়ান-ইলেভেনের সময় আয়কর বিবরণী জমা দেয়ার পাশাপাশি আলাদাভাবে নির্ধারিত ছকে সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদ বিবরণী জমা দিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ জারি করা হয়েছিল। তখন যারা রিটার্ন জমা দিয়েছিলেন তাতে দেখা গেছে আয়কর বিবরণীর সাথে সম্পদ বিবরণীর মধ্যে বিস্তর ফারাক ছিল। এমনকি একপর্যায়ে প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে ঐ সম্পদ বিবরণী জমা দেয়ার কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যায়।
সূত্র জানায়, বেশ কয়েকটি কারণে সরকারি চাকরিজীবীরা রিটার্ন জমা দিচ্ছেন না। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- কেউ রিটার্ন দাখিল না করলেও তাদের তেমন কোনো জবাবদিহিতা করতে হচ্ছে না। পাশাপাশি রিটার্ন দাখিল করলে নূ্যনতম ৫ হাজার টাকা জমা দেয়ার বিধান রয়েছে। ঐ টাকাও যাতে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে না হয় সেজন্য অনেকেই রিটার্ন দাখিল করা থেকে বিরত থাকছে। যদিও বেতনের বাইরে ব্যক্তিগত সম্পদের ওপরও আয়কর জমা দিতে হয়। সেক্ষেত্রে অনেক সরকারি চাকরিজীবীর মধ্যেই আয়ের সাথে ব্যক্তিগত সম্পদের ব্যাখ্যায় গরমিল হওয়ার শঙ্কা কাজ করে। এই পরিস্থিতিতে চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে করযোগ্য অর্থ উপার্জনকারী সরকারি কর্মকর্তাদের উৎসে আয়কর দেয়ার বিধান চালু করা হয়েছে। ঐ বিধান অনুযায়ী প্রতি মাসে ঐ কর না দিলে প্রদেয় করের ওপর ২ শতাংশ হারে জরিমানা আরোপ করার কথা বলা হয়। কিন্তু চলতি অর্থবছরের ১০ মাস চলে গেলেও এখনো অধিকাংশ সরকারি চাকরিজীবী প্রতি মাসে উৎসে কর দেয়া শুরু করেনি। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে বিধান অনুযায়ী কোনো জরিমানা করা হয়েছে কিনা সে ব্রাপারেও সংশ্লিষ্টদের কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।
সূত্র আরো জানায়, গত জুলাই থেকে সাড়ে ১২ লাখ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর জন্য অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেল কার্যকর করা হয়েছে। ঐ স্কেল অনুযায়ী গত অর্থবছরের (২০১৪-১৫) তুলনায় করযোগ্য কর্মকর্তার সংখ্যা আরো বাড়বে। এ কারণে সরকারি চাকরিজীবীদের কাছ থেকে আয়কর আদায় নিশ্চিত করতে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সিনিয়র সচিব, সচিব ও সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান চিঠি দিয়েছেন। ঐ চিঠিতে বলা হয়- বেতন খাতে প্রাপ্ত আয়ের ওপর আয়কর অধ্যাদেশ ১০৮৪-এর ধারা ৫০ অনুযায়ী উৎসে কর কর্তনের বিধান রয়েছে। যা সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ইতিমধ্যে জারিকৃত নতুন বেতন স্কেলে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হয়েছে। ফলে এ খাতের উৎসে করের পরিমাণও বাড়বে। কর আইনের বিধান অনুযায়ী মূল বেতন, উৎস ভাতা, বোনাস খাতের প্রাপ্ত আয় করযোগ্য। সেজন্য সব করযোগ্য কর্মকর্তাদের কাছ থেকে উৎসে কর কর্তন নিশ্চিত করতে চিঠিতে বলা হয়।
এদিকে নতুন বেতন স্কেলের প্রথম থেকে নবম গ্রেডের কর্মকর্তারা আয়করের আওতায় আসছেন। ঐ হিসেবে প্রথম গ্রেডের (সচিব) একজন পুরুষ কর্মকর্তাকে কর দিতে হবে ৫৭ হাজার ১৬০ টাকা ও মহিলা কর্মকর্তাকে দিতে হবে ৪৯ হাজার ৬৬০ টাকা। দ্বিতীয় গ্রেডের পুরুষ কর্মকর্তাকে দিতে হবে ৩৯ হাজার ৫২০ টাকা ও মহিলা কর্মকর্তাকে দিতে হবে ৩২ হাজার ২০ টাকা। তৃতীয় গ্রেডের পুরুষ ২৫ হাজার ৫৫০ টাকা ও মহিলা ১৮ হাজার ৫৫ টাকা। চতুর্থ গ্রেডের পুরুষ ১৬ হাজার টাকা ও মহিলা সাড়ে ৮ হাজার টাকা এবং পঞ্চম গ্রেডে পুরুষ কর্মকর্তাকে দিতে হবে ৮ হাজার ১১০ টাকা ও মহিলা কর্মকর্তাকে দিতে হবে ৫ হাজার টাকা। আর ষষ্ঠ থেকে নবম গ্রেড পর্যন্ত পুুররুষ ও মহিলা কর্মকর্তাদের করের পরিমাণ একই। সেক্ষেত্রে নূ্যনতম ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত বিনিয়োগ বাদ দিয়েই আয়করের এই হিসাব প্রণয়ন করা হয়েছে।
অন্যদিকে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয় কর্মকর্তাদের সাথে এনবিআর কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে এনবিআরের সদস্য (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) আবদুর রাজ্জাক বলেন, বর্তমানে ১১তম গ্রেডের কর্মকর্তা পর্যন্ত করযোগ্য আয় করেন। এ-গ্রেড পর্যন্ত হিসাব করলে দেখা যায় আড়াই থেকে তিন লাখ কর্মকর্তা করযোগ্য অর্থ উপার্জন করেন। কিন্তু রিটার্ন দাখিল করেন মাত্র ৬৫ থেকে ৭৫ হাজার জন। ঐ হিসেবে কমপক্ষে ২ লাখ সরকারি চাকরিজীবী রিটার্ন জমা দিচ্ছেন না। -এফএনএস