খুলনা থেকে বি এম রাকিব হাসান : স্থাপনা ও গাছপালা বিক্রি করে সরকারি কোষাগারে নেয়া হয়েছে সাড়ে ৬ কোটি টাকা। পরিশোধ হয়েছে ব্যাংকের ঋণও। এর পরও ৬টি বছর কেটে গেল শুধু মামলা পরিচালনা করতেই। মামলার দোহাই দিয়ে আগামী বাজেটেও খুলনা টেক্সটাইল পল্লীর জন্য অর্থ বরাদ্দ না হলে পিছিয়ে যেতে পারে আরও একটি বছর। শেষ পর্যন্ত খুলনা টেক্সটাইল পল্লী শুধু স্মৃতি হয়ে থাকে কি না এমন প্রশ্নও খুলনাবাসীর।
সংশিষ্ট সূত্রমতে, খুলনার বয়রা এলাকায় বর্তমান নিউ মার্কেটের পশ্চিম পাশ্র্বে আচার্য প্রফুলচন্দ্র কটন মিল নামে ১৯৩১ সালে ২৬.৬৩ একর জমির ওপর স্থাপিত মিলটি ১৯৬০ সালে খুলনা টেক্সটাইল মিলস লি: নামে নামকরণ করা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির ২৭ নম্বর আদেশে মিলটি জাতীয়করণের পর ১৯৯৩ সালে লে-অফ ঘোষণা করে সব জনবল বিদায় দেয়া হয়। এরপর ১৯৯৯ সালে খুলনা টেক্সটাইল পল্লী স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০০১ পরবর্তী সরকার আমলে ওই প্রকল্প স্থবির থাকলেও ২০০৯ পরবর্তী সরকার আবারও প্রকল্পটি চালু করে। কিন্তু স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে রূপালী ব্যাংক মামলা দায়ের করে। এতে প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। মিলের সাথে রূপালী ব্যাংকের সোলেনামা মূলে বিরোধ নিষ্পত্তির পর পুনরায় প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যে পরিশোধও করা হয় ব্যাংকের ২ কোটি ৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা ঋণ। ব্যাংক ঋণ পরিশোধের পর ১৮.০২ একর জমিতে ৩৬টি শিল্প পটে বিভক্ত করে কার্যক্রম শুরু হয়। এর বাইরে অতিরিক্ত ৪.৬১ একর জমি রাস্তা, মসজিদ, বিদ্যালয়, কবরস্থান, পার্ক এবং ইউটিলিটি সার্ভিসের জন্য রাখা হয়। ইতোমধ্যেই বিক্রি করা হয় মিল এলাকার যন্ত্রপাতি, ভবন ও গাছপালা। অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে সরকারী কোষাগারে নেয়া হয় সাড়ে ৬ কোটি টাকা। ঠিক এমনই সময় ২০১০ সালে জনৈক মাহমুদ আলী মৃধা হাইকোর্টে একটি রীট পিটিশন দায়ের করেন। যার নম্বর ৯৮৮০/২০১০। ওই রীটের বিপরীতে ২০১১ সালের ২৪ জানুয়ারি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ খুলনা টেক্সটাইল মিলের শেয়ার হস্তান্তর করা হতে সরকারকে বিরত থাকার অন্তবর্তী আদেশ দেয়। পরে বিটিএমসির পক্ষ থেকে আপীল করা হলে উভয়পক্ষের শুনানী শেষে রীট পিটিশনটির রায়ের জন্য নির্ধারিত থাকাবস্থায়ই বিচারিক বেঞ্চ ভেঙে যায়। এতে মামলাটি অনিষ্পন্ন থাকে। বিচারিক বেঞ্চ ভেঙে যাওয়ার দীর্ঘদিন পর মামলাটি হাইকোর্টের এন এক্স ২৬ নম্বর কক্ষের বিচারপতি রেফাত আহমেদের বেঞ্চে প্রেরণ করা হয়। সেখানে গত বছর ১২ ডিসেম্বর থেকে নতুন করে শুনানি শুরু হয়। বাদীপক্ষের একাধিকবার সময় প্রার্থনার পর শুনানির এক পর্যায়ে আবারও বেঞ্চ ভেঙে যাওয়ায় বিচারকার্য বিলম্বিত হয়। বর্তমানে নতুন বেঞ্চ গঠসের অপেক্ষায় রয়েছে মামলাটি।
এ প্রসঙ্গে বিটিএমসির আইন উপদেষ্টা এড. মো. ফিরোজ আহমেদ বলেন, মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে চাপ রয়েছে। ইতোমধ্যে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মীর্জা আজম এটর্নি জেনারেলের সাথে কথা বলেছেন। এটর্নি জেনারেল এড. মাহবুবে আলম, ডেপুটি এটর্নি জেনারেল শহীদুল ইসলাম ও সিনিয়র আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা করছেন। বেঞ্চ গঠনের পর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এটি দেখা হবে।
মিলের মহাব্যবস্থাপক মো. সাইফুর রহমান বলেন, বেঞ্চ ভেঙে যাওয়ায় মামলাটি আগের অবস্থায়ই রয়েছে। শীঘ্রই নতুন বেঞ্চ গঠন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আগে বেঞ্চ ঠিক রাখার চেষ্টা চলছে। মিলের হিসাব বিভাগীয় প্রধান কাজী মো. নুরুল আলম বলেন, মামলাটি যে পর্যায়ে রয়েছে তাতে নতুন বেঞ্চ গঠন হওয়া মাত্রই নিষ্পত্তি হতে পারে। কারণ ইতোমধ্যেই বাদীপক্ষ তাদের দাবি থেকে সরে গেছে। এখন শুধু ক্ষতিপূরণই তাদের মূল লক্ষ্য। তাছাড়া খুলনার আ. মজিদ গং জমি সংক্রান্ত যে মামলা দায়ের করেছেন তাতেও তাদের দু’বার পরাজয় হয়েছেন। সুতরাং হাইকোর্ট থেকে মামলাটি নিষ্পত্তি হওয়ার পর টেক্সটাইল পল্লী বাস্তবায়নে আর কোনো বাধা থাকবে না। খুলনা টেক্সটাইল পল্লী বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ও বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব বলেন, মামলার জন্য অপেক্ষা না করে আগামী জাতীয় বাজেটে খুলনা টেক্সটাইল পল্লীর জন্য অন্তত থোক বরাদ্দ রাখা উচিত। তাহলে মামলাটি নিষ্পত্তি হওয়ার পরই টেক্সটাইল পল্লীর কাজ শুরু করা যাবে। তা না হলে আরও একটি বছর পিছিয়ে যেতে পারে এ প্রকল্পটি। শেষ পর্যন্ত এটি খুলনাবাসীর জন্য কি শুধু স্মৃতি হয়ে থাকবে কি না এমন প্রশ্নও তোলেন তিনি।