রিজার্ভের অর্থ চুরি :
বিশেষ প্রতিনিধি : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের হাজার হাজার কোটি টাকা হ্যাকিং করে হাতিয়ে নেয়াসহ আরো কয়েকটি বিশেষ ঘটনা তদন্তে ইন্টারপোলের ৬ সদস্যের একটি দল সিআইডিকে সহযোগিতা করতে এখন ঢাকায় অবস্থান করছে। এ দলটি তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। ইতোমধ্যে তারা কাজ শুরু করেছে।
গতকাল বুধবার তারা সিআইডি কার্যালয়ের ল্যাবে রাসায়নিক পরীক্ষার কাজ শুরু করেন। আগামী কয়েক দিন তারা ল্যাবে সিআইডিকে বিভিন্ন পরীক্ষার কাজে সহযোগিতা করবেন। গতকাল দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে বৈঠক করেন তারা। একপর্যায়ে তারা সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে বিভিন্ন আলামত পরীক্ষা করেন।
গতকাল বুধবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ডিভিশনে প্রধান বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মির্জা আব্দুল্লাহেল বাকি জানান, রিজার্ভ চুরিসহ আরো কয়েকটি বিষয়ে তারা আমাদের সহযোগিতা করবেন। ব্রেড মারডেনের নেতৃত্বে এ দলটি মঙ্গলবার ঢাকায় আসে। তারা রাসায়নিক পরীক্ষাসহ বেশকিছু বিষয়ে আমাদের সহযোগিতা করবে। তাদের সাথে সিআইডির বিশেষজ্ঞ দলও কাজ করছে। প্রতিনিধি দলটি মূলত আইটি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ। তারা তিনদিন ঢাকায় অবস্থান করবেন।
মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের কারা জড়িত, তাদের শনাক্ত করতে এসব পরীক্ষা করা হচ্ছে। তাদের সঙ্গে সিআইডির বিশেষজ্ঞ দলও কাজ করছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভে গচ্ছিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরি করে হ্যাকাররা। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় ২০ মিলিয়ন ও ফিলিপাইনে ৮১ মিলিয়ন ডলার স্থানান্তর করা হয়। গত ৫ ফেব্রুয়ারি ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে ঐ দেশের রিজাল কমার্স ব্যাংকের ৫ জন গ্রাহকের হিসাবে স্থানান্তর হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক অব নিউইয়র্ক, সিটিব্যাংক ও ওয়েলস্ ফারগো- এ তিনটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনের ব্যাংকে পাঠানো হয়েছিল। এ অর্থ গত বছরের মে মাসে খোলা ৫টি হিসাবে জমা করা হয়েছে। এ হিসাবগুলো ঐ মে মাসেই ভুয়া তথ্য দিয়ে খোলা হয়েছিল।
এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ সার্ভার হ্যাক করে ৬ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা (৮৭০ মিলিয়ন ডলার) ফিলিপাইনের রিজাল কমার্স ব্যাংকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু অর্থ স্থানান্তরের বিষয়টি অস্বাভাবিক মনে করে ফিলিপাইন কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থ ছাড় না করার নির্দেশ দেয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক বড় বিপদ থেকে রক্ষা পায়।
অন্যদিকে প্রাপকের নামের বানান ভুলের কারণে শ্রীলঙ্কার একটি ব্যাংক ২০ মিলিয়ন ডলার আটকে দেয়। তবে ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকের ৪টি অ্যাকাউন্ট থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার উঠিয়ে নিতে সক্ষম হয় জড়িতরা।
অর্থ চুরির এ ঘটনায় পরে মতিঝিল থানায় মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তদন্তে চুরির সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার বিষয়ে বেশকিছু তথ্য পাওয়া যায়। তবে কে বা কারা জড়িত, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। প্রযুক্তিগত, ফরেনসিক, ম্যানুয়ালি এবং জিজ্ঞাসাবাদে যে ধরনের তথ্য আসছে সেসব নিয়ে তদন্ত ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে।