॥আবু লায়েছ লাবলু, :ভাইসব আখের রস খান আর পরাণটা জুড়াইয়া যান। এগরমে আখের রস বিক্রি করে অন্যের পরাণটা জুড়াইয়া দেওয়ার পাশাপাশি সারা বছর নিজের ৮ সদস্য বিশিষ্ট পরিবারের জীবনটা বাঁচিয়ে রেখেছেন ষাটোর্দ্ধ আফতাব শেখ। তিনি মেহেরপুর শহরের উপকণ্ঠ খন্দকারপাড়ার বাসিন্দা ও ৬ সনত্মানের জনক।
মেহেরপুর খন্দকারপাড়ার আফতাব শেখ হৃতদরিদ্র কৃষক। নিজের জমি জায়গা নেই। তাই অন্যের জমিতে কামলা (জোন) খাটতেন। জীবনের অনেকগুলো বছর পার হয়ে গেছে তার। মাঠের পরিশ্রম শরীরে আর সয়না। তাই তিনি ৫/৬ বছর আগে মাঠের কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। ৪ ছেলে ও ২ মেয়েসহ সংসারে রয়েছে ৮টি মুখ। কাজ ছাড়লেও সংসার তাকে ছাড়েনা। ৮ জনের মুখের আহার তাকে যোগাড় করতেই হবে। তাইতো তিনি বেছে নেন আখের রস বিক্রি করার। পরিশ্রম কম; আবার কামলা খাটার চেয়ে অনেক বেশী আয়। এখন তিনি এটাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। প্রতি ২ মাসে তিনি এক বিঘা জমির আখ মেড়ে রস বিক্রি করেন। একবিঘা জমির আখ থেকে প্রায় এক লাখ টাকার রস বিক্রি হয়। খরচ বাদ দিয়ে এতে তার লাভ আসে প্রায় ৫০ হাজার টাকা।
এক গস্নাস রস খাবার সুযোগে এসব কথা হয় ষাটোর্দ্ধ আফতাব শেখের সাথে। তিনি আরও জানান, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার রাইপুর ও মড়কা এলাকায় ড়্গেতের উৎপাদিত আখ বিঘা হিসেবে কিনে নেন তিনি। প্রতি বিঘা আখ কিনতে তাকে দিতে হয় প্রায় ৪০ হাজার টাকা। ওই আখ তিনি ড়্গেত থেকে দু’মাসে সরিয়ে নেবেন বলে চুক্তিবদ্ধ হন। রাসত্মা অনেক দূর তাই তিনি প্রতি ৪-৫ দিন পরপর ড়্গেত থেকে ১০-১৫ মন করে আখ কেটে আনেন। মেহেরপুর শহরে তিনি আখ থেকে রস বের করে প্রতি গস্নাস ১০ টাকা দামে বিক্রি করেন। চৈত্র-বৈশাখ মাসে রসের চাহিদা খুব বেশি। তিনি শহরের ফুট পথের পাশে দাঁড়িয়ে রস বিক্রির পাশাপাশি আখ থেকে রস বের করে দোকানে দোকানে দোকানীদের খাইয়ে বেড়ান। প্রতি গস্নাস রসের দাম তিনি ১০ টাকা ঠিকমতই বুঝে পান। তিনি জানালেন, হিসেব মত সারা বছরই আখ পাওয়া যায়। সারা বছরই তিনি রস বিক্রি করেন। তবে রমজান মাসে রোজাদারদের কাছে এরসের চাহিদা থাকে খুবই বেশি।
তিনি আরো বলেন, ব্যবসা শুরম্ন প্রথম দিকে তিনি ঠেলা গাড়ীতে করে আখ নিয়ে বেড়াতেন। আর ঠেসার মেশিন (আখ মাড়াই মেশিন) হাতে ঘুরিয়ে আখ থেকে রস বের করতেন। সেদিন ফুরিয়েছে। তিনি শ্যালো ইঞ্জিন চালিত ভ্যান নিয়েছেন। ভ্যানেই সেট করেছেন আখ মাড়াই করার ঠেসার মেশিন। তার একই শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে আখ মাড়াই করে রস সংগ্রহ করা চলে। অন্যদিকে তিনি তার ইঞ্জিন চালিত ভ্যানে আখ, বালতি ভর্তি পানি, পস্নাস্টিকের কয়েকটি চেয়ারসহ আনুসাঙ্গিক জিনিষপত্র বইয়ে বেড়ান শহরের এক প্রাপ্ত থেকে অন্য প্রানেত্ম। তিনি আরো জানান, বর্তমানে তার এপেশা বেছে নিয়েছে তার এক ছেলে সুমন। এছাড়া তার স্ত্রী আখ চাছা-ছেলা ও ধোয়া-মোছার কাজটি করে দেয়।
তিনি মনে করেন একাজটি বেছে না নিলে এই বুড়ো বয়সে হয়ত তাকে ভিড়্গার ঝুলি কাঁধে নিয়ে অন্যের দ্বারে দ্বারে বেড়াতে হত। তার একাজে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে পেয়ে তিনি বেজায় খুশি।