জাপানের ব্যবসায়ীদের প্রধানমন্ত্রী
এফএনএস : জাপানের ব্যবসায়ীদের জন্য বাংলাদেশে বিনিয়োগের দরজা অবারিত রাখার পুনরুল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সামপ্রতিক কিছু ঘটনা এই বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না। গতকাল রোববার সকালে জাপানের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক প্রাতরাশকালীন বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী জাপানের ব্যবসায়ী উদ্যোক্তাদের আমাদের তারুণ্যদীপ্ত যুব জনশক্তি এবং সরকার প্রদেয় সুবিধাবলি কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সেক্টরে বিনিয়োগেরও আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, আমার দরজা আপনাদের জন্য খোলা রয়েছে…। আমি চাই জাপানি বন্ধুরা আমাদের তারুণ্যদীপ্ত যুব জনশক্তি এবং প্রদেয় ব্যাপক সুবিধাদি কাজে লাগাক।’ এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা আরো বলেন, জাপানি ব্যবসায়ীদের কল-কারখানা স্থাপন এবং প্রত্যেক জাপানি নাগরিকের জন্য সম্ভব সর্বোচ্চ নিরাপদ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষকে তিনি নির্দেশ প্রদান করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা সামপ্রতিককালে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সুরক্ষা এবং নিরাপত্তাজনিত শঙ্কায় থাকতে পারেন…। কিন্তু আমি আপনাদের এই বলে আশ্বস্ত করছি যে, আমাদের সরকার যেকোনো প্রকার সন্ত্রাস এবং চরমপন্থার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে বিশ্বাসী।’
প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে যৌথ বিনিয়োগের বিভিন্ন ক্ষেত্র সম্পর্কেও আলোচনা করেন। তিনি বলেন, তৈরি পোশাকশিল্প, কৃষিক্ষেত্রসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক শিল্প স্থাপন, অবকাঠামো এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ, পানিসম্পদ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা-সম্ভাব্য প্রধান বিনিয়োগের ক্ষেত্র হতে পারে।
জাপানের সামাজিক প্রেক্ষাপট রোবট ইভল্যুশনের দিকে অগ্রসর হওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির ও এর সঙ্গে সমন্বয় হতে পারে, বিশেষ করে ইমাজিনেটিভ সফটওয়্যার, শেয়ারড/ক্লাউড-বেসড প্রসেসিং এবং জেনেরিক কম্পিউটিং আর্কিটেকচার ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে। তিনি বলেন, ‘আমাদের ফার্মাসিউটিক্যাল এবং জাহাজ নির্মাণশিল্প আপনাদের আগ্রহী করে তুলতে পারে… আমাদের বস্নু ইকোনমিও ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি করেছে।’ শেখ হাসিনা জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে বৈঠকে তাঁদের মধ্যে জাপানের রিভাইটালাইজেশন স্ট্র্যাটেজি এবং মানসম্পন্ন যৌথ ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ বিষয়ে কথোপকথনের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলেন, বাংলাদেশের দক্ষ আধুনিক যুব জনশক্তি এবং দেশটির গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অবস্থান, উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা এবং সেই সঙ্গে শিল্পায়নের পরিকল্পনা জাপানের রিভাইটালাইজেশন পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে। সরকারপ্রধান সারা দেশে বিনিয়োগের জন্য ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং বেশ কয়েকটি আইটি পার্ক প্রতিষ্ঠায় সরকারের উদ্যোগের তথ্য তুলে ধরে বলেন, এরই মধ্যে এসবের ৩৩টির নির্মাণকাজ এগিয়ে চলেছে। আগামী চার বছরের মধ্যে সরকার আরো প্রায় এক কোটি বাংলাদেশিকে শিল্পকারখানায় কাজে লাগানোর পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বলেও তিনি জানান। জাপানকে বাংলাদেশের অন্যতম পরীক্ষিত বন্ধু উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশের জনগণও এ ক্ষেত্রে জাপানি বিনিয়োগকে উচ্চ মর্যাদা এবং কর্তব্যনিষ্ঠা সহযোগে গ্রহণ করবে। বাংলাদেশের হালকা ইঞ্জিনিয়ারিং সামগ্রীকে জাপানের ভারী শিল্পকারখানায় এবং অতিরিক্ত পণ্য হিসেবে কাজে লাগানো যেতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতে করে এটি ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের বাজারে জায়গা করে নিতে পারবে। বর্তমান সরকার দেশের আরো কিছু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রকে সমৃদ্ধ করার পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে এর মধ্যে পাট, মৎস্য এবং বস্ত্র খাত রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। দেশের তৈরি পোশাকশিল্পের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সম্ভাবনাময় এ ক্ষেত্রটিতে যৌথ বিনিয়োগের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। তা ছাড়া সরকারও তৈরি পোশাক কারখানাগুলোকে গ্রিন ফ্যাক্টরি হিসেবে গড়ে তোলায় উৎসাহিত করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এগুলো ছাড়াও জাপান বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব শিল্প স্থাপন, অ্যাডভান্সড ইন্ডাস্ট্রিয়াল লাইন এবং ব্যাপক সম্ভাবনাময় পাট খাতে যৌথ বিনিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। কিছু কিছু শিল্পকারখানা এবং অবকাঠামোর রেট্রো-ফিটিং প্রয়োজন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপান এ ক্ষেত্রে বিশ্বে নেতৃস্থানীয় অবস্থানে রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের জ্বালানি, জলবায়ু, পানি, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বর্জ্য জ্বালানির প্রয়োজন মেটাতেও জাপান এগিয়ে আসতে পারে। বাংলাদেশ বর্তমানে স্বতন্ত্র বন্ড ছাড়ার বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করছে উল্লেখ করে তিনি বাংলাদেশে নতুন ব্যাংক স্থাপনেও জাপানের বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে আসতে পারেন বলে প্রধানমন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করেন। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে সরকার ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ সুবিধা প্রদানের জন্য কাজ করে যাচ্ছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি জাপানি বিনিয়োগকারীদের সম্ভব সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘আমি আপনাদের যেকোনো প্রকার প্রণোদনা প্যাকেজ, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন সংযোগ, সরবরাহ ও অন্যান্য সুবিধা প্রদান, বিভিন্ন প্রদেয় ট্যাক্স শিথিলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুবিধাবলি প্রদানে সানন্দে রাজি আছি।