বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যে এখনো পাইপলাইনে গ্যাস জোটেনি

 ৩ বছরের প্রকল্প ৮ বছরেও শেষ হয়নি

বি. এম. রাকিব হাসান, খুলনা:  ৫ জানুয়ারী নির্বাচনের পূর্বে বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের মানুষ ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে আটঘাট বেধে রাজপথে নামা, আন্দোলনের চরম মুহুর্ত প্রদশর্ন, স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময় এ অঞ্চলের মানুষ জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ভোটদান, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বাঘা প্রাথীকে হারিয়ে বিএনপি’র জয় এবং বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের নেতৃস’ানীয় নেতাদের অনেকেরই উদাসীনতা ও এ অঞ্চলে কোন পূর্ন মন্ত্রী না থাকায় বহু আন্দোলন সংগ্রামের ফসল খুলনায় গ্যাস আসছে না। অভিভাবকহীন এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যে এখনো পাইপলাইনে গ্যাস জোটেনি। শিল্প বন্দর নগরী খুলনার ঐতিহ্য হারানোর পাশাপাশি খুলনাসহ ১১টি জেলায় গ্যাসনির্ভর শিল্প গড়ে ওঠার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে পদ্মার এপার। প্রকল্পের পূর্ণ অর্থ বরাদ্দ রয়েছে, বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী আমদানিও হয়েছে, কিন’ মাঠে বন্টন ব্যবস’া খুবই নাজুক। যেন কেউ দেখার নেই। নাগরিক নেতা অধ্যাপক এনায়েত আলী বিশ্বাস বলেছেন, খুলনাঞ্চলকি অভিভাবকহীন? নাকি বিএনপি অধ্যুষিত এ অঞ্চলে উন্নয়নে কর্তা ব্যক্তিদের অনীহা?
সূত্রমতে, চরম অবহেলা ও দীর্ঘসূত্রতার শিকার হচ্ছে খুলনায় গ্যাস সরবরাহ প্রকল্পটি। আঞ্চলিক বৈষম্য এবং পরশ্রীকাতরতার ঘেরাটোপে অর্ধ দশক যাবৎ প্রকল্পটি ঝুলে রয়েছে। এক পা এগিয়ে দুই পা পিছিয়ে নেয়ার নীতিতে খুলনার সমন্বিত উন্নয়নের মৌলিক এই প্রকল্পটির বাস-বায়ন ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করছে। এমনি অবস’ায় খুলনার মানুষের গ্যাসপ্রাপ্তি স্বপ্ন হিসেবেই রয়ে যাবে কি না তা’ এখন বড় প্রশ্ন। খুলনার জনপ্রতিনিধি এবং রাজনীতিকরা বিভিন্ন সময় আন্দোলন সংগ্রামে একত্মা ঘোষণা করে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বার বার। কিন’ এক অজানা শুভংকরের ফাঁকিতে খুলনাঞ্চলের মানুষ বার বার আশাহত হচ্ছে। কার কাছ থেকে এর জবাব খুলনাবাসী নিবে তা তাদের জানা নেই।
২০০৯ সালে প্রকল্পটি শুরু হয়ে ৩ বছরের মধ্যে ২০১১ সালে শেষ করার জন্য ৫৩২ কোটি টাকার বিতরণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায়। নির্ধারিত সময়ের পরে ৫ বছর পার হলেও প্রকল্পটি মাঠ পর্যায়ে শুরুই হয়নি। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের শেষ নাগাদ প্রকল্পটি শেষ করার জন্য চূড়ান- সময়সীমা নির্ধারিত হয়। কিন’ নতুন সময়ের মধ্যেও গ্রাহকপ্রানে- গ্যাস পৌঁছে দেয়ার জন্য ডিস্টিবিউশন লাইন নির্মাণ কাজ শুরু করেনি সুন্দরবন গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী। বরং যে চিন-া-ভাবনা এখন চলছে তাতে আগামী ২০১৮ সালের মধ্যেও বন্টন লাইনের কাজ শেষ হবে কিনা তার নিশ্চয়তা নেই।
উল্লেখ্য, অনেক আগেই যমুনা সেতু পার হয়ে হাটিকুমরুল থেকে ভেড়ামারা হয়ে খুলনার উপকন্ঠ পর্যন- সঞ্চালন লাইন বসানোর কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। কিন’ সরবরাহ লাইন না থাকায় পদ্মার এপারের ১১টি জেলায় গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাস পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে আছে। জানা যায়, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানী লিমিটেডের উল্টা-পাল্টা চিন-া-ভাবনার প্রেক্ষিতে প্রকল্পটির বাস-বায়ন প্রক্রিয়া এখনও কার্যত অনিশ্চিত হয়ে রয়েছে।
কারণ হিসেবে জানা যায়, সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানীর গ্যাস বন্টন লাইন নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো যে ডিজাইনের উপর ভিত্তি করে প্রণীত হয়েছিল অর্থাৎ এডিবির অর্থায়নের বিষয়টি যে ডিজাইনের ভিত্তিতে চূড়ান- হয় তা’ তা’ এখন পরিবর্তন করার সিদ্ধান- নিয়েছে সুন্দরবন গ্যাস কর্তৃপক্ষ। মাঝপথে এই সিদ্ধান- পুরো প্রকল্পের ভবিষ্যতকে আরো দীর্ঘসূত্রতাসহ অনিশ্চয়তার অতল গহ্বরে নিমজ্জিত করেছে। সূত্র বলছে, কোম্পানীর বর্তমান এমডির এই সিদ্ধান- বাস-বায়ন করতে গেলে এডিবির ঋণ প্রক্রিয়ায় প্রভাব পড়বে। কারণ, আগের ডিজাইন অনুযায়ী ইতিমধ্যে সরবরাহ লাইনের জন্য পাইপসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি চীন থেকে আমদানি করা হয়েছে যা‘ শিরোমনির খোলা আকাশের নিচে দীর্ঘদিন ধরে রোদে পুড়ছে, বৃষ্টিতে ভিজছে। তাছাড়া নতুন ডিজাইনের সম্ভাব্য পরিবর্তনের কারণে পাইপসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতির সংযোজন-বিয়োজন হওয়ায় সম্পদের অপচয় হওয়াও বিচিত্র নয়। এছাড়া নতুন ডিজাইন উন্নয়ন সহযোগী এডিবি’র অনুমোদন যেমন ঝুঁকিপূর্ণ তেমনি সময়সাপেক্ষও বটে। এমনি বাস-বতায় পুরো প্রকল্পটি এখন শতভাগ অনিশ্চয়তায় রয়েছে। এই অনিশ্চয়তা কাটাতে এখন প্রয়োজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাজনৈতিক সিদ্ধান-।
খুলনাবাসী প্রত্যাশা করছে, স’ানীয় জনপ্রতিনিধি যাঁরা খুলনাবাসীর উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজনীতি করছেন তারা এ লক্ষ্যে সোচ্চার হবেন-কার্যকর ভূমিকা রাখবেন। অর্ধদশক যাবৎ প্রকল্পটি কেন ঝুলে রয়েছে তার জন্য খুলনাবাসীর কাছে জবাবদিহি করবেন। একইভাবে যেসব কর্মকর্তা এবং কর্তাব্যক্তিদের জন্য জনগুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটি অনিশ্চয়তার দড়িতে ঝুলে রয়েছে তারা চক্রান- করেছেন কিনা তা’ খতিয়ে দেখবেন।
জানা যায়, প্রকল্পের বর্তমান এমডি সবসময়ই ঢাকায় অবস’ান করেন। খুলনায় কোম্পানীর রেজিস্টার্ড অফিস থাকলেও তিনি ঢাকায় বসে সিদ্ধান- গ্রহণ করেন। এডিবির ঋণের অর্থে সংগৃহীত কোম্পানীর ১০টি গাড়ী ঢাকায়ই ব্যবহৃত হচ্ছে। ফিল্ডঅফিস খুলনায় হলেও নেতৃস’ানীয় কর্তাব্যক্তিদের রাজধানীকেন্দ্রিক অবস’ান প্রকল্পটির দীর্ঘসূত্রতা ত্বরান্বিত করছে। পদ্মার এপারের প্রতি প্রকল্প কর্মকর্তাদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়টিও এখন আলোচিত হচ্ছে বিভিন্ন মহলে। সরকারের শীর্ষমহলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নে কমিটমেন্ট থাকলেও বাস-বায়নকারী কর্মকর্তাদের এই ধরনের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির মাশুল দিতে হচ্ছে কয়েক কোটি মানুষকে।
বি. এম. রাকিব হাসান
২০-০৫-১৬

Post a Comment

Previous Post Next Post