বি এম রাকিব হাসান, খুলনা ব্যুরো:সমপ্রসারণশীল নগরায়ণের ফলে সংকুচিত হচ্ছে নগরবাসীর বিনোদনের ব্যবস্থা। ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে ছেলেমেয়েদের খেলার মাঠ ও বিনোদনের কেন্দ্রগুলো। আগামী প্রজন্মকে উন্নত মানসিকতায় গড়ে তুলতে হলে বিনোদন সুবিধার বিকল্প নেই। বিভিন্ন সময় নগরীতে একাধিক পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলেও তার একটিও পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। ভবিষ্যৎ খুলনা মহানগরীর কথা মাথায় রেখে ভৈরব ও রূপসা নদীর পাড় ঘেঁষে রিভারভিউ পার্ক নির্মাণ এখন সময়ের দাবি এমন মন্তব্য সচেতন খুলনাবাসীর। রূপসা ব্রীজকে কেন্দ্র করে এর দু’পাড়ে গড়ে তোলা যেতে পারে এ পার্ক। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা ও সমন্বিত উদ্যোগ ভূমিকা পালন করবে এমন দাবিও নাগরিক নেতৃবৃন্দের।
বসার জন্য কোথাও কোন সুনির্দিষ্ট জায়গা নেই। ফুচকা ও চটপটি বিক্রেতাদেরও সীমিত আসনে বসতে দিতে হিমশিম খেতে হয়। উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণী থেকে বয়োবৃদ্ধ সব শ্রেণি পেশার মানুষের কাছে জায়গাটি প্রিয় হয়ে উঠেছে। স্বচ্ছ-বাতাস আর নদীর সৌন্দর্য অবলোকন করতেই মানুষের এত সমাগম। রূপসা সেতুর দুই পাড়ই এখন নগরবাসীর বিনোদন ও অবকাশের স্থান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষ করে ছুটির দিনে এ ভিড় থাকে আরও বেশী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, শহর রক্ষা বাঁধের তীর ঘেঁষে রিভার ভিউ পার্ক নির্মাণের স্বপ্ন দেখা হয় দশক দুই আগে। সাবেক সিটি মেয়র তৈয়েবুর রহমানের সময় এমন একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। রূপসা সেতু থেকে শুরু করে রূপসা ফেরীঘাট, কাষ্টমঘাট, ফরেষ্ট ঘাট, জেলখানা ঘাট, বড় বাজার হয়ে নগরীর ৪/৫ নম্বর ঘাট এলাকা এবং পুরো ময়ুর নদীর দু’পাড় দিয়ে পার্কটি স্থাপন করার পরিকল্পনায় ছিল। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের সাথে সমঝোতা না হওয়া ও অথের্র জোগানসহ নানা কারণে সেটি আর আলোর মুখ দেখেনি। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় রূপসা সেতু থেকে দক্ষিণের এক কিলোমিটার এবং ময়ূর নদীর দু’পাড় জুড়ে লিনিয়ার পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু রূপসা সেতুর দক্ষিণ দিকের জমির ব্যাপারে কোষ্টগাডের্র আপত্তির মুখে শেষ পর্যন্ত ওই প্রকল্প বাতিল হয়। যদিও এজন্য সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ থেকে গঠিত কমিটির সদস্যরা স্থান পরিদর্শন শেষে তিন পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদনও দিয়েছিলেন। কমিটির আহবায়ক মোঃ আবুবকর সিদ্দিক, সদস্য সচিব সৈয়দ জাহিদুল আনামসহ অপর দু’সদস্য ওই প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, খুলনার জনগণ নাগরিক সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত। বিভাগীয় শহর হওয়া সত্ত্বেও এখানে চিত্তবিনোদনের তেমন কোন সুযোগ সুবিধা নেই। কিন্তু পরবর্তীতে ওই প্রকল্প বাতিলসহ শুধুমাত্র ময়ূর নদীর পশ্চিম তীরে লিনিয়ার পার্ক নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। যা’ চলমান রয়েছে।
এদিকে কোথাও ঘুরতে যাওয়া, ছেলেমেয়েদের মেধা বিকাশে বিনোদনের জন্য শহরতলীর কোথাও ভাল কোন ব্যবস্থা নেই। নদী তীরের নির্মল বাতাস ও সন্ধ্যার পর সেতুর নিয়নবাতির অপরূপ সৌন্দর্য মানুষকে আকর্ষণ করে। ফলে এখানে প্রতিদিন ভিড় জমে প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের। ব্রীজকে ঘিরে পার্ক স্থাপন করা হলে শত বছরের প্রাচীন শহর খুলনা তার আসল সৌন্দর্য্য ফিরে পাবে। মহানগরীর যানজট নিরসন, টেকসই শহর রক্ষা বাঁধ ও এ অঞ্চলের মানুষের চিত্ত বিনোদনের এক অনন্য মাধ্যম হতে পারে রিভারভিউ পার্কসহ সড়ক।
এ ব্যাপারে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, বর্তমান সরকার খুলনার সামগ্রিক উন্নয়নে আন্তরিক। রূপসা ও ভৈরবের তীরবর্তী রিভারভিউ পার্ক ও সড়ক এ অঞ্চলের মানুষের সময়ের দাবি। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে খুলনাবাসীর চিত্তবিনোদনের পাশাপাশি এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য সমপ্রসারণ এবং জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, কর্ণফুলি নদীতে এ ধরনের একটি প্রকল্প একনেকের বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ অঞ্চলের উন্নয়নে সরকার প্রধান আন্তরিক হওয়ায় আমাদের অঞ্চলে এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করা হলে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যাবে। তিনি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
কেসিসির চীফ প্লানিং অফিসার আবির-উল-জব্বার বলেন, নগরীতে পাকের্র বিকল্প নেই। তবে নদী তীর ঘেঁষে রিভারভিউ পার্ক হলে সেটি শহরকে যেমন রক্ষা করবে তেমনি নগরবাসীর বিনোদনসহ অবকাশ যাপনেরও সুযোগ হবে। তবে এটি শুধু রূপসা সেতু থেকে ঘাট এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। শিরোমনি থেকে রূপসা সেতু পর্যন্ত এ পার্ক গড়ে তুলতে হবে। তবে নদীর পাড় ঘেঁষা এ পার্ক শুধু পার্কের জন্য নয়, ব্যবসায়ীসহ সব শ্রেণির পেশার মানুষের সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে করতে হবে। নদী তীরের কোন স্থানে ঘাট, কোথাও সবুজ বনায়ন আবার কোথাও হবে বসার জায়গাসহ ওয়াকওয়ে।