বি এম রাকিব হাসান, খুলনা ব্যুরো:রূপসা ও ভৈরব নদে লবণাক্ততার পরিমাণ ক্ষতিকর মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মাঝে কিছু দিন লবণাক্ততা সহনীয় থাকলেও গত দু’ বছর ধরে আবার বাড়তে শুরু করেছে। গত এপ্রিল মাসে ভৈরব নদের ৩টি পয়েন্টে লবণাক্ততা ছিল ১২ পিপিটি (হাজার মিলি লিটারে লবণাক্ততার পরিমাণ)। চলতি মে মাসে যা ১৭ পিপিটি ছাড়িয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবিদরা।
এ ব্যাপারে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. আবদু হারুন চৌধুরী বলেন, নদীতে লবণাক্ততার পরিমাণ বাড়তে থাকলে জলজপ্রাণীর বাস্তুসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষ করে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী লবণাক্ত এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবে। খুলনার আশপাশ এলাকার গাছপালা ৭/৮ পিপিটি পর্যন্ত লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। এর বেশি হলে নদী পাড়ের গাছ মারা যেতে পারে। এছাড়া কলকারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রতি মাসে ভৈরব নদের যশোরের নওয়াপাড়া লঞ্চঘাট, ফুলতলা ঘাট, খুলনার চরেরহাট ঘাট এবং রূপসা নদীর লবণচরা ও রূপসা ঘাটের পানি পরীক্ষা করা হয়। কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সাধারণত লবণাক্ততা ১ পিপিটির নিচে থাকলে ওই পানি ব্যবহার উপযোগী হিসাবে ধরে নেওয়া হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বছরের অন্যান্য সময় লবণাক্ততার মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যায়। ২০১৫ সালের এপ্রিল ও মে মাসে নওয়াপাড়ায় ১১ দশমিক ২ এবং ১০ দশমিক ৫ পিপিটি, ফুলতলায় ৯ দশমিক ৪ ও ১৩ দশমিক ৬ এবং চরেরহাট এলাকায় ১১ দশমিক ৯ ও ১৪ দশমিক ২ পিটিটি লবণাক্ততা পাওয়া গেছে। চলতি বছর এপ্রিলে সেটি বেড়ে দাড়িয়েছে ফুলতলায় ১২, নওয়াপাড়ায় ১২ দশমিক ১ এবং চরের হাটে ১২ দশমিক ২ পিপিটি। মে মাসে আরও এক ধাপ বেড়ে ১৬ থেকে ১৭ পিপিটির মধ্যে রয়েছে।
একইভাবে নগরীর রূপসা নদীর লবণাক্ততা ২০১৫ সালের এপ্রিলে (রূপসা ঘাটে) ১০ দশমিক ৬ এবং মে মাসে ১৫ দশমিক ৫ পিপিটি। এ বছর এপ্রিল রূপসা নদীর লবণাক্ততা পাওয়া গেছে ১২ দশমিক ৮ পিপিটি এবং মে মাসে ১৭ পিটিটি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক বলেন, সাধারণত উজান থেকে সঠিকভাবে পানি না নামলে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি ওপরের দিকে চলে আসে। এছাড়া বৃষ্টিপাত কম হলেও নদীর লবণাক্ততা বেড়ে যায়।
তিনি বলেন, লবণাক্ততা ৩/৪ পিপিটির ওপরে গেলে ওই জমিতে ফসল ফলানো যায় না। ৭/৮ পিপিটি ওপরে গেলে বড় গাছ হয় কিন্তু সেখানে ফলন হবে না। ১০ পিটিটির ওপরে গেলে গাছ বেচে থাকতে পারে না। এছাড়া অতিরিক্ত লবণাক্ত পানি শিল্পকারখানায় ব্যবহার করা যায় না। এতে ভৈরব ও রূপসার দু’পাড়ের শত শত কলকারখানা অকেজো হয়ে পড়তে পারে।