অর্থনৈতিক রিপোর্টার : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ড. ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি। এসময় রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকতাদেরও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়েছে তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে। পরে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।
গতকাল সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। তদন্ত কমিটির প্রধান ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে এসময় কমিটির অপর দুই সদস্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের
অতিরিক্ত সচিব গকুল চাঁদ দাস ও বুয়েটের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির উপস্থিত ছিলেন।
তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর গণমাধ্যমকর্মীদের ড. ফরাসউদ্দিন জানান, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় কেবল সুইফট কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, আমরা দেখেছি কারা দায়ী, কে কোন উদ্দেশ্যে কাজটা করেছে। আমরা দেখেছি, কারা দায়ী, বাইরের কারা জড়িত, দেশের কারা জড়িত। কতটা অর্থ আদায় করা সম্ভব, তারও একটা চিত্র প্রতিবেদনে দিয়েছি। তিনি বলেন, আগে মনে হয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের কারো কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এখন একটু পরিবর্তন হয়েছে। সুইফটের দায়-দায়িত্ব আছে। তারা পুরোপুরি দায়ী কিনা সেটারও বিশ্লেষণ আছে। কিন্তু সুইফট কখনো তার দায় এড়াতে পারবে না।
এর আগে গত ১৫ মে ড. ফরাসউদ্দিন বলেছিলেন, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় সুইফট দায়ী। কারণ, সুইফট আরটিজিএস’র (রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট) সঙ্গে সংযোগ দেয়ার ফলে এটি ঘটেছে। তবে আরটিজিএস চালু রেখে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা কা-জ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন।
এদিকে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি মাত্র প্রতিবেদনটি হাতে পেলাম। এখনো দেখি নাই এতে কী আছে। আমি আগে পড়ে দেখি, তারপর অবশ্যই এটি প্রকাশ করা হবে। তিনি জানান, বাজেট ঘোষণার (২ জুন) ১৫-২০ দিন পর এটা প্রকাশ করা হবে।
ঘটনার জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি আগে দেখি ঘটনাটা কীভাবে ঘটলো এবং আমি কী করতে পারি।
উল্লেখ্য, গত ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির কার্য মেয়াদের ৭৫তম দিনে অর্থমন্ত্রীর কাছে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিলো কমিটি। এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে সুইফট কোড হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করা হয়। ঘটনা জানার পরও বিষয়টি গোপন রাখে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এরপর গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ফিলিপাইনের দৈনিক দি ফিলিপিন্স ডেইলি ইনকোয়ারারের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির খবর জানানো হয়। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমেও এ খবর এলে তোলপাড় শুরু হয়। পরে গত ৭ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা চুরির ঘটনা স্বীকার করে। এরপর গত ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান পদত্যাগ করেন।