অর্থনৈতিক রিপোর্টার: যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কস্থ ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের একাউন্ট হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ চুরির ঘটনা তদন্ত করবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাইবার নিরাপত্তা কোম্পানি ফায়ারআই। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শক ওয়ার্ল্ড ইনফরমেটিক্সই অর্থ লোপাটের তদন্তে ফায়ারআইকে সম্পৃক্ত করেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার চুরির ঘটনা তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংককে সহযোগিতা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) ও জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট। সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনাও করেছে এফবিআই ও জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট। তবে ওয়ার্ল্ড ইনফরমেটিক্সে’র পরামর্শে অর্থ চুরির ঘটনা তদন্তে ফায়ারআই’র ম্যানডিয়েন্ট ফরেনসিক বিভাগের সহযোগিতা নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় বড় সাইবার চুরির ঘটনাগুলোর বেশ কয়েকটির তদন্ত করেছে সিলিকন ভ্যালির কোম্পানি ফায়ারআই। ওয়ার্ল্ড ইনফরমেটিক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাকেশ আস্তানাই ফায়ারআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা। বিশ্বব্যাংকের তথ্য ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তি বিভাগের পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্সের ঐ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঞ্চিত অর্থ হ্যাকাররা কীভাবে চুরি করল- তা খতিয়ে দেখতে যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই এবং জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে সহযোগিতার প্রস্তাব দেয়। এদিকে নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অক্ষুণ্ন রয়েছে বলে দাবি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে তারা জানিয়েছে, অর্থ চুরির ঘটনা তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করছে ফেডারেল রিজার্ভ। অন্যদিকে সাইবার অপরাধীরা কিভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেটওয়ার্কে প্রবেশ করেছে, লুট হওয়া অর্থ কোথায় গেছে এবং ঐ অর্থ উদ্ধার করা যাবে কি না- যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত শেষে এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। তবে এফবিআই, ইউএস সিক্রেট সার্ভিস, জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট ও ইউএস ট্রেজারির ক্রাইমস এনফোর্সমেন্ট নেটওয়ার্কের প্রতিনিধিরা এ বিষয়ে কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন বলে ঐ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে এ পর্যন্ত অর্থ চুরির যেসব ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ ঘটনাকে ‘অন্যতম বড়’ বলে দাবি করেছে রয়টার্স। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকে হ্যাকাররা দীর্ঘ গোয়েন্দাগিরি চালিয়েছিল বলেও ঐ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ কর্মকা- সম্পর্কে সূক্ষ্ন ধারণা ছিল হ্যাকারদের। এমনকি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর দীর্ঘদিন ধরে গোয়েন্দাগিরিও চালিয়েছিলো তারা। যার ফলে পরবর্তীতে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে তারা সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, ফেব্রুয়ারির শুরুতে অজ্ঞাত হ্যাকাররা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের একাউন্টে ‘পেমেন্ট এডভাইস’ পাঠায়। ফিলিপাইনের স্থানীয় ব্যাংকে টাকা স্থানান্তরের জন্য এসব অ্যাডভাইস পাঠানো হয়। পরে পাঁচটি এডভাইজে মোট ৭৮৫ কোটি ১৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ফিলিপাইনের কয়েকটি ব্যাংকে পাচার হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সিস্টেম হ্যাক করে বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা হ্যাকাররা নিয়ে গেছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। তবে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক। নিউ ইয়র্কের এ ব্যাংকটি বলছে, তাদের সিস্টেম হামলার শিকার হয়েছে এ ধরনের কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই। ব্যাংকটি বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুরোধ পাওয়ার পর স্বাভাবিক পদ্ধতিতে অর্থ স্থানান্তর করা হয়। বেলজিয়াম ভিত্তিক সুইফট (কোনো ব্যাংক থেকে অন্য কোনো ব্যাংকে অর্থ স্থানান্তরের জন্য গোপন সঙ্কেতলিপির ব্যবহার) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে। তবে এই বিষয়ে বিস্তারিত আর কোনো তথ্য জানায়নি যুক্তরাষ্ট্রের এই ব্যাংক। রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, অর্থ স্থানান্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের পদ্ধতি সম্পর্কে প্রথমে তথ্য সংগ্রহ করেছে হ্যাকাররা যাতে প্রতারণা করতে গিয়ে তারা কোনো ধরনের বিপদের মুখোমুখি না হন। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রম সম্পর্কে গভীর ধারণা পেতে তারা (হ্যাকাররা) বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপর দীর্ঘদিন ধরে গোয়েন্দাগিরি চালিয়েছে। |