KBDNEWS: বাড়ছে বাজারে পাটের দাম। পাট বাণিজ্য এখন রমরমা। দেশের বিভিন্ন এলাকায় এখন আড়াই হাজার টাকা দরে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে। স্বাধীনতার পর এবারই সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে পাট। তবে বাড়তি দামের মুনাফা যাচ্ছে ফড়িয়াদের পকেটে। এ থেকে পাট উৎপাদক কৃষকরা লাভবান হচ্ছে না। মূলত কৃষকরাই কাঁচা পাট রফতানি নিষিদ্ধ ও পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক আইন কার্যকর করার সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পাট খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে- বাজারে নতুন পাট ওঠার শুরুতে গত জুন মাসে পাটের মণ ছিল এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু দ্রুতই পাটের দাম বাড়তে থাকে। যা আগে কখনো দেখা যায়নি। ৬ মাসের ব্যবধানে মণপ্রতি দাম দেড় হাজার টাকা বাড়লেও কৃষকের হাতে এখন আর পাট নেই। তারা অনেক আগেই কম দামে পাট বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে এখন দাম যতোই বাড়ুক,কৃষকের কোনো লাভ হচ্ছে না। বরং বাড়তি এ দামের মুনাফা যাচ্ছে ফড়িয়াদের পকেটে।সূত্র জানায়, কৃষকের হাতে পাট না থাকার সুযোগেই সরকারি পাটকলগুলোতে বেশি দামে পাট বিক্রি করতে একটি সিন্ডিকেট হঠাৎ করে পাটের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ওই সিন্ডিকেটের কারসাজিতেই বাজারে যখন পাটের দরপতন চলছিল তখন বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) পাট কেনেনি। বিজেএমসি পাট না কেনায় পাটের ভরা মৌসুমে কৃষকরা সস্তায় পাট বিক্রি করতে বাধ্য হন। গত জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই কৃষকরা পাট বিক্রি শেষ করেন। আর ওই ৪ মাসে পাটের সর্বোচ্চ দর ছিল এক হাজার ৫শ্থ টাকা। অথচ নভেম্বর থেকেই পাটের দাম ওপরে উঠতে থাকে। দাম বাড়ায় লাভবান হচ্ছেন ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা। কৃষকের কাছ থেকে কম দামে পাট কিনে মজুদ করে এখন চড়া দামে সরকারি মিলে সরবরাহ করছে।
সূত্র আরো জানায়, এবার পাটের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিজেএমসিকে প্রায় ২শ্থ কোটি টাকা গচ্ছা দিতে হবে েেমৗসুমের সময় কৃষকের কাছ থেকে পাট ক্রয় করলে বিজেএমসির এ টাকা গচ্ছা দিতে হতো না। বরং কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পেয়ে পাট চাষে আরো বেশি উৎসাহিত হতো। অথচ ফড়িয়া ও বিজেএমসির একটি সিন্ডিকেট টাকা হাতিয়ে নিতেই অসময়ে অস্বাভাবিকভাবে পাটের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। মূলত টাকার অভাবেই বিজেএমসি ভরা মৌসুমে পাট কিনতে পারেনি। সরকারি ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে বর্তমানে পাটচাষি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বকেয়া দাঁড়িয়েছে ১শ্থ ২০ কোটি টাকারও বেশি। বিজেএমসি এই বছর ২৬ লাখ ১৪ হাজার ৮২৭ কুইন্টাল পাট কেনার টার্গেট নিয়েছিল। ওই পরিমাণ পাট ক্রয়ের জন্য বিজেএমসির দরকার প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। কিন্তু গত ৩ মার্চ পর্যন্ত বিজেএমসি প্রায় ৯ লাখ কুইন্টাল পাট কিনেছে। যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩৪ শতাংশ। অথচ গতবছরের একই সময়ে পাট কেনা হয়েছিল ১৭ লাখ ৩২ হাজার ৭৩৮ কুইন্টাল। ১ জুন থেকে ১৫৯টি পাট ক্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে পাট কেনার ঘোষণা দিয়েছিল বিজেএমসি। আর জুন থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিজেএমসি পাট কেনে মাত্র দুই লাখ ১৪ হাজার কুইন্টাল। এক মাস ধরে বিজেএমসি সর্বোচ্চ ২ হাজার ১শ্থ টাকা মণ দরে পাট কিনেছে। আর এবার বিজেএমসি সর্বনিম্ন এক হাজার ৭৫০ টাকা মণ ধরে পাট কিনেছে।
এদিকে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র পাট ব্যবসায়ী ও পাটচাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ জানান, মৌসুম শেষে পাটের দাম বাড়লেও কৃষকরা লাভবান হতে পারেননি। বরং সরকারি পাটক্রয় কেন্দ্রের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে কিছু ফড়িয়া পাট ব্যবসায়ী কৃষকের মুনাফা লুটে নিচ্ছে। পাটের বাড়তি এই দাম যাচ্ছে ফড়িয়াদের পকেটে।