KBD NEWES: যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক’ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা চুরির ঘটনায় বেশ বিপাকে পড়েছেন গভর্নর ড. আতিউর রহমান। ঘটনাটি জানার পরও কেন অর্থমন্ত্রী বা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জানাননি, তা নিয়ে বর্তমানে কাঠগড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের এই গভর্নর।
ঘটনাটি ধাপাচাপা দেয়ার অভিযোগে গত কয়েকদিন ধরেই গভর্নর ড. আতিউরের পদত্যাগের দাবি জোরালো হচ্ছে। বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল তো বটেই, খোদ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও জ্যেষ্ঠ নেতারাও তার বিরুদ্ধে গাফিলতি ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনেছেন।
এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, কি স্বার্থে কাকে বাঁচাতে তিনি এতো বড় ঘটনা চেপে রেখেছেন, তা তদন্ত করতে হবে। তিনি এখন জনতার আদালতে। তাকে এর জবাব দিতে হবে? এসময় তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিবর্তনের আভাস দেন। সরকারও টাকা লোপাটের বিষয়টিকে বেশ গুরুত্বের সাথে দেখছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘এটা সিরিয়াস ব্যাপার। আই টেক ইট ভেরি সিরিয়াসলি।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘ডেফিনেটলি দেয়ার উড বি চেইঞ্জেস।’
এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮শ কোটি টাকা চুরির ঘটনায় গভর্নর ড. আতিউর রহমান পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন বলে গুঞ্জন উঠে। গতকাল সোমবার সকাল থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ গুঞ্জন চলে।
ড. আতিউর রহমানের পদত্যাগের গুঞ্জনের নতুন গভর্নর হিসেবে সাবেক অর্থ সচিব ড. মুহম্মদ তারেকের নামও শোনা যাচ্ছে। ড. তারেক বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালকও বটে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করছেন, টাকা চুরির ঘটনা নিয়ে অর্থমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তার প্রেক্ষাপটে পদত্যাগ করতে পারেন ড. আতিউর রহমান। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গতকাল সোমবার মন্ত্রীপরিষদ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গভর্নরের বিরুদ্ধে অর্থমন্ত্রী নালিশ করেন। গত কয়েকদিন ধরেই খোদ মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারাও গভর্নরের পদত্যাগ দাবি করে আসছেন।
এদিকে, অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে সাবেক অর্থ সচিব ড. মুহম্মদ তারেককে। যে কোনো সময় এ ব্যাপারে সার্কুলার জারি হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে।
অন্যদিকে, আজ বাংলাদেশ ব্যাংকের জরুরি বোর্ড মিটিং ডাকা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা। ঐ বৈঠকে টাকা জালিয়াতির ঘটনাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে বলেও জানান তিনি। তবে গুঞ্জন উঠেছে, আজ ঐ বোর্ড মিটিংয়েই নতুন গভর্নর হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ড. তারেক।
এদিকে, গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকের শুরুতেই অর্থমন্ত্রী রিজার্ভ লোপাটের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে কথা বলেন। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বৈঠকের পর এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা হয়েছে। গভর্নর ফিরে আসলে এ বিষয়ে কথা বলবো ? সেটা আজও হতে পারে, কালও হতে পারে।
ঘটনার দু’মাসেও বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রণালয় কিংবা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকেও অবহিত করেনি ?
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, সরকার দেখতে চায় কোন ত্রুটিতে, কার গাফিলতিতে এ ঘটনা ঘটেছে। পরে বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এতো বড় ঘটনা আমাদের বিদেশি পত্রিকার মাধ্যমে জানতে হলো, যা অনভিপ্রেত। কে বা কারা এ চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে তার সবকিছু খুঁজে বের করতে হবে। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য নুহ-উল-আলম লেনিন ফেইসবুকে এক পোস্টে লিখেছেন, টাকা চুরি যাওয়া এবং তথ্য গোপন করে দায়িত্বহীন আচরণের জন্য অবিলম্বে আতিউরকে গভর্নরের পদ থেকে অপসারণ করা উচিত।
আওয়ামী লীগের এই নেতা পুরো ঘটনার তদন্ত দাবি করেছেন এবং গভর্নর আতিউরকে ‘ড. মুহম্মদ ইউনূসের চেলা’ আখ্যায়িত করে তাকে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি তুলেছেন।
লেনিন বলেন, গভর্নর আতিউর রহমান দায় এড়াতে পারেন না। অর্থমন্ত্রী ও ব্যাংকিং বিভাগের সচিবকে জানাননি কেন? তিনি কার স্বার্থে কাজ করছেন এটা খতিয়ে দেখতে হবে।
বিএনপির পক্ষ থেকে গভর্নরের পাশাপাশি অর্থমন্ত্রীকেও এ ঘটনার জন্য দায়ী করে দুজনের পদত্যাগ চাওয়া হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দুদিন আগে বলেছেন, গভর্নরকে অবশ্যই এর ব্যাখ্যা দিতে হবে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রতিরোধে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন।
রিজভী আহমেদ বলেন, বিএনপি’র পক্ষ থেকে অবিলম্বে চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধার ও এর সাথে জড়িতদের শাস্তি দাবি করছি। একই সাথে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এবং গভর্নর আতিউর রহমানের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগেরও দাবি করছি।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২০০৯ সালে সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর ঐ বছর ১ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের দশম গভর্নর হিসাবে চার বছরের জন্য দায়িত্ব নেন উন্নয়ন গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আতিউর রহমান।
এরপর ২০১৩ সালের এপ্রিলে সরকার তাকে আরও এক মেয়াদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ দায়িত্বে রাখার সিদ্ধান্ত জানায়। সে অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ২ আগস্ট তার গভর্নরের মেয়াদ শেষ হবে।