ব্যাপক সমালোচনার মধ্যেই অভিবাসী ইস্যুতে তুরস্কের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিটি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), তবে এখনো কোনো অভিবাসীকে তুরস্কে ফেরত পাঠানোর খবর পাওয়া যায়নি। বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় কিছু জটিলতা থাকায় তা শুরু করা যায়নি বলে জানিয়েছে গ্রিস কর্তৃপক্ষ। ইউরোপে চলমান অভিবাসী সংকট মোকাবেলায় গত শুক্রবার ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ইইউ-এর বৈঠকে চুক্তিটি সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। গতকাল রোববার থেকেই এটির বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয় সে সময়। চুক্তিটি বাস্তবায়নে গ্রিস কর্তৃপক্ষকে সহায়তা দিতে নিরাপত্তা, অভিবাসন কর্মকর্তা ও অনুবাদকসহ প্রায় ২ হাজার ৩০০ জনের একটি ইইউ বিশেষজ্ঞ দলের সেখানে পৌঁছানর কথা রয়েছে। কিন্তু শনিবার পর্যন্ত কোনো বিশেষজ্ঞই সেখানে পৌঁছাননি বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
গ্রিস বলছে, চুক্তির বিস্তারিত তাদের হাতে না পৌঁছালে এটি তাৎক্ষণিক বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে গ্রিস সরকারের অভিবাসন অধিদপ্তরের মুখপাত্র গিওরগস কাইরিতসিস একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, এমন একটি পরিকল্পনা কিছুতেই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাস্তবায়ন শুরু সম্ভব নয়। চুক্তিটির আওতায় যেসব অভিবাসী ও শরণার্থী তুর্কি রুটে গ্রিসে প্রবেশ করেছেন, তাদের মধ্যে যাদের আবেদন নাকচ হয়ে গেছে বা যাবে, তাদের তুরস্কে ফেরত পাঠানো হবে। আর এর বিনিময়ে তুরস্ককে আর্থিক ও রাজনৈতিক সহায়তা দেবে ইইউ। আর্থিক সহায়তা হিসেবে অভিবাসীদের পুনর্বাসন ব্যয় নির্বাহে ২৮ জাতির এ জোটের কাছ থেকে তুর্কি সরকার ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার (৭৮.৪৩ টাকায় ডলার হিসাবে ২৫ হাজার ৮৮০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা) পাবে। আর রাজনৈতিক সহায়তা হিসেবে ইইউ জোটে তুরস্ককে অন্তর্ভূক্ত করা হবে।
এ ব্যাপারে চলতি বছরের জুলাইয়ে ইইউ-এর সম্মেলনে আলোচনা হবে। এছাড়া চুক্তির শর্তানুসারে, প্রতি একজন ‘অনিয়মিত’ শরণার্থীর বিনিময়ে একজন করে সিরীয় শরণার্থীকে ইউরোপে পুনর্বাসন করা হবে। তুরস্কে বর্তমানে ৭২ হাজার সিরীয় শরণার্থী অবস্থান করছেন। সম-সংখ্যক অনিয়মিত অভিবাসীকে সেখানে ফেরত পাঠানো হবে। এক্ষেত্রে কোন অভিবাসীর আবেদন নাকচ হবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে গ্রিক কর্তৃপক্ষ।
চুক্তির অন্যতম আরেকটি শর্ত হলো, অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর বিনিময়ে ইইউ-এর ভিসামুক্ত শেনজেন জোনে তুর্কি নাগরিকদের ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার দেওয়া হবে। এ সিদ্ধান্ত চলতি বছর জুন মাস থেকে কার্যকর হবে। তবে শেনজেনভুক্ত না থাকায় ব্রিটেনে ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার পাবেন না তুর্কিরা। সবগুলো শর্তই মেনে নিয়েছে তুরস্ক ও ইইউ কর্তৃপক্ষ। তবে এ চুক্তিতে বেশ কিছু ত্রুটি ও সাংঘর্ষিক বিষয় রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াটি অন্যতম। ‘অনিয়মিত অভিবাসী’ বলতে কি বোঝানো হয়েছে, এবং যাদের আবেদন নাকচ হয়ে যাবে, কিসের পরিপ্রেক্ষিতে তা করা হবে- সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। এছাড়া, আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে চুক্তিটি সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, কোনো অপরাধ না করলে কোনো শরণার্থী বা অভিবাসী বা আশ্রয়প্রার্থীকে বিমুখ করা বা দেশান্তরী করা যাবে না। আলোচনার টেবিলে থাকাকালেই বিতর্কে পড়ে যায় ইইউ-এর চুক্তিটি। শুক্রবার এটি পাস হওয়ার পর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মন্তব্য করেছে, ‘শরণার্থীদের পিঠ দেখালো ইইউ’।
এ ছাড়া, শনিবার লন্ডন, অ্যাথেন্স, বার্সেলোনা, আমস্টার্ডাম, জেনেভাসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি শহরে এর বিরোধিতা করে বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। গ্রিসের রাজধানীতে বিক্ষোভের সময় অভিবাসীদের পক্ষে বিক্ষোভকারীরা ‘সীমান্ত খুলে দাও’, ‘আমরা মানুষ, আমাদের অধিকার আছে’ বলে সেস্নাগান দেন। লন্ডনে প্রায় চার হাজার বিক্ষোভকারী চুক্তিটির বিরোধিতা করে র্যালি করেন। এ সময় তাদের হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল- ‘শরণার্থীদের স্বাগতম’, ‘বর্ণবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও’।