বিশেষ প্রতিনিধি:,যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ স্থিতি থেকে ১শ ১ মিলিয়ন তথা ৮০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনার বিষয়ে অবহিত নয় সরকার
বিষয়টি ধামাচাপা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়েছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। যার কারণে ব্যাংকের দুটি পর্ষদ সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়নি। জানানো হয়নি অর্থমন্ত্রী বা মন্ত্রণালয়ের কাউকে। ঘটনাটি জানা জানি হওয়ার পরও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো তদন্ত কমিটি করা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ রকম আচরণে নাখোশ খোদ অর্থ মন্ত্রী। তবে কি কারণে বা কাকে বাঁচানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে চেষ্টা চালিয়ে ছিলে সেই বিষয়ে তেমন কিছু জানা যায়নি।
এদিকে গতকাল রোববার দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যালয়ে চার ডেপুটি গভর্নর এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও বিশ্বব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা রাকেশ আস্তানার সাথে বৈঠক করেছেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলামুল আলম।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রিজার্ভের অর্থ খোয়া যাওয়ার বিষয়টি জানতে এসেছি।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুটি বোর্ড সভায় (২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ) বিষয়টি উপস্থাপনই করেনি অডিট কমিটি। কেন এমনটি করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে। আমি বিষয়গুলো অর্থমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করব। গর্ভনর ফিরলে পরশু (মঙ্গলবার) বিষয়টি জরুরি বোর্ড সভায় বসতে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করেছি।
আসলামুল আলম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো তদন্ত কমিটি করা হয়নি। ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর সাপোর্ট প্রোগ্রামের আওতায় বিষয়টির ওপর কাজ চলছে। আগামী দুই সপ্তাহ পর রিপোর্ট হাতে পেলেই জড়িতদের সম্পর্কে জানা যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ফরেন্সিক এক্সপার্ট নিয়োগ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সব কম্পিউটারসহ পুরো সিস্টেম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে তারা। এ কাজের রিপোর্ট পেতে বেশ সময় লাগবে। বৈঠক শেষে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব জানান, বেশিরভাগ অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে চলে যাওয়ায় তা ফেরত আনতে দীর্ঘ সময় লেগে যেতে পারে।
হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি হওয়া অর্থের মধ্যে মাত্র ৬৮ হাজার ডলার ফিলিপাইন ফেরত পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এম আসলাম বলেন, প্রাথমিক তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটির দুর্বলতার বিষয়টি উঠে এসেছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি থাকার কারণেই এমনটি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পুরো সিস্টেমে দুর্বলতাসহ দক্ষ জনবলের অভাব ছিল। যারা আছে তাদেরকে সেভাবে প্রশিক্ষিত করা হয়নি।
তিনি বলেন, হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে মোট ৯৫১ মিলিয়ন ডলার চুরি চেষ্টা হয়েছিল। প্রকৃত চুরির পরিমাণ ৮১ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ৬৮ হাজার ডলার ফেরত পাওয়া গেছে। ফেরত পাওয়া অর্থ ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভে বাংলাদেশ ব্যাংকের একাউন্টে জমা হয়েছে। বাকি অর্থ প্রসেস হয়ে ব্যাংকিং সিস্টেমের বাইরে চলে গেছে। এম আসলাম বলেন, শ্রীলঙ্কা থেকে ২ মিলিয়ন ডলার চুরি ঠেকানো গেছে। সেখান থেকে টাকা ফেরত পাওয়া যাবে। বাকি টাকা ফেরত পাওয়া যায়নি। ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিয়েছে। এসময় তিনি আরো জানান, অর্থ লোপাটের এ ঘটনায় ভবিষ্যত করণীয় নিয়ে আলোচনার জন্য আগামীকাল ১৫ মার্চ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জরুরি বোর্ডসভা ডাকা হচ্ছে। সেখানে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।
এদিকে হ্যাকিংয়ের সাথে দেশের ভেতরের নাকি বাইরের লোক জড়িত তা তদন্তের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মো.রাজী হাসান। তিনি বলেন, তদন্ত শেষ হতে আরো দুই সপ্তাহের মতো সময় লাগবে।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার ফিলিপাইনের পত্রিকা ইনকোয়ারারের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভে গচ্ছিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হাতিয়ে নিতে চেয়েছিল হ্যাকাররা। এ প্রচেষ্টায় দুই ধাপে প্রায় ১০১ মিলিয়ন ডলার লোপাট করলেও ৮৭০ মিলিয়ন ডলার পাচারে ব্যর্থ হয় তারা। ঐ টাকার ৮১ মিলিয়ন ডলার পাঠানো হয় ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকের একটি একাউন্টে। বাকি ২০ মিলিয়ন ডলার পাঠানো হয় শ্রীলংকায়। প্রাপক প্রতিষ্ঠানের নামের বানান ভুল হলে সন্দেহ দেখা দেয়ায় শ্রীলংকার ব্যাংক কর্মকর্তারা আটকে দেন ঐ ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যোগাযোগ করে পরে তারা নিশ্চিত হন, এই অর্থ চুরি হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ফান্ড থেকে।