আবু লায়েছ লাবলু: গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের অধীনে দেশের সামগ্রীক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ত্বরান্বিত করনের লক্ষে দেশের সকল দখলকৃত, ভরাটকৃত নদীসমুহ পুনঃ দখল ও পুনঃ খনন কার্যক্রম শুরু করেছে। সে লক্ষে মেহেরপুরের ভৈরব নদীটি পুন:খনন কার্যক্রম উৎসব মুখর হয়ে উঠেছে।
মেহেরপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী ভৈরব নদী টি ভরাট হয়ে শুকিয়ে দখলদারদের কবলে চলে গিয়েছিল, গত ১৫/২০ বৎসর এ নদীতে কোন পানি দেখা যায়নি । সেচ এবং অন্যান্য কাজে পানির সল্পতা দেখা দিয়েছিল, এ অঞ্চলটি প্রায় মরুভূমিতে রুপ নিয়েছিল।
গত ২০১০ সালে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এ অঞ্চলে সফরে এলে মেহেরপুরবাসী নদীটি পুনঃ খননের জোর দাবী তোলেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা দাবিটি আমলে নিয়ে নদীটি পুনঃ খননের প্রতিশ্রুতি দেন।
তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৩ এপ্রিল ২০১৫ মাননীয় পানি সম্পদ মন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, স্থানীয় প্রসাশন ও জনগনের উপস্থিতিতে নদীটির পুনঃ খনন কাজ উদ্বোধন করেন।
পানি উন্নয়ন বোডের্র নদীটির খনন কাজের দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর সহযোগী সংগঠন ডকইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিঃ, নারায়নগঞ্জ। বর্ষার কারনে কিছুদিন বন্ধ থাকার পর পুনরায় উঊড খঃফ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঠিক দিক নির্দেশনায় প্রায় ১০০ এর অধিক এক্সেভেটর, ডোজার, হাইড্রোলিক ট্রলি, স্যালো মেশিন ও অন্যান্য মেশিনারীসহ প্রায় ৩০০-এর বেশি শ্রমিক নিয়ে অত্যন্ত সুন্দর ও সুনিপুন ভাবে নদীটির খনন কাজ চলছে। খনন কাজ দেখার জন্য প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা হতে শত শত দর্শনার্থী ভিড় করছে। তাদের মধ্যে হারানো সম্পদ অর্জনের আনন্দ পরিলক্ষিত হয় এবং তারা এই কার্যক্রমে প্রধানমনী্ত্র শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।
খনন কাজে সহযোগিতা করছে, স্থানীয় সংসদ সদস্য, প্রশাসন, গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ ও সাধারন মানুষ। তাদের ভাষ্য, বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী কাজটি করায় খুব সুন্দর হচ্ছে। নৌ-বাহিনীর অনুরোধে দখলদারেরা তাদের অধিকাংশ স্থাপনা অপসারন করেছে। জনগন চায় নদীটির খনন কাজ যেন নৌ-বাহিনী শেষ করে যায়। তাদের আরো দাবী, ভবিষ্যতে যেন নদীটি দখল ও ভরাট না হয়ে যায় সে ব্যবস্থা করে যায়।
মেহেরপুর ১ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন দোদুল নদীটির খনন কাজ কয়েকবার পরিদর্শন করেছেন। ইহা ছাড়া নৌ-বাহীনি প্রধানসহ- নৌ-বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ নদীর পুনঃ খনন কাজ পরিদর্শন করেছেন। যেহেতু নদীটি ঐতিহাসিক মুজিবনগর থেকে খনন শুরু হয়েছে তাই বাংলাদেশ সরকারের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মুজিবনগর এলেই নদীটির খনন কাজ দেখতে আসেন। ভ্রমন বিলাসী লোকেরা এসে আনন্দ উপভোগ করেন। খননকৃত নদীর দুই পাড়ে পিকনিক ও বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান করে আনন্দ উপভোগ করছে।
এরই মধ্যে নদীটির ৪০% কাজ শেষ হয়েছে। নদীটির কাজ শেষ হলে এ অঞ্চলের মানুষ বিশেষ ভাবে উপকৃত হবে। এগুলো হলো নদীটি ফিরে পাবে তার হারানো যৌবন। কৃ্ষক পাবে তার শেচ সুবিধা। জেলে পারবে মৎস আহরণ করতে।নদীর উভয়পাড়ে গড়ে উঠবে হাট, বাজার, পর্যটন কেন্দ্র। থাকবে উভয় পাড়ে ফুটপাথ। নদীতে চলবে নৌকা, স্পিডবোর্ড ইত্যাদি। পর্যটকেরা পাবে ভ্রমন সুবিধা। নদীতে পাওয়া যাবে দেশীয় প্রজাতির মাছ। উল্লেখ্য যে বর্তমান খননকৃ্ত অংশে জেলা প্রসাশন একটি মৎস অভয়ারণ্য করেছে এবং তিনি আরো মৎস অভয়ারণ্য করার ইচ্ছা পোষণ করছেন। সর্বোপরি ভৈরব নদী পুনঃ খননের ফলে রক্ষা পাবে এ অঞ্চলের জীব বৈচিত্র যাতে করে বৈশ্বিক পরিবেশ রক্ষায় সহায়ক হবে ।
ডকইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিঃ এর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লে: বেলাল হোসেন জানান, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২০১৭ এর মধ্যে নদীটির পুনঃ খনন কাজ শেষ হবে।